আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন শেখ সাদী খান।
- MUSIC BANGLA
- May 22, 2017
- 2 min read
কথা শব্দ অক্ষরকে অতি নিপুণ অন্তরঙ্গ ছোঁয়ায়, অনেক যত্নশীল ভালোবাসায়, হৃদয়ের প্রেম বিলিয়ে যারা সঙ্গীতে পরিণত করেন তারা সুরকার। শ্রদ্ধেয় শেখ সাদী খান, এদেশের আধুনিক গানের পুরোধা পুরুষ। যিনি নিজ হাতে সাজিয়েছেন শ্রুতিমধুর সুরের বাগান। ‘হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে’, ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’, ‘ভালোবাসলেই ঘরবাঁধা যায়না’, ‘তুমি রোজ বিকেলে’, ‘আমি চিরকাল প্রেমের কাঙ্গাল’, ‘চন্দ্রসূর্য সবই আছে আগের মত’, সহ অসংখ্য কালজয়ী গানের সুরস্রষ্টা শেখ সাদী খান। তিনি সারাজীবন শুদ্ধ সঙ্গীত এদেশের মানুষকে উপহার দিয়েছেন। আজ এই কিংবদন্তী সঙ্গীত পরিচালকের শুভ জন্মদিন। ১৯৫০ সালের ৩ মার্চ তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সঙ্গীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করার কারনে তিনি সুরের সাথেই বেড়ে উঠেন। সঙ্গীত সাধনায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন এই গুনী সুরকার।
শেখ সাদী খান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিবপুর গ্রামের এক সঙ্গীত সমৃদ্ধশালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা উপমহাদেশের বিখ্যাত সুর সাধক ওস্তাদ আয়াত আলী খান। সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ তার জ্যাঠা। প্রথম সঙ্গীতের তালিম নেন বাবার কাছ থেকে। তার বাবার কাছ থেকেই তবলা ও তারপর বেহালা শেখেন। তার শৈশব কাটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লায়। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশুনার শুরু। ঢাকার ধানমন্ডি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করেন। এরপর আইমিউজ ও বিমিউজ করেন ঢাকা সঙ্গীত মহাবিদ্যালয় থেকে। ১৯৬৩ সালে মেজভাই সরোদ বাদক ওস্তাদ বাহাদুর খানের সাথে ভারতে যান বেহালায় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শেখার জন্য। তিন বছর তার অধীনে তালিম নিয়ে ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
শেখ সাদী খান ১৯৬৫ সালে রেডিও পাকিস্তানে বেহালা বাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৮ সালে বেহালা বাদক হিসেবে তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্ত হন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের সঙ্গে। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে বাংলাদেশ বেতারে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৭ সালের মার্চে প্রধান সঙ্গীত প্রযোজক হিসেবে বাংলাদেশ বেতার থেকে অবসর নেন।
শেখ সাদী খান সত্তরের দশকে সঙ্গীত পরিচালক খন্দকার নুরুল আলমের সহকারী হিসেবে চলচ্চিত্রে পদার্পণ করেন। ১৯৭৭ সালে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে সারাদেশে খ্যাতি লাভ করেন। প্রথম চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করার সুযোগ পান ১৯৮০ সালে আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত এখনই সময় চলচ্চিত্রে। এ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে বাচসাস পুরস্কার পান। তিনি মান্না দে, আশা ভোঁসলে, সাবিনা ইয়াসমিন, এন্ড্রু কিশোর, রুনা লায়লা সহ দেশী বিদেশী অনেক শিল্পীর সাথে কাজ করেন।
শেখ সাদী খানের স্ত্রী রওশন আরা বেগম মারা গেছেন। তাদের একমাত্র ছেলে রওনাক ফেরদৌস খান জোনাক ও পুত্রবধু শবনম শারমিন লন্ডনে থাকে। মেয়ে সাগুফতা জাবীন নূপুর এইচএসবিসি ব্যাংকে চাকরি করেন ও জামাতা জাহিদুর রহমান ইস্টার্ন ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট।
সংগীত সাধনাতেই গুণী এই মানুষটি পার করেছেন জীবনের ৫৭টি বছর। এ সব কিছু মিলিয়ে নিভৃতচারী এই সংগীত পরিচালককে ‘হিউম্যান রাইটস্ অ্যাওয়ার্ড’ আজীবন সম্মাননা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটি।
আগামী ২৩ মে মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর শাহবাগস্থ কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান মিলনায়তনে তাকে এই সম্মাননা প্রদান করা হবে। সম্মাননা প্রদান করবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা। এসময় আরো উপস্থিত থাকবেন সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা, সংসদ সদস্য অ্যাড. সানজিদা খানম, সংসদ সদস্য হাজী রহিমুল্লাহ, বিচারপতি সিকদার মকবুল হক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা অ্যাড. ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন প্রমুখ।
বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান এম. ইব্রাহিম পাটোয়ারী বলেন, সোসাইটির বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য গুণীজনদের ‘হিউম্যান রাইটস্ অ্যাওয়ার্ড’ দেয়া হবে। এ বছর সুরকার ও সংগীত পরিচালক শেখ সাদী খানকে আজীবন সম্মাননা দেয়া হবে। তার মতো গুণী মানুষকে সম্মান জানানোর সুযোগ পেয়ে আমরা গর্বিত।
Comments