top of page

নায়ক রাজ এর জীবনাবসান।


Nayak Raj Razzak

নায়ক রাজ রাজ্জাক ( ২৩শে জানুয়ারি ১৯৪২ - ২১শে আগস্ট ২০১৭)

নায়ক রাজ বলতে বাংলাদেশে এক জনকেই বোঝানো হয়, আর তিনি হচ্ছেন চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তী রাজ্জাক। চলচ্চিত্র জীবন নিয়ে তার রয়েছে বর্ণিল ক্যারিয়ার। তার বাইরেও সাধারণ একজন মানুষ থেকে অসাধারণ নায়ক হয়ে যাওয়ার সিনেমাটিক গল্পও রয়েছে তার জীবনে। তিনি শুধু নায়ক রাজই নন তিনি একাধারে একজন অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্র অঙ্গনে অগ্রনী ভুমিকা পালন করে আসছেন সেই শুরু থেকেই। চলচ্চিত্রে তার পেরিয়ে আসা অর্ধশত বছর ও এর বাইরেও তার জীবনের নানা গল্প নিয়ে আমাদের এই প্রতিবেদন।


রাজ্জাকের আসল নাম আব্দুর রাজ্জাক, জন্ম হয়েছিল ১৯৪২ সালের ২৩শে জানুয়ারি কলকাতার ৮ নম্বর নাকতলা রোডের বাড়িতে।বাংলা চলচ্চিত্র জগতে তার বিচরন ছিল ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। রাজ্জাকের জীবন শুরুর দিকেই পড়ে গিয়েছিল কঠিন এক পরীক্ষায়। একদিন হঠাৎ মারা গেলেন বাবা আকবর হোসেন। বাবার আকস্মিক মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতে আট মাস পর মাকেও হারান। বড় দুই ভাই ও এক বোনের আদরে বেড়ে ওঠা রাজ্জাক কৈশোরে বাউণ্ডুলে হতে থাকেন। মা-বাবার শাসন না থাকলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যা হয়, রাজ্জাকের ক্ষেত্রেও তা-ই হলো। লেখাপড়ায় মনোযোগ কম। ছন্নছাড়া রাজ্জাকের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়। ঘরে মন টেকে না। জন্মের পর থেকেই কলকাতায় বেড়ে ওঠা রাজ্জাকের কখনই অভিনয়ের প্রতি কোন আগ্রহ বা ইচ্ছেই ছিলনা। বরং তাঁর ইচ্ছে ছিল একসময় ভালো কোন খেলোয়াড় হবেন। খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ থেকেই তাঁর এমনটি ইচ্ছে। একবার তাঁর স্কুল থেকে স্বরস্বতী পূজা উদযাপনের জন্য একটি নাটক প্রদর্শনের ব্যবস্থা নেয়া হয়। রাজ্জাকের স্পোর্টস শিক্ষক রাজ্জাককে সেখানে অংশ নিতে বললেন। রাজ্জাক অনেকটা অনিচ্ছায় সেখানে একটি পার্ট করলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে তার সেই প্রথম অভিনয় জীবনে আগমনের সেই অভিজ্ঞতায় তিনি খুব আনন্দিত হলেন। অভিনয়ের প্রথম স্বাদ তাকে পেয়ে বসল। এরপরও স্কুলের আরো কিছু নাটকে তিনি অংশ নিলেন একে একে। কিন্তু অবাক করা বিষয়, এভাবে অভিনয় করতে করতে একটা সময় এলো যখন রাজ্জাক অভিনয়কে গুরুত্বের সাথে নেয়ার কথা চিন্তা করতে লাগলেন। তিনি কিশোর বয়সে কলকাতার মঞ্চ নাটকে জড়িয়ে পরেন।


টালিগঞ্জের সিনেমা শিল্পে তখন ছবি বিশ্বাস, উত্তম কুমার, সৌমিত্র, বিশ্বজিতদের যুগ। সেখানে হালকা-পাতলা সাধারণ রাজুর, অভিনয় সুযোগ পাবার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। উজালা ছবির মধ্যদিয়ে রাজ্জাকের শুরু হল ঢাকার চলচ্চিত্র জীবন। যেমন ভাবা তেমনটা কী আর এত সহজে হয় ? কোন বড় অভিনেতার জীবনেই হয়ত অনেক কষ্ট করে ছাড়া সাফল্য আসেনি। কিংবা সাফল্য পেতে হলে অনেক দূর যেতে হয় এটাই হয়ত ঠিক কথা। আর সেক্ষেত্রে রাজ্জাককেও কষ্ট করতে হয়েছে। কেননা তাঁর অভিনয়ের পথে বড় বাঁধা ছিল তাঁর পরিবার। রাজ্জাকের বাবা আর তার অপর দুই ভাই ছিলেন ব্যবসায়ী। আর স্বাভাবিকভাবেই পরিবারে সবার ইচ্ছে রাজ্জাকও বাকি সবার মতই এই পথ অনুসরণ করেন। তিনি শুরুও করেছিলেন তেমনটি, কিন্তু অস্থির মন। পড়ায় মন টেকে না। তাই রাজ্জাককে নিয়ে বড় দুই ভাই নিজেদের ব্যবসায় বসালেন। কিছুদিন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু সেখানেও মন টেকে না। একসময় কলকাতার বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উষাতে কর্মচারী হিসেবে চাকরিও নেন। সেখানেও বেশি দিন থাকা হয়নি। অভিনয়ের প্রতি তার আগ্রহ আর ভালবাসা দেখে তার মেঝ ভাই তাকে সব দিক দিয়ে সহায়তা করেছিলেন। আর ভাইয়ের সাহায্যে রাজ্জাক তার স্বপ্নের পেছনে ছুটতে সফল হোন। মঞ্চের সঙ্গে জড়িত থাকলেও স্বপ্ন ছিল সিনেমাকে ঘিরে।


রাজ্জাক এসএসসি পরীক্ষা পাশ করার পর থেকেই অন্যান্য বড় কিছু অভিনেতাদের সাথে নাটকে কাজ করা শুরু করেন। নিজের প্রতিভার গুনে রাজ্জাক ধীরে ধীরে আরো অনেক নাটকে কাজ করার সুযোগ পেতে থাকেন। একসময় রাজ্জাক কলকাতার নামকরা নাট্যাভিনেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। কলকাতায় সেই সময়ে যেখানে রাজ্জাক তার অভিনয় জীবনের সূচনা করেছিলেন সেখানেই তার জীবনের আরেক অধ্যায় শুরু করেন স্ত্রী লক্ষীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে। রাজ্জাক নিজে মন দিয়ে বসেছিলেন খায়রুন্নেসাকে। লক্ষ্মী নামেই আজীবন যাঁকে ডেকেছেন। প্রেম হয়, প্রেম থেকে বিয়ে। ১৯ বছর বয়সে লক্ষ্মী রাজ্জাকের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে এলেন। বদলে যান রাজ্জাক, বদলে যায় রাজ্জাকের জীবন। এক সাক্ষাৎকারে রাজ্জাক বলেছিলেন, ‘লক্ষ্মী আমার অগোছালো জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটায়, আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আমি স্থির হতে বাধ্য হই।’ কলকাতার সেই অভিনয় পাড়ায় চলতে গিয়ে রাজ্জাক সংস্পর্শে আসেন অনেক খ্যাতিমান অভিনেতাদের এদের মধ্যে ছিলেন উত্তম কুমার, তপন সিনহা আর পরিচালক পিযূষ সাহা। পিযূষ সাহার অবদান ছিল রাজ্জাকের জীবনে অনেক বড় এক ভূমিকা। এই পরিচালক এক সময় রাজ্জাককে বলেছিলেন নিজের ক্যারিয়ার গড়তে ঢাকায় পাড়ি জমাতে।


নায়ক রাজ্জাকের তখন মাত্র ১৯ বছর বয়স। বাবা-মাকে ছোটবেলায় হারিয়েছেন। তিন ভাই-তিন বোনের মধ্যে তাঁর অবস্থান সবার শেষে। ভাইবোনদের কাছেই তার বেড়ে ওঠা। বড় ভাইবোন সর্বস্ববা। তাদের কথা ফেলানোর উপায় কার আছে ! সে সময়ের একটা রেওয়াজ ছিল খুব তাড়াতাড়ি বিয়ের পিড়িতে বসতে হত। রাজ্জাকের ক্ষেত্রেও তেমনটা হয়েছিল। মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়েছিলেন তিনি বাধ্য হয়েই বলা চলে। কনে খায়রুন্নেসা (ডাকনাম লক্ষী)। সেটা ১৯৬২ সালে, কলকাতার টালিগঞ্জের ঘটনা।


বিয়ের সময় রাজ্জাক অখ্যাত এক যুবক। কলকাতার থিয়েটারে টুকটাক অভিনয় করেন। সংসার জীবনের শুরুতে লক্ষীকে বলেছিলেন , ‘আমার কিন্তু আরেকটা ‘স্ত্রী’ আছে। সেটা হলো অভিনয় ! লক্ষীও তা মেনে নিয়েছিল। সেই যে হাত ধরেছিলেন। মৃত্যুর মত বিদায় সে হাত ছেড়ে দিতে বাধ্য করেছে। অভিনয়ের কারণে এমন অনেক দিন কেটেছে, না খেয়ে দিন পার করেছেন। এ নিয়ে লক্ষী কখনোই একটি কথাও বলেনি। বরং উৎসাহ দিয়েছেন। প্রতিটি দুঃসময়ে-সুঃসময়ে লক্ষী ছিলেন তার পাশে। দীর্ঘ এ দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসায় একটুও ভাটা পড়েনি। বরং দিন যত বেড়েছে ভালবাসা ততই গভীর হয়েছে।


সময়টা ছিল ১৯৬৪ সাল, এর মধ্যে শুরু হলো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এক সময় কলকাতায় থাকাটাই মুশকিল হয়ে পড়ে। রাজ্জাক কলকাতা থেকে বাংলাদেশে তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে পাড়ি জমান স্ত্রী আর ৬ মাসের পুত্র সন্তান বাপ্পারাজকে সাথে করে। চোখে তখন তার অনেক স্বপ্ন। স্বপ্ন অভিনয়ে নিজের প্রতিভার সর্বোচ্চ দেয়ার, স্বপ্ন চলচ্চিত্রে অভিনয় করার। প্রথম দিকে রাজ্জাক চেয়েছিলেন কলকাতার চলচ্চিত্রে ছোটখাট চরিত্রের মাধ্যমেই চলচ্চিত্রে নিজের স্থান করে নেয়া। কিন্তু পিযূষ সাহা তাকে বারন করলেন আর বললেন ভালো চরিত্রের সন্ধান করতে ঢাকা হবে, তার জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা হল ঢাকা। তিনি বললেন, ঢাকার চলচ্চিত্র নতুন করে যাত্রা শুরু করেছে। সেখানে গেলে হয়তো কিছু একটা হবে। ভদ্রলোক ঢাকার প্রথম চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ-এর প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনেতা আবদুল জব্বার খানের পরিচিত। তিনি রাজ্জাককে পাঠালেন তার কাছে একটা চিঠি দিয়ে। তিনি রাজ্জাক কে বলে দিলেন ঢাকার কমলা পুরে থকেন আবদুল জব্বার খান। তখন রাজ্জাক প্রথম এসে কমলা পুরে বাসা নেন। এর পর চিঠি নিয়ে জব্বার খানের কাছে যান তিনি রাজ্জাককে একবাল ফিল্ম লিমিটেড এর কাজ করার সুযোগ করে দেন। সে সময় তিনি কিছু সহকারী পরিচালকের কাজও করেছেন। তারপর দুই বছর টেলিভিশনের অভিনেতা হিসেবে কাজ করেছেন। পাকিস্তান টেলিভিশনে একটি ধারাবাহিক ‘ঘরোয়া’ তে রাজ্জাক অভিনয় করেন। তারপর তিনি কিছু ছোটখাট চরিত্রে অভিনয় করেছেন বেশ কিছু চলচ্চিত্রে। একটা সময় আসল যখন শুধুমাত্র রাজ্জাকের জন্যই চরিত্র সৃষ্টি হতে লাগল।


কঠোর পরিশ্রম আর জীবনের প্রতিটি মহুর্তের সাথে সংগ্রাম করে উপাধি পেয়েছেন আজকের নায়ক রাজ নাজ্জাক। তবে রাজ্জাক তৎকালীন সময়েও দর্শকের কাছে জনপ্রিয় ছিল। আর এই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন পাকিস্তান টেলিভিলশনে ঘরোয়া নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়। জীবনে নানা সংগ্রামের পথ অতিক্রম করে তিনি। তার পর আব্দুল জব্বার খানের সহযোগিতায় তিনি একবাল ফিল্মে কাজ করার সুযোগ লাভ করেন। তিনি উজালা ছবিতে কাজ শুরু করেন পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারী হিসাবে। এর পর সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের তেরো নাম্বার ফেকু অস্তাগড় লেন চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে সবার কাছে নিজ মেধার পরিচয় দেন রাজ্জাক। পরবর্তীতে ‌কার বউ, ডাক বাবু, আখেরী স্টেশনসহ আরও বেশ কটি ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করে তিনি। পরে বেহুলা চলচ্চিত্রে সুচন্দার বিপরীতে তিনি নায়ক হিসেবে ঢালিউডে উপস্থিত হন এবং সবার মন জয় করে নেন। দর্শকের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি নায়করাজ হিসেবে পরিচিতি পান। কি যে করি ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনি আজীবন সম্মাননা অর্জন করেছেন। এই পর্যন্ত তিনি চার বার জাতীয় সম্মাননা লাভ করেন। চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তী হয়েছেন, রাজ্জাক অসীম মনোবল, অমানুষিক পরিশ্রম আর মমতার মাধ্যমে ঠিকই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছেছেন।


পর্যায়ক্রমে তিনি জহির রায়হানের সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দান করেন। আর তখন থেকেই তার ভাগ্য খুলে যায়। সহকারী হিসাবে কয়েকটি ছবি পরিচালনা করার পর হঠাৎ এক দিন তিনি নায়ক হওয়ার সুযোগ পান। লোক কাহিনী নিয়ে জহির রায়হান তখন বেহুলা ছবির নির্মান কাজ করতেছেন। জহির রায়হান তাকে বলল আপনিই আমার ছবির নায়ক। ঐসময় রাজ্জাকের চেহারার মধ্যে কলকাতার বিশ্বজিৎ-এর ছায়া খুজে পাওয়া যেত। জহির রায়হানের সুনিপুণ হাতের ছোয়ায় অসাধারন লক্ষ্মীন্দর হয়ে দর্শকেদের সামনে উপস্থিত হলেন রাজ্জাক। তার বিপরীতে অভিনয় করেছে অপূর্ব সুন্দরী বেহুলারূপী সুচন্দা। বেহুলা ছবিটি ১৯৬৬ সালে মুক্তি পায়। দর্শকের কাছে ছবিটি সুপার হিট হয়। যখন রাজ্জাকের জীবনের মোড় ঘুরে যায়। বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হান রাজ্জাককে আমন্ত্রঞ্জানালেন তার তৈরী ছবি ‘বেহুলা’ তে অভিনয়ের জন্য। সেটি ছিল তাঁর প্রথম ছবি প্রধান অভিনেতা হিসেবে। তারপর দ্বিতীয় ছবি ছিল আনোয়ারা আর তৃতীয় ছবি আগুন নিয়ে খেলা যখন বের হলো ততদিনে রাজ্জাক সুপারস্টার খেতাবে ভূষিত।


এই ছবির মধ্যে দিয়েই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পায় আরেক জন নায়ক যিনি চলচ্চিত্র শিল্পের অপরিহার্য নায়ক। ঢাকার সিনামা হল গুলোতে তখন পাক-ভারতীয় ছবির দাপট। পাকিস্তানের মোহাম্মদ আলী, জেবা, সুধির, শামীম আরা, ওয়াহিদ মুরাদ এবং কলকাতার ছবি বিশ্বাস, উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন, বিশ্বজিৎ, সৌমিত্র এবং ভরতের রাজ কাপুর, নার্গিম, দিলীপ কুমার এদের ছবির সঙ্গে পালা দিয়ে চলতে শুরু করল ঢাকার নির্মাতাদের নির্মিত ছবি। আব্দুল জব্বার খান, রহমান, শবনম, খলিল, ফতেহ লোহানী, খান আতা, সুমিতা দেবী, আনোয়ার হোসেন, সুচন্দা তাদের সাথে আরো একটি নাম যোগ হল আর তা হচ্ছে আর তিনি হলেন রাজ্জাক। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এখানে নির্মিত বেশিরভাগ ছবির নায়ক রাজ্জাক। দুই ভাই, আবির্ভাব, বাঁশরী, এতটুকু আশা, নীল আকাশের নীচে, যে আগুনে পুড়ি, পায়েল, দর্পচূর্ণ, যোগ বিয়োগ, ছদ্মবেশী, জীবন থেকে নেয়া, মধুর মিলন ইত্যাদি ছবির সাফল্যে রাজ্জাক হয়ে ওঠেন চলচ্চিত্রের অপরিহার্য নায়ক। দেশ যখন পাকিস্তান থেকে ভাগ হয়ে যায় তখন বাংলা দেশে পাক ভারতীয় ছবির প্রদর্শন বন্ধ হয়ে যায়।


এমন অবস্থায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যাদের উপর দয়িত্ব পরে রাজ্জাক তাদের মধ্যে একজন। এর পর সড়ক দুর্ঘটনায় রহমান পা হাড়ালে চলচ্চিত্রে রোমান্টিক নায়কের শূন্যতা দেখা দেয়। তখন রাজ্জাক একাই তা সামাল দেন। খুব দক্ষতা এবং নৈপুন্যতার সাথে রাজ্জাক একের পর এক ছবিতে অভিনয় করে যান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম মুক্তি পায় রাজ্জাক অভিনিত মানুষের মন ছবি। ছবিটি ব্যবসা সফল হওয়ার কারনে নতুন ভাবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে জেগে উঠে। ছবিটি পরিচালনা করেন মোস্তফা মাহমুদ। এই ছবির মধ্য দিয়ে শুরু হল চলচ্চিত্রে নয়ক রাজ্জাকের যুগ। তার পর মুক্তি যুদ্ধ নিয়ে প্রথম ছবি চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ওরা ১১ জন, এসএম শফির ছন্দ হারিয়ে গেল, বাবুল চৌধুরীর প্রতিশোধ এবং কাজী জহিরের অবুঝ মন ছবিতে অভিনয় করে রাজ্জাক হয়ে যান বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের আইকন।


১৯৭৩ সালে জহিরুল হকের রংবাজ ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করে রাজ্জাক বাংলা চলচ্চিত্রের নতুন ধারা প্রবর্তন করেন। তিনি সূচনা করেন চলচ্চিত্রের আধুনিক অ্যাকশন যুগেরও। রংবাজ দিয়েই রাজ্জাক তাঁর অভিনয় জীবনে বৈচিত্র নিয়ে আসেন। রাজ্জাক বলেন, রংবাজ ছবির সাফল্যের পর আমার মনে হলো, দর্শকদের একঘেয়েমি থেকে মুক্ত রাখতে হলে সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে হবে। প্রয়োজনে দর্শকদের জন্য নিজের অর্থে ছবি নির্মাণ করতে হবে। তিনি আরো জানান যে প্রযোজক হিসাবে আত্নপ্রকাশ করার আগে আমি আরো কিছু বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করেছি। যেমন; বেঈমান, অনির্বান, স্লোগান, ঝড়ের পাখি, আলোর মিছিল, এখানে আকাশ নীল, অতিথি, অবাক পৃথিবী, উল্লেখযোগ্য।


চলচ্চিত্র অঙ্গনে ভূমিকা প্রসঙ্গে এই সময়ের এক সাক্ষাতকারে নায়ক রাজ্জাক বলেন, আমি শুধু অ্যাকশান, রোমান্টিক নয় ত্রিরত্নের মতো কমেডি ছবিতেও অভিনয় করেছি। আমি চেয়েছি দর্শকদের আনন্দ দিতে। আপনি লক্ষ্য করবেন, আজিজুর রহমানের অতিথি ছবিতে আমি সেক্রিফাইসিং চরিত্রে অভিনয় করেছি। এসময় আলমগীর নতুন অভিনেতা। তাকে তুলে ধরার জন্য শাবানার সঙ্গে রোমান্টিক চরিত্রে আমি মিলিয়ে দিয়েছি। অনুরূপ ভাবে নারায়ন ঘোষ মিতার আলোর মিছিল ছবিতে আমি ফারুককে রোমান্টিক চরিত্রে মেনে নিয়েছি। কারন আমার উদ্দেশ্য ছিল নতুন নায়ক হলে আমার উপর চাপ কমবে। আমার কাছে খুবই ভালো লাগে যে তারা সবাই জনপ্রিয়তা লাভ করতে পেরেছে। চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ন অবদাব রেখেছে। ১৯৭৪ সালে নতুন পরিচালক মাসুদ পারভেজ পরিচালিত মাসুদ রানা চরিত্রে আমি অতিথি শিপ্লী হিসেবে একটি গানের দৃশ্যে অভিনয় করেছি। এতে নায়ক হিসাবে অভিনয় করে সোহেল রানা, তার জীবনেও এটি প্রথম ছবি। ছবিটিতে মনের রঙে রাঙাব বনের ঘুম ভাঙাব গানের সাথে নেচে গেয়ে আরেক জন নতুন শিল্পীর উত্তরনে আমি কিছুটা হলেও ভূমিকা রেখেছি। এই সময় আমি যে অবস্থানে ছিলাম কোন নতুন নায়কের ছবিতে অতিথি শিল্পী হিসেবে কাজ করার কথা আমার নয়। বর্তমান প্রজম্মের কোন জনপ্রিয় নায়ক আমার মত করবে না। আর আমি করেছি তার কারন হচ্ছে আমাদের চলচ্চিত্র জগতে নায়ক নায়িকাদের সংখা বাড়িয়ে চলচ্চিত্রকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।


অভিনেতা হিসেবে নিজেকে অন্য সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজ্জাককে তেমন কোনো কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়নি। রাজ্জাক বরাবরই মানুষকে যথাযোগ্য সম্মান আর ভালোবাসা দিয়েছেন। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নামীদামী প্রযোজক-পরিচালকদের সম্মানে পার্টির আয়োজন করেছেন বছরের পর বছর। রাজ্জাকের স্ত্রী লক্ষী রাত জেগে স্বামীর বন্ধুদের পছন্দ মতো রান্নাবান্না করে খাইয়েছেন। নির্মাতারাই তাঁকে নিয়েছে-বাদি থেকে বেগম, সমাধি, কি যে করি, সেতু, আগুন-এর মতো জনপ্রিয় ছবির সেরা চরিত্রে। এক সময় পরিচালকরা মনে করতেন পর্দায় নায়ক মারা গেলে ছবি চলবেনা। ঠিক এমন সময়ই বেঈমান, সমাধি আর সেতু ছবির শেষ দৃশ্যে রাজ্জাক মৃত্যুবরন করেন, এতে দর্শকদের খুব কষ্ট দিয়েছেন ঠিকই তবে ছবির সাফল্যও আদায় করে নিয়েছেন। বর্তমানে বাংলা ছবির নায়ক মানেই চকচকে শার্ট-প্যান্ট, স্যুট-টাই পরা। কিন্তু ঐ সময় রাজ্জাক অভিনয় করতেন ছাপার লুঙ্গি পরে, চরিত্রের প্রয়োজনটা বোঝার ক্ষমতাটাই রাজ্জাককে নায়করাজে পরিণত করেছে।


১৯৭৭ সালে রাজ্জাক যখন পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন, তখন তিনি বেছে নেন প্রেমের গল্পকে। ছবি করেন অনন্ত প্রেম এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন ববিতা। গল্প, গান, চিত্রায়ন, অভিনয় সবকিছু মিলিয়ে ছবিতে তারা দর্শকদের যা উপহার দিয়েছে দর্শক কি তা কখনো ভূলতে পারবেন ? প্রেমের ছবির মূলমন্ত্র হচ্ছে মান অভিমান, প্রেম ভালোবাসা এবং সর্বশেষে মিলন। এসব ছবি দেখে দর্শক হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরেন।


কিন্তু অনন্ত প্রেম ছবিতে নায়ক-নায়িকার মৃত্যু দিয়ে ছবি শেষ করেও সাফল্য অর্জন করে রাজ্জাক প্রমান করে পরিচালক হিসাবেও তিনি দর্শকের মন জয় করতে পারেন। তার পর বদনাম, সৎ ভাই, চাপাডাঙ্গার বউ এবং বাবা কেন চাকর নির্মাণ করে পরিচালক হিসেবে নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী করে নেন তিনি। বিশেষ করে তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাপাডাঙ্গার বউ ছবিটি নির্মাণ করতে গিয়ে তিনি অভিনেতা রাজ্জাককে বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় চরিত্রে শাবানার বিপরীতে এটিএম শামসুজ্জামানকে নিয়ে একজন অভিনেতার মহত্ব প্রমাণ করেছেন। এই ছবিটির প্রযোজক তিনি, পরিচালকও তিনি নিজেই , এই ছবিতে ঐ সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা শাবানাকে নিয়েছেন নাম ভূমিকায় পূত্র বাপ্পারাজকে দিয়েছেন নায়ক হিসেবে এবং যাত্রা সম্রাট অমলেন্দু বিশ্বাসের কন্যা অরুনা বিশ্বাকেও নিয়েছেন নাইকা হিসাবে, তিনি ইচ্ছা করলে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করতে পারতেন, প্রধান চরিত্রে নিয়েছেন খল অভিনেতে তার বন্ধু এটিএম শামসুজ্জামনকে। এখানেই পরিচয় হয় রাজ্জাকের অতুলনীয় এবং দূর দৃষ্টি সম্পন্ন মনোভাব।


অভিনেতা রাজ্জাকের বৈচিত্রময় সাহসী চরিত্রে অভিনয়ের কথা স্মরনীয় হয়ে আছে। ১৯৭৮ সালে রাজ্জাক যখন খুবই জনপ্রিয় এক অভিনেতা তখনও তিনি আজিজুর রহমানের অশিক্ষিত ছবিতে গ্রামের পাহারাদার চরিত্রে অভিনয় করেছেন, লুঙ্গি আর শার্ট পরে, যা আজো ভুলবার নয়। ছবিটির শেষ দৃশ্যে মাস্টার সুমনের মৃত্যু পর পুলিশের খাতায় রাজ্জাকের স্বাক্ষর করার দৃশ্য আজো মনে পরলে চোখে পানি এসে যায়।


এর দুই বছর পর একই পরিচালক আজিজুর রহমানের ছুটির ঘণ্টা ছবিতে স্কুলের দপ্তরির চরিত্রে রাজ্জাকের অসাধারণ অভিনয় কি মন থেকে মুছে ফেলা সম্ভব? বড় কথা হল ওই সময় যে অবস্থানে থেকে রাজ্জাক পাহারাদার কিংবা স্কুলের দপ্তরির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সেটা কি আজকের কোনো জনপ্রিয় নায়কের কাছ থেকে আশা করা যায় ?


এদিকে আবার দিলীপ বিশ্বাসের জিঞ্জির মতিন রহমানের অন্ধ বিশ্বাস ছবির দুর্দান্ত অভিনেতার গুন এখন কার কয় জন নায়কের মাঝে খুজে পাওয়া যাবে। সবচেয়ে বড় কথা হল রাজ্জাক খুব ভালো করে জানতেন দর্শক কখন কি চায়, দর্শকের চাহিদা কি। তার বদনাম ছবিতে তিনি জাফর ইকবালের হিট গান হয় যদি বদনাম হোক আরো ছবিটি ব্যবসা সফল হয়। তিনি খুব চৌকুশ ছিলেন যে কখন কাকে দিয়ে কোন চরিত্রে অভিনয় করাতে হবে বা কাকে দিয়ে কোন কাজ করাতে হবে। যার ফলে তিনি চলচ্চিত্রের খারাপ সময়েও বাবা কেন চাকর ছবির মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রের চেহারা পালটিয়ে দেন। ছবিটি দ্বিতীয় বার কলকাতায় চালিয়েও সাফল্য অর্জন করেন।


রাজ্জাক ছোট থেকেই সম্রাটকে চলচ্চিত্র জগতে নিয়ে আসেন। রাজ্জাক তার দুই পুত্র বাপ্পারাজ এবং সম্রাটকে নিয়ে এক সঙ্গে অভিনয় করেছেন কোটি টাকার ফকির ছবিতে। দুই ছেলেকে নিয়ে অভিনয় করাটাকেই রাজ্জাক তাঁর জীবনের সেরা প্রাপ্তি হিসেবে মনে করেন। তিনি বলেন, আমার কোনো অপ্রাপ্তি নেই। সবকিছুই আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। তবে একটা কষ্ট আছে, সেটা হলো আমার বড়মেয়ে শম্পার অকাল মৃত্যু। ও বেঁচে থাকলে আমরা সম্পূর্ণ এবং পরিপূর্ণ পরিবার নিয়ে গর্ববোধ করতে পারতাম।


আবদুর রাজ্জাক থেকে যে মানুষটি একজন নায়ক রাজ রাজ্জাকে পরিনত হয়েছেন, তিনি হচ্ছে সেই দিনের কমলাপুরের ছোট্ট ঘর থেকে গুলশানের আলিশান বাড়ি খ্যাতি, সম্মান, অর্থ, যশ, দর্শকদের অকৃতিম ভালোবাসা এবং চলচ্চিত্রের প্রতিটি মানুষের শ্রদ্ধা স্নেহ-ভালোবাসা পাওয়ার পিছনে অর্থাৎ আবদুল রাজ্জাক থেকে বর্তমান অবস্থানে আসার পিছনে যে সব মহত্ব ব্যক্তিদের অবদান রয়েছে তাদের সম্পর্কে তিনি বলেন।


কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে কখনই কুন্ঠা বোধ করতে না তিনি। এভাবেই তিনি বলতেন সব মাধ্যমে ঃ


আমার আজকের এই অবস্থানের পিছনে যাদের অবদান রয়েছে তাদের মধ্যে আছেন, আবদুল জব্বার খান, জহির রায়হান, আজহারুল আনোয়ার, নজরুল ইসলাম, আবদুল লতিফ বাচ্চু, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুভাষ দত্ত, আজিজুর রহমান, আমজাদ হোসেন, চাষী নজরুল ইসলাম এবং বন্ধু মজিবুর রহমান চৌধুরী মজনু। এদের সহযোগিতা না পেলে আমি আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে পারতাম না। কৃতজ্ঞতা জানাই তাঁদেরকে যাদের ছবিতে আমি জাতীয় চলচ্চিত্র ও বাচসাস পুরস্কার পেয়েছি।


বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই প্রযোজক-পরিবেশক একেএম জাহাঙ্গীর খানকে যিনি আমাকে শরৎচন্দ্রের গল্প অবলম্বনে দুটি ছবি চন্দ্রনাথ ও শুভদাতে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন।


বন্ধু পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম এই দুই ছবির বাইরেও আমাদে নিয়ে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা নামে আরো একটি সাহিত্য নির্ভর ছবি নির্মান করেছেন। অর্থাৎ সাবাই আমাকে নায়ক রাজ হতে সাহায্য করেছে। যাদের সাথে আমি কাজ করেছি তাদের ভালোবাসা আমাকে ঋণী করে রেখেছে। তাদের ঋন শোধ করার ক্ষমতা আমার নেই। নায়ক রাজ রাজ্জাক বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের জন্য চ্যানেল আই চলচ্চিত্র মেলা ২০০৯ তার পুরু পরিবারকে সম্মাননা প্রদান করে।


রাজ্জাক প্রথম জুটি বেঁধে অভিনয় করেন সুচন্দার সাথে। তারপর একে একে কবরী, ববিতা আর শাবানার সাথে জুটি বেধে ভালো জুটির খ্যাতি অর্জন করেন। এছাড়াও আরো অনেক অভিনেত্রীদের সাথে রয়েছে তার অনেক চলচ্চিত্র।


রাজ্জাক অভিনয় করেছেন প্রায় ৩০০টির মত বাংলা আর উর্দু চলচ্চিত্রে। কাজ করেছেন অনেক নামী অভিনেতাদের সাথে। আনোয়ার হোসেন, বুলবুল আহমেদ, সোহেল রানা, ইলিয়াস কাঞ্চন প্রভূত শিল্পীদের সাথে তার অভিনিত চলচ্চিত্র রয়েছে।


তখনকার দিনে এত হার্ট্থ্রোব আর সুপারস্টার নায়ক হওয়া সত্বেও রাজ্জাককে নিয়ে শোনা যায়নি কোন স্ক্যান্ডাল। অভিনয়ের প্রতি আসক্তি আর পরিবারের প্রতি ভালবাসা তার ছিল প্রগাঢ়। নিজের কাজ আর পরিবার দুটোর মধ্যেই ছিল ভাল বোঝাপড়া। তাছাড়া স্ত্রীর সার্বক্ষণিক সহযোগিতা রাজ্জাককে সব ধরনের গুজব থেকে দূরে রাখতে পেরেছে। ইন্টারনেটের এক সাক্ষাতকারে এমনি বলেছেন নায়ক রাজ্জাক। নায়ক হিসেবে রাজ্জাক সর্বশেষ অভিনয় করেন ১৯৯৪ সালে অন্ধ বিশ্বাস ছবিতে। তারপর দীর্ঘ ৫ বছরের বিরতি। এরপর আবারো রূপালী পর্দায় ফিরে আসেন বাবা কেন চাকর ছবির মাধ্যমে। রাজ্জাক এরপর থেকে বেশ বেছে বেছেই চলচ্চিত্র করে গেছেন। তার মতে তিনি এখন আর তেমন কোন চরিত্রে অভিনয় করবেন না যা তাকে মানাবে না।


শক্তিমান এই অভিনেতা বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে কাজের পাশাপাশি কলকাতার চলচ্চিত্রেও কাজ করছেন।


নায়ক রাজ্জাকের দুই পুত্র বাপ্পারাজ আর সম্রাট ঢাকার চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে অভিনয় করছেন। রাজ্জাক নিজের ছেলেদের তারই পথ অনুসরণ করে অভিনয়ে পদার্পন করাতে খুব গর্ববোধ করতেন।


নায়ক রাজ রাজ্জাক তাঁর অভিনয় জীবনে অর্জন করেছেন সেরা অভিনেতা হিসেবে ন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড পাঁচবার। অর্জন করেন লাইফটাইম এ্যাচিভমেন্ট এ্যাওয়ার্ড। রাজ্জাকের অভিনিত ছবিগুলোর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হচ্ছে – অবাক পৃথিবী, আবির্ভাব, অলংকার, অবকাশ, অবুঝ মন, আলোর মিছিল, অণির্বান, অনুরাগ, আনোয়ারা, আপনজন, অসাধারন, আসামী, আশার আলো, অশিক্ষিত, বাদী থেকে বেগম, বাশরী, বেহুলা, বেঈমান, বন্ধু, বড় ভালো লোক ছিল, চন্দ্রনাথ, চোখের জলে, ছন্দ হারিয়ে গেল, ছুটির ঘন্টা, দ্বীপ নেভে নাই, দর্পচূর্ণ, দুই ভাই, দুই পয়সার আলতা, এতটুকু আশা, ঘরণী, গুন্দা, যে আগুনে পুড়ি, জীবন সঙীত, জীবন থেকে নেয়া, ঝড়ের পাখি, কাবিন, কাঁচ কাটা হীরে, কাজল লতা, কালো গোলাপ, কে তুমি, কী যে করি, মানুষের মন, মাটির ঘর, মায়ার বাঁধন, মধু মিলন, মহানগর, মনের মত বউ, মতিমহল, ময়নামতি, নাত বউ, নাচের পুতুল, নাগিন, নতুন পৃথিবী, নাজমা, নীল আকাশের নীচে, অধিকার, অমর প্রেম, অনেক প্রেম অনেক জ্বালা, ওরা এগারো জন, অশ্রু দিয়ে লেখা, অতিথি, অভাগী, পিচ ঢালা পথ, পরিচয়, প্রতিশোধ, পুত্রবধূ, রজনীগন্ধা, রংবাজ, সেতু, সমাধী, সমাপ্তি, স্বরলিপি, সংসার, সোহাগ, স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা, সুখে থাকো, স্লোগান, সোনালী আকাশ, স্মৃতিটুকু থাক, টাকা আনা পাই, তালাক, তেরো নাম্বার ফেকু ওস্তাগার লেইন।

Kommentare


  • Twitter Social Icon
  • Facebook Social Icon
  • Google+ Social Icon
  • LinkedIn Social Icon
Follow
"SAREGAMA JUST IN"

  জনপ্রিয় সংবাদ সা রে গা মা

বাংলা গান সা রে গা মা

Print  / Press Ctrl+P
Saregama Bangla

Sa Re Ga Ma News Archive

Write Yours Comments. 

RSS Feed

Reproduction of any content, news or article published on this website is strictly prohibited Privacy. 

bottom of page