আপনার কোরবানির খরচের একটি অংশ বানভাসিদের সাহায্যার্থে ব্যয় করুন।
চিত্র : গত শুক্রবার একদল উদ্যোমী গণমাধ্যমকর্মী সিরাজগঞ্জের দুর্গম চর এলাকায় বানভাসি নিরন্ন মানুষের পাশে দাড়ায়।
বন্যায় তলিয়ে গেছে পুরো দেশ, প্লাবিত হয়েছে উত্তরাঞ্চলের গ্রামের পর গ্রাম। আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হচ্ছে বানভাসি মানুষের কান্না কষ্ট দুর্ভোগের আহাজারিতে। সামনে কোরবানির ঈদ। আমরা যে যার মত করে, সামর্থ অনুযায়ী কোরবানি দিয়ে থাকি। অনেকেই আছেন যারা প্রয়োজন ও কোরবানির নিয়মের বাইরে গিয়েও দেদার খরচ করেন কোরবানির পেছনে। তারা বলতেই পারেন আমাদের টাকা আছে, আমরা খরচ করবো।
আমরা কি এবার একটু ভিন্নভাবে ভাবতে পারি না ? যতটুকু ধর্মীয় মতে প্রয়োজন, কোরবানির জন্য ততটুকু খরচ করে বাকি টাকাটা বন্যা আক্রান্তদের মাঝে কি বিলিয়ে দিতে পারি না ? এতে অনেক মানুষ বাঁচবে, মানুষ বিপদে জনগণের সহায়তা পাবে, সবাইকে নিয়ে আমরা ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারবো। এতে আল্লাহ খুশিই হবেন।
আমাদের অপরিমিত ব্যয় কমিয়ে এই টাকাটা বানভাসি মানুষের জন্য খরচ করি। দেশের কোটি মানুষ যেখানে পানিবন্দী হয়ে গৃহহারা হয়ে যাচ্ছে, বাচ্চারা অভুক্ত থাকছে, তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভেসে যাচ্ছে, কৃষকের গবাদি পশু ও ফসল তলিয়ে যাচ্ছে সেখানে প্রয়োজনের বাইরে শুধু সমাজ বা আনুষ্ঠানিকতার কারণে আমরা কি সেভাবে উৎসব পালন করতে পারি ? না করা উচিৎ ?
দুর্গত জেলাগুলোতে কয়েক লাখ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় খাদ্য সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সংকট এখানেই শেষ, ভাবার কোন কারণ নেই। ইতোমধ্যেই ডায়রিয়া, জ্বর, পায়ের পাতায় ঘা জাতিয় পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হাজারো মানুষ। খাদ্যের অভাব সুপেয় পানির অভাব, ঘরে বন্যার পানি ঢুকে তছনছ জনজীবন। কিছুদিন আগে ঘর ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু নিয়ে চিরায়ত গৃহস্তের সুখ মাখা যে ছবিটি আমাদের মানস পটে ভেসে উঠত আজ সেখানে কেবলই হাহাকার কেবলই কান্না। বাঁধের উপর কিংবা সামান্য উঁচু কোন জায়গায় নিজের শখের পালিত গরু ছাগল হাঁস মুরগীর সাথে ভাগাভাগি করে কোন রকমে একটু বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। অনেকে আবার তাও পারছেন না, অসহায় ভাবে চোখের সামনে পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছে দীর্ঘ দিনের স্বপ্নে লালিত হাঁস মুরগী গবাদি পশু আপনার ভবিষ্যৎ। কখনও বা কোন অভাগা মায়ের আদরের ধন বুকের মাণিক। নির্লিপ্ততায় ভাবলেশহীন তাকিয়ে থাকা ছাড়া আসলে বেশী কিছু করারও নেই তাঁদের। আর কেবল অপেক্ষার প্রহর গুণা, বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম খাবার, ওষুধ, সুপেয় পানি, কবে কি করে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে এই পানি বন্দী দুঃসহ জীবন থেকে সেই প্রত্যাশায় বেচে আছেন তারা।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন শেষে অর্থমন্ত্রী তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলেছিলেন, ''আমাদের দেশে এখন হত দরিদ্র মানুষ নেই বললেই চলে''। সঙ্গত কারণেই কথাটি সবার মনে গেঁথেছিল। বেশ কয়েক বছর ধরেই মানুষের জীবন মান উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছিল। প্রায় সবার হাতেই এক বা একাধিক মোবাইল ফোন, ঘরে ঘরে টেলিভিশন, ফ্রিজ, ল্যাপটপ পুরো বাংলাদেশের চালচিত্রটাই যেন বদলে যেতে শুরু করেছিল।
সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ভাবে এবারের বন্যায় সমস্ত হিসেব নিকেশ পাল্টে দিয়ে আবার খানিকটা পিছিয়ে পড়তে হতে পারে। যদিও সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মহল থেকে বার বার বলা হচ্ছে প্রচুর খাদ্য মজুদ আছে, কিন্তু তবুও শঙ্কা রয়েই যায় কেননা বেশ কিছুদিন হল বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্স কমেছে,রপ্তানি আয় কমেছে কিন্তু আমদানির উপর নির্ভরতা বেড়েছে অনেক বেশী। সারা দেশে অবকাঠামো প্রভূত উন্নয়নের জন্য রাস্তা-ঘাট, ব্রিজের গুণগত মান আশানুরূপ না হওয়ায় এই বন্যা কেবল দারিদ্র কৃষক, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকেই নয় পুরো দেশের অর্থনীতির উপর ঋণাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
অল্প কিছুদিন পরেই মুসলমানদের আত্মত্যাগের নিদর্শন স্বরূপ '' পবিত্র ঈদ উল আযহা''। স্বাধীনতার পর পর চুয়াত্তুরের মন্বন্তর বা দুর্ভিক্ষ দেখেছি, ৮৮র বন্যায় ঘাস চিবিয়ে মানুষের বেঁচে থাকাও দেখেছি কিন্তু ২০১৭ তে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে, ব্যক্তি পর্যায়ে ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে অনেক । তাই কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে বানভাসী মানুষদের সাহায্যে সবাই যদি একটু এগিয়ে আসে তাহলেই মোকাবেলা করা সম্ভব।
কোরবানি মানে আত্মত্যাগ। কোরবানিতে পশু জবাই করার মাধ্যমে মনের পশুত্বকে বর্জন করা এবং পয়সা খরচ করে স্বার্থ ত্যাগ করে অন্যদের মাঝে বিতরণ করা সামর্থবান প্রতিটি মুমিন মুসলমানের জন্য ওয়াজিব। অর্থাৎ জানের বদলে জান, সদকা। কিন্তু একজনের জান বাঁচানোটাও তো ফরজ, অতএব আসুন আমরা কোরবানিতে কিছুটা খরচ কমিয়ে অন্তত একটি জান বাঁচানোর চেষ্টা করি। বানভাসি মানুষ গুলোর মুখে খানিকটা খাবার অন্তত তুলে দেই। কোরবানিতে আমরা অনেক দামী গরু উট কিনি। কেউ কেউ অধিক পশু লাখ লাখ টাকায় কিনি । আসুন এবার কোরবানিতে সাশ্রয়ী হই, আর আল্লাহর সৃষ্টি আশরাফুল মখলুকাত মানুষকে এই বিপদে সাহায্য করি।
আমরা আল্লাহর ওয়াসতে কোরবানির খরচ কমিয়ে বানভাসি মানুষের পাশে দাড়াই।
Comments