তারুণ্যের কান্ডারী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
‘ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর ?—প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন!
আসছে নবীন—জীবন—হারা অ—সুন্দরে করতে ছেদন !
তাই সে এমন কেশে বেশে
প্রলয় বয়েও আসেছ হেসে—মধুর হেসে !
ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চির সুন্দর !
তোরা সব জয়ধ্বনি কর !
তোরা সব জয়ধ্বনি কর !
এমন আহব্বান যিনি করতে পারেন তিনি আমাদের জাতীয় কবি, তারুণ্যের কান্ডারি কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
জন্ম : জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬ চুরুলিয়া, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত।
(বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ)
মৃত্যু : ভাদ্র ১২, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ (৭৭ বছর) ঢাকা, বাংলাদেশ।
বাঙালীর প্রাণের কবি -বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম -এর ৪১তম প্রয়াণদিবসে তাঁর অম্লান স্মৃতির প্রতি সারেগামা পরিবারের বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। সেই সাথে কবির প্রতি জানাই সশ্রদ্ধ ভালোবাসা। কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন তারুণ্যের কবি, সাম্যের কবি। তিনি আজীবন তরুণের জয়গান গেয়ে গেছেন। কবি তরুণদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, ‘ইহাই যৌবন, এই ধর্ম যাহাদের—তাহারাই তরুণ। তাহাদের দেশ নাই, জাতি নাই, অন্য ধর্ম নাই। দেশ-কাল-জাতি-ধর্মের সীমার ঊর্ধ্বে ইহাদের সেনানিবাস।’ তিনি তরুণদের বড়ই ভালোবাসতেন।
১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ও ৬ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ নাট্যভবনে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় মুসলিম তরুণ সন্মেলনের সভাপতিরূপে তরুণদের উদ্দেশে বলেন, ‘তরুণদের প্রতি আমার অপরিসীম ভালোবাসা, প্রাণের টান। তারুণ্যকে-যৌবনকে-আমি যেদিন হইতে গান গাহিতে শিখিয়াছি সেই দিন হইতে বারে বারে সালাম করিয়াছি, তাজিম করিয়াছি, সশ্রদ্ধ নমস্কার নিবেদন করিয়াছি। গানে কবিতায় আমার সকল শক্তি দিয়া তাহারই জয় ঘোষণা করিয়াছি, স্তব রচনা করিয়াছি।
তাঁর লেখা কিংবা অভিভাষণে খুঁজে পাই বার্ধক্য ও যৌবনের কথা। তিনি বার্ধক্য ও যৌবনের পার্থক্য সুন্দরভাবে ব্যাখ্য করেছেন। বার্ধক্যকে বলেছেন, যারা পুরাতন, মিথ্যা, মৃত্যুকে আঁকড়িয়ে ধরে থাকে। বৃদ্ধ তারাই যারা মায়াচ্ছন্ন, নতুন অভিযানের জয়যাত্রার পথ বোঝে না। তাঁর ভাষায় ‘জীব ইহয়াও জড়।’
যৌবন হলো বার্ধক্যের জীর্ণাবরণের তলে মেঘ-লুপ্ত সূর্যের মতো প্রদীপ্ত। আর তরুণ হলে জয়ের শক্তির অপরিমাণ, গতিবেগ ঝঞ্ঝার মতো, তেজ নির্মেঘ আষাঢ়-মধ্যাহ্নের মার্তণ্ডপ্রায়, অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা, ক্লান্তিহীন যাদের উৎসাহ, বিরাট ঔদার্য, অফুরন্ত প্রাণ, অনেক গভীর সাধনা, মৃত্যু যার হাতের মুঠোতলে।
আমাদের তারুণ্য নজরুলের এই তারুণ্যের শক্তির মতো উজ্জ্বল। তারা দিন-রাত স্বপ্ন দেখে নতুন একটা বাংলাদেশের। যে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। সেইদিন আমরা আমাদের মধ্যে সত্যিকারের শক্তির পরিচয় পাবো, যেদিন নজরুলের আদর্শকে, চেতনাকে, তাঁর ভাবনাকে ভালোবেসে বুকে ধারণ করতে পারব। চিরতারুণ্য, শক্তি, সাহসের কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জানতে পারবো, তাঁকে ঠিক ঠিক ভাবে শ্রদ্ধা করতে পারব, ভালোবাসতে পারব। তবেই স্বার্থক হবে আমাদের জীবন।
আরও দেখুন ঃ
Comments