লিথুয়ানিয়ায় উচ্চ শিক্ষা(ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও সেনজেনভুক্ত দেশ)
ঊচ্চ শিক্ষার জন্য আমেরিকা কানাডা অস্ট্রেলিয়া সবার জন্য সহজ নয়। কারন শিক্ষার ব্যয় এসব দেশে অনেক বেশি, যা আমাদের অনেকের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। এসব বিবেচনায় লিথুয়ানিয়া হতে পারে আপনার উচ্চ শিক্ষার গন্তব্য। বর্তমানে লিথুয়ানিয়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও সেনজেন ভুক্ত দেশ। বাল্টিক সাগরের তীরের অপরূপ সুন্দর একটি দেশ। ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানকার জীবন যাত্রার ব্যয় অনেক কম। এ দেশে রয়েছে অনেক গুলো সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আর ইউরোপের অন্যান্য দেশে যেমন ব্যাচেলর লেভেলে পড়তে গেলে সে দেশের ভাষায় পড়া লাগে, সে তুলনায় লিথুয়ানিয়াতে ব্যাচেলর লেভেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানো হয়ে থাকে, যা আমাদের জন্য অনেক উপকারি। সাধারণ তথ্যঃ অফিসিয়াল নাম Republic of Lithuania লিথুয়ানিয়া বাল্টিক সাগরের পূর্ব উপকূলে সুইডেনের বিপরীত তীরে অবস্থিত। এর উত্তর সীমান্তে লাটভিয়া, পূর্ব ও দক্ষিণে বেলারুশ, দক্ষিণ-পশ্চিমে পোল্যান্ড। লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াস, দেশের সবচেয়ে বড় শহর। এদেশের জনসংখ্যা ২.৯ মিলিয়ন। মুদ্রা ইউরো।
ছবি: Kauno kolegija / University of Applied Sciences টিউশন ফিঃ লিথুয়ানিয়াতে প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক টিউশন ফি’র পার্থক্য হয়ে থাকে। এখানে ব্যাচেলর লেভেলে টিউশন ফি ২০০০ থেকে ৫৩০০ ইউরো। মাস্টার্স লেভেলে ২২০০ থেকে ৬৫০০ ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে। মাসিক খরচঃ 200 থেকে ৩০০ ইউরো। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমেটরিতে থাকলে প্রতি মাসে ১০০ ইউরো তেই আপনার থাকা খাওয়া হয়ে যাবে, যা ইউরোপের অন্য কোনও দেশে প্রায় অসম্ভব। এপ্লিকেশন ফিঃ বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে এপ্লিকেশন ফি আলাদা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে ১০০ ইউরো থেকে ২০০ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে। যা আবেদন পত্র জমা দেয়ার আগেই জমা দিতে হবে এবং তা অফেরতযোগ্য। সেশনঃ অন্যান্য সব দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মতো এখানেও বছরে ২টি সেশনে ভর্তি প্রক্রিয়া চলে। প্রতিবছর- সেপ্টেম্বর ও জানুয়ারি। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেপ্টেম্বর এ বেশি সাবজেক্টে ভর্তির সুযোগ থাকে।
ছবি: Klaipeda University ভর্তি প্রক্রিয়াঃ একঃ প্রথমেই আপনার সকল মার্কসীট ও সার্টিফিকেট শিক্ষা বোর্ড থেকে সত্যায়িত করে নিন। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সর্বশেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করে নিন। এরসাথে পাসপোর্টের ফটোকপি নোটারী করে তারপর আইন মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করতে হবে। এবং সকল কাগজপত্র কমপক্ষে ৩/৪ কপি সত্যায়িত করবেন। আর এসব কাজ শেষ করে মাস্ট টু ডু হচ্ছে ইন্ডিয়ার ভিসা করবেন। মোটকথা অফার লেটার হাতে আসার আগে যেনো আপনার ইন্ডিয়ার ভিসা হয়ে যায়। দুইঃ লিথুয়ানিয়ায় যে কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে গেলে প্রথমে আপনাকে এস কে ভি সি থেকে কোয়ালিটি এসেসমেন্ট সার্টিফিকেট নিতে হবে। সে জন্য ওয়েবসাইট থেকে ফরম ডাউনলোড করে তা পুরণ করে ১ কপি করে সত্যায়িত করা একাডেমিক ডকুমেন্টস আর পাসপোর্টের কপি সহ তা ডাকযোগে প্রেরন করতে হবে। ঠিকানাঃ To the Centre for Quality Assessment in Higher Education (A. Goštauto g. 12, LT-01108 Vilnius, Lithuania)
ফরম ডাউনলোড লিঙ্কঃ
http://www.skvc.lt/default/en/60/apply/documentation_requirements এরা কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে সার্টিফিকেট প্রদান করতে সময় নিবে ২০-২৫ দিনের মতো। এই সার্টিফিকেট অন্যান্য কাগজপত্রের সাথে ভর্তির জন্য আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরন করতে হবে। এর জন্য তারা কোনও ফি গ্রহন করে না। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি। তিনঃ ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যা আপনার নির্ধারিত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরন করতে হবে অথবা কিছু ক্ষেত্রে অনলাইনের এডমিশন পোর্টালে আপলোড করতে হবে। • ছবি ৩৫/৪৫ • সম্পূর্ণ পুরন করা আবেদন পত্র • পাসপোর্টের সত্যায়িত কপি • সব একাডেমিক ডকুমেন্টস সত্যায়িত কপি • হাউজিং ফরম • মোটিভেশন লেটার • ইংরেজির দক্ষতা সার্টিফিকেট • এপ্লিকেশন ফি প্রদানের প্রমানপত্র সবকিছু প্রেরনের পর ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে আপনি কন্ডিশনাল অফার লেটার পাবেন। এটি হাতে পাবার পর আপনাকে এক বছরের টিউশন ফি প্রদান করতে হবে। টিউশন ফি প্রেরনের ৩/৪ দিনের মধ্যেই আপনি ফাইনাল অফার লেটার পাবেন সাথে ভিসা আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ। চারঃ ভিসা আবেদনঃ স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের জন্য আপনাকে সরাসরি দিল্লী তে অবস্থিত লিথুয়ানিয়ান এম্বেসিতে আবেদন করতে হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যা যা লাগবে • সম্পূর্ণ পুরনকরা ন্যশনাল ডি ভিসা আবেদন পত্র। • পাসপোর্ট • ২ কপি ছবি ৩৫/৪৫। • অফার লেটার, মেডিয়েশন লেটার। • একোমোডেশন কনফার্মেশন। • এফিডেফিট অব ফাইনান্সিয়াল সাপোর্ট • সর্বশেষ ৩ মাসের ব্যংক স্টেটমেন্ট। কমপক্ষে ৪/৫ লক্ষ টাকা ব্যালেন্স থাকতে হবে। • ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট • হেলথ ইনস্যুরেন্স ১২ মাসের। (২৯০০০ টাকা) • কনফার্ম ওয়ান ওয়ে এয়ার টিকেট। এবং সকল কাগজপত্রের এক সেট ফটোকপি সাথে রাখতে হবে। ইন্ডিয়া যাবার আগে এম্বেসির ওয়েবসাইট থেকে ভিসা ইন্টারভিউয়ের এপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। ইন্টার্ভিউয়ের পর ভিসা প্রসেসিং এর জন্য ১৪ দিন সময় লাগে, তবে অনেক সময় তা ৭-১০ দিনের মধ্যেই হয়ে যায়। ভিসা ইস্যু করা হয় ১ বছরের জন্য। এবং এই ভিসায় আপনি সেনজেনভুক্ত বাকি ২৫ টি দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন। কিছুটা ভাল লাগার বিষয় হচ্ছে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য লিথুয়ানিয়ান এম্বেসি কোনও ভিসা ফি নেয় না। তবে এটা সত্যি যে যদি আপনার সকল কাগজপত্র ঠিক থাকে এবং ভিসা ইন্টারভিউ ভাল হয় তাহলে ভিসা হবে ধরে নিতে পারেন কনফার্ম।
ছবি: vilnius university লিথুয়ানিয়ার কিছু ইউনিভার্সিটিঃ Aleksandras Stulginskis University Kaunas University of Technology Vytautas Magnus University Vilnius University Klaipėda University Vilnius Gediminas Technical University Vilnius Academy of Fine Arts Šiauliai University Mykolas Romeris University Lithuanian University of Health Sciences Lithuanian University of Educational Sciences Kaunas University of Technology
যে বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখবেনঃ ১- বোর্ড থেকে সত্যায়িত করতে ৩-৫ দিন সময় লাগে। মুল কপি সহ ফটোকপি ৩/৪ সেট করাবেন, ব্যাংক ড্রাফট লাগবে ৫০০/৬০০ টাকা (ঢাকা বোর্ড) ২- এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বোর্ড থেকে সত্যায়িত এডুকেশনাল ডকুমেন্ট মুল কপি সহ ৩ সেট ফটোকপি সত্যায়িত করাতে হবে। সকাল ১১ টার মধ্যে জমা দিতে হবে, ডেলিভারি পাবেন ২.৩০/৩ টার পর। ৩- পাসপোর্টের নোটারাইজ ৩ কপি আইন মন্ত্রণালয় থেকে সত্তায়িত করাবেন, সাথে একটা নরমাল ফটোকপি ও রাখবেন কারন এটা ওরা রেখে দিবে। জমা দিবেন অবশ্যই ১১ টার মধ্যে, ডেলিভারি পাবেন দুপুর ১ টার পর। ৪- এবার শিক্ষা বোর্ডের সত্যায়িত সব কাগজ+ আইন মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত পাসপোর্টের কপি সব একসাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করাবেন। সকাল ১১ টার মধ্যে জমা দিতে হবে ডেলিভারি পাবেন ৩ টার পর। তবে জমা যদি ১১ টা থেকে দুপুর ১ টার মধ্যে হয় তাহলে তা ডেলিভারি পাবেন পরদিন। আসল কথা হচ্ছে লাইনে দাড়াতে হবে কমপক্ষে সকাল ৬টা থেকে ৭ টার মধ্যে কারন অনেক ভীড় হয়। ৫- ইন্ডিয়া যাবেন ইন্টার্ভিউয়ের কমপক্ষে ২ দিন আগে যদি বাই এয়ার এ যান। আর যদি বাই রোড তাহলে কমপক্ষে ৪ দিন আগে রওনা দিবেন। একদিনে কলকাতা তারপর ওখান থেকে দিল্লির টিকেট। টিকেট ৩এসি ২২৫০-২৫০০ রুপি। ২য় এসি ৩০০০-৩৫০০। ফেয়ারলি পেলেস থেকে টিকেট করলে একদম নায্য মুল্যে পাবেন। তবে সকাল সকাল যেতে হবে ২ টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। সাথে অবশ্যই পাসপোর্ট থাকতে হবে। দিল্লী যেতে সময় লাগে ট্রেন ভেদে ১৭-২৫ ঘণ্টা। রাজধানী এক্সপ্রেস বা দুরন্ত হলে ভাল হয়। কোনো খাবার সাথে নেয়ার দরকার নেই, এমন কি ট্রেন এ উঠার আগে খালি পেটে উঠাই ভাল, কমপক্ষে ৬/৭ বার খাবার দেয়া হয় ট্রেন এ। দিল্লী তে নেমে পাহাড়গঞ্জ গেলে ১ নং গেট এর দিকে যাবেন। ওভারব্রিজে উঠে ১ নং প্লাটফর্ম যে দিকে সে দিকে যাবেন। অনেক দালাল পাবেন কাঊকে পাত্তা দিবেন না। দিল্লী স্টেশান থেকে বের হয়ে হাতের ডান দিকে রওনা দিবেন ৫/৭ মিনিট হাঁটলেই অনেক হোটেল পাবেন, আরাকশান রোড এ। ব্যাগ ভারি হলে রিক্সা নিবেন ভাড়া ২০/৩০ রুপি। নিউ বাজার রোডে এ ও অনেক হোটেল আছে, এই রোড একদম দিল্লী স্টেশন এর অপজিটে।
পাহাড়গঞ্জ বা নিউ বাজার রোড থেকে লিথুয়ানিয়ান এম্বেসি প্রায় ৪০ মিনিট-১ ঘণ্টা সময় লাগে অটোতে গেলে ভাড়া ১২০-১৫০ রুপি, তবে অনেক সময় আমাদের দেশের মত অবস্থা ঠেকায় পরলে ২৫০ রুপি দিয়েও যাওয়া লাগে (ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা)। দিল্লী থেকে ফেরার সময় ট্রেনের টিকেট করবেন দিল্লী স্টেশনের দোতলায় ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিস্ট ব্যুরো থেকে, কোনো দালালের কাছ থেকে বা ট্রাভেল এজেন্ট থেকে শুধু শুধু টিকেট করার কোনো দরকার নেই। এখানেও টিকেট করার সময় আপনার পাসপোর্ট সাথে রাখবেন।
বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ azadenet@gmail.com