বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম স্মরনে শ্রদ্ধাঞ্জলি!
আজ ১২ সেপ্টেম্বর বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের মৃত্যু দিবস। দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগে ২০০৯ সালের এই দিনে তিনি সিলেটের নুরজাহান জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। শাহ আব্দুল করিমের ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁকে উজান ধল গ্রামে তার স্ত্রীর কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।
বাউল আব্দুল করিম বলে জীবন লীলা সাঙ্গ হলে শুয়ে থাকব মায়ের কোলে তাপ অনুতাপ ভুলে। বাউল গানের জীবন্ত কিংবদন্তী শাহ আবদুল করিমের জন্ম হয় ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯১৬ সালে সুনামগঞ্জ জেলার কালনী নদীর তীরে দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের ধল আশ্রম গ্রামে। তাঁর বাবার নাম ইব্রাহিম আলী ও মায়ের নাম নাইওরজান বিবি। স্ত্রীর নাম ছিল আফতাবুন্নেসা, যাকে তিনি আদর করে ডাকতেন সরলা। আদি বাসস্থান ধল আশ্রম গ্রামে হলেও ১৯৫৭ সালে তাঁরা ধল আশ্রমের পার্শ্ববর্তী পাড়া উজান ধল গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। দিনমজুর ইব্রাহিম আলীর ৬ সন্তানের মধ্যে করিমই হচ্ছেন একমাত্র ছেলে। শাহ্ আব্দুল করিমের পিতা ইব্রাহিম আলী ১০৩ বছর বয়সে ১৯৮৪ সালে মারা যান।
১৯৮৮ সালে ৮০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন মা নাইওরজান বিবি।
কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি কেমনে রাখবি তোর মন কেমনে রাখবি তোর মন আমার আপন ঘরে বাধিরে বন্ধু —- ছেড়ে যাইবা যদি পাড়া পড়শী বাদী আমার বাদী কালনী নদী মরম জ্বালা সইতে নারি দিবা নিশি কাঁদিরে বন্ধু —- ছেড়ে যাইবা যদি কারে কী বলিব আমি নিজেই অপরাধী কেঁদে কেঁদে চোখের জলে কেঁদে কেঁদে চোখের জলে বহাইলাম নদী রে বন্ধু —- ছেড়ে যাইবা যদি পাগল আব্দুল করিম বলে হলো এ কী ব্যাধি তুমি বিনে এ ভুবনে তুমি বিনে এ ভুবনে কে আছে আছে ঔষধি রে বন্ধু —- ছেড়ে যাইবা যদি দিনমজুর পরিবারে জন্ম হওয়ায় অভাবের মধ্যেই তিনি বেড়ে উঠেন এবং সারা জীবন অভাবের ভেতরেই বাস করেছেন। এ কারণেই স্কুল-কলেজের শিক্ষা লাভের সুযোগ তাঁর হয়নি। তবুও যে শিক্ষায় তিনি শিক্ষিত হয়েছেন তা আমরা খুব কম জনেই পেরেছি - সাধারণ মানুষকে ভালবাসার শিক্ষা। রাখালের চাকরি নিয়ে সারাদিন মাঠে গরু চড়াতেন আর গান গাইতেন। এই গানই এক সময় তাঁকে অসামান্য করে তোললো। রাখালের কাজ করেই কাটিয়েছেন কৈশোর ও যৌবন কাল। আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
আমরা আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম হিন্দু বাড়িতে যাত্রা গান হইত নিমন্ত্রণ দিত আমরা যাইতাম জারি গান, বাউল গান আনন্দের তুফান গাইয়া সারি গান নৌকা দৌড়াইতাম বর্ষা যখন হইত, গাজির গান আইত, রংগে ঢংগে গাইত আনন্দ পাইতাম কে হবে মেম্বার, কে বা সরকার আমরা কি তার খবরও লইতাম হায়রে আমরা কি তার খবরও লইতাম আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম করি যে ভাবনা সেই দিন আর পাব নাহ ছিল বাসনা সুখি হইতাম দিন হইতে দিন আসে যে কঠিন করিম দীনহীন কোন পথে যাইতাম আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম…. ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত অক্ষরজ্ঞান ছিল না তাঁর, ১৫ বছর বয়সে গ্রামের নৈশ বিদ্যালয়ে মাত্র ৮দিন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেন তিনি। ৮ দিন চালু থাকার পর সে বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়। অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন কাউকে দেখলেই বই মেলে জানতে চাইতেন অক্ষরগুলোর নাম। গরু রাখার কঞ্চি দিয়েই মাটিতে লিখতেন অ, আ, ক, খ প্রভৃতি। শৈশব থেকেই একতারা তাঁর সঙ্গী ছিল। কৃষিশ্রমে জীবন কেটেছে সাদাসিধে ভাবে। বাউল ও আধ্যাত্মিক গানের তালিম নেন কমর উদ্দিন, সাধক রশিদ উদ্দিন, শাহ ইব্রাহীম মোস্তান বকশ এর কাছ থেকে। দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে বাউল ও আধ্যাত্মিক গানের পাশাপাশি ভাটিয়ালি গানেও বিচরণ ছিল তাঁর। লালন শাহ, পাঞ্জু শাহ ও দুদ্দু শাহ এর দর্শনে অনুপ্রাণিত ছিলেন আব্দুল করিম।
গাড়ি চলে না চলে না গাড়ি চলে না চলে না, চলে না রে, গাড়ি চলে না। চড়িয়া মানব গাড়ি যাইতেছিলাম বন্ধুর বাড়ি মধ্য পথে ঠেকলো গাড়ি উপায়-বুদ্ধি মেলে না।। মহাজনে যতন করে তেল দিয়াছে টাংকি ভরে গাড়ি চালায় মন ড্রাইভারে ভালো-মন্দ বোঝে না।। ইঞ্জিনে ময়লা জমেছে পার্টসগুলো ক্ষয় হয়েছে ডাইনামো বিকল হয়েছে হেডলাইট দুইটা জ্বলে না।। ইঞ্জিনে ব্যতিক্রম করে কন্ডিশন ভালো নয় রে কখন জানি ব্রেক ফেল করে ঘটায় কোন্ দুর্ঘটনা।। আবুল করিম ভাবছে এইবার কোন্ দিন গাড়ি কি করবে আর সামনে বিষম অন্ধকার করতেছে তাই ভাবনা।। ১৯৫৪ সারে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে বৃহত্তর সিলেটে গণসংযোগে আসতেন তখন তাদের সফরসঙ্গী হতেন বাউল আব্দুল করিম। ১৯৬৯ সালে সুনামগঞ্জের জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠে করিমের গণসঙ্গীত শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে শেখ মুজিব মাইকে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, শেখ মুজিব বেঁচে থাকলে করিম ভাইও বেঁচে থাকবেন, করিম ভাই যেখানে শেখ মুজিব সেখানে। ১৯৭০ সারের নির্বাচনে শেখ মুজিবের ভাটি অঞ্চল নির্বাচনী প্রচারাভিযানে একমাত্র মধ্যমনি ছিলেন শাহ আব্দুল করিম। ২০০১ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউজে এক কর্মী সভায় বলেছিলেন, সুনামগঞ্জে আওয়ামিলীগের প্রতিষ্ঠাতা শাহ আব্দুল করিমের ভূমিকা অন্যতম। শাহ আব্দুল করিম ৫৪’র নির্বাচন, ৬৯'র গণঅভ্যুত্থান, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ, ৯০'র গণ আন্দোলনসহ প্রতিটি পর্যায়ে স্বরচিত গনসঙ্গীত পরিবেশন করে জনতাকে দেশ মার্তৃকার টানে উদ্বুদ্ধ করতে চেষ্টা করেছেন। তাঁর গণসঙ্গীতে মুগ্ধ হয়ে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তাঁর পিটে হাত রেখে বলেছিলেন- বেটা, গানের একাগ্রতা ছাড়িও না, তুমি একদিন গণ মানুষের শিল্পী হবে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গণসঙ্গীত শুনে একশ পঁচাশি টাকা দেন, শেখ মুজিব ১১ টাকা দিয়ে বলেন - তোমার মতো শিল্পীকে উপযুক্ত মর্যাদা দেয়া হবে।
আমি কুলহারা কলঙ্কিনী আমারে কেউ ছুঁইয়ো না গো সজনী আমারে কেউ ছুঁইয়ো না গো সজনী প্রেম করে প্রাণবন্ধুর সনে যে দুঃখ পেয়েছি মনে আমার কেঁদে যায় দিন-রজনী আমারে কেউ ছুঁইয়ো না গো সজনী আমি কুলহারা কলঙ্কিনী আমারে কেউ ছুঁইয়ো না গো সজনী প্রেম করা যে স্বর্গের খেলা বিচ্ছেদে হয় নরক জ্বালা আমার মন জানে, আমি জানি আমারে কেউ ছুঁইয়ো না গো সজনী আমি কুলহারা কলঙ্কিনী আমারে কেউ ছুঁইয়ো না গো সজনী সখি আমায় উপায় বলনা? এ জীবনে দূর হলনা বাউল করিমের পেরেশানি আমারে কেউ ছুঁইয়ো না গো সজনী আমি কুলহারা কলঙ্কিনী আমারে কেউ ছুঁইয়ো না গো সজনী স্বল্পশিক্ষিত বাউল শাহ আব্দুল করিম এ পর্যন্ত প্রায় দেড় সহস্রাধিক গান লিখেছেন এবং সুরারোপ করেছেন। বাংলা একাডেমীর উদ্যোগে তাঁর ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। কয়েক বছর আগেও এসব গান শুধুমাত্র ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় ছিল। সাম্প্রতিককালে এ সময়ের বেশ কয়েকজন শিল্পী বাউল শাহ আব্দুল করিমের গানগুলো নতুন করে গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলে তিনি দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। আব্দুল করিম একজন বাউল হিসেবে শুধু দেহতত্ত্ব, মুর্শিদি ও মারফতি গানই রচনা করেননি, চারণ কবি হিসেবে মানুষের সুখ-দুঃখ, অভাব-অভিযোগ, অত্যাচার ও শোষন-নির্যাতন নিয়েও গান রচনা করেছেন। বাউল শাহ আবদুল করিমের এ পর্যন্ত ৬টি গানের বই প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলো হলো- আফতাব সংগীত, গণ সংগীত, কালনীর ঢেউ, ভাটির চিঠি, কালনীর কূলে এবং দোলমেলা। ১৯৪৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় আফতাব সংগীত, ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত হয় গণ সংগীত, ১৯৮১ সালে কালনীর ঢেউ, ১৯৯০ সালে দোলমেলা, ১৯৯৮ সালে ভাটির চিঠি, ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয় শাহ আব্দুল করিম রচনা সমগ্র। ২০০০ সালে তিনি কথাসাহিত্যিক আবদুর রউফ চৌধুরী পদক পান। ২০০১ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। তাঁর পাওয়া অন্যান্য পদক ও সম্মাননার মধ্যে রয়েছে- রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পদক ২০০০, আইডিয়া সংবর্ধনা স্মারক ২০০২, লেবাক অ্যাওয়ার্ড ২০০৩, মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা ২০০৪, অভিমত সম্মাননা ২০০৬, সিলেট সিটি কর্পোরেশন সম্মাননা ২০০৬। এছাড়া দ্বিতীয় সিটিসেল চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা এবং 'অটোবি'র আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন আব্দুল করিম। তিনি ৩ বার লন্ডন ভ্রমণ করেন। ১৯৬৪ ও ১৯৮৫ সালে ইস্টার্ন ফিল্ম ক্লাবের আমন্ত্রণে ছুটে যান লন্ডনে। বাউল গান গেয়ে মুগ্ধ করেন শ্রোতাদের। সেখানে উপার্জিত টাকা দিয়ে দেশে এসে সামান্য কিছু ধানি জমি কেনেন তিনি। ওই জমি বিক্রি করেই তার গানের বই 'কালনীর ঢেউ' ছাপার খরচ মেটান। তিনি ২০০৭ সালে তার ছেলে শাহ নূরজালালকে নিয়ে লন্ডনে পাড়ি জমান। বৃদ্ধ বয়সে দীর্ঘ ভ্রমণ সহ্য করতে না পেরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে লন্ডনের রয়েল হসপিটালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ একমাস চিকিৎসা শেষে তিনি দেশে ফিরে আসেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পথে পথে ঘুরে গান গেয়ে গণজাগরণ সংগীতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন তিনি। জীবনবাদী এই সাধক শাহ আবদুল করিম বাংলার অন্যান্য সাধকদের থেকে ছিলেন একেবারে ব্যতিক্রম। তিনি সাধনসঙ্গীতের পাশাপাশি রচনা করেছিলেন জনমানুষের অধিকার আদায়ের গান ‘গণসঙ্গীত।’ জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও তাঁর তীক্ষ্ণ রসবোধ কমেনি একটুও-
- গান তৈরী করেছেন নিজের বার্ধক্যকে উপহাস করে - আগের বাহাদুরি এখন গেল কই চলিতে চরণ চলেনা দিনে দিনে অবশ হই। উত্তর প্রজন্মের কণ্ঠে করিমের মারফতি, মুর্শিদি, দেহতত্ব, বিরহ-বিচ্ছেদ এবং গণসংগীত সফল তালে ধ্বনিত হচ্ছে সিলেট, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও আসাম ত্রিপুরা অঞ্চলে। শাহ আবদুল করিমের জনপ্রিয় কিছু গান: বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে; আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম; গাড়ি চলে না; আমি কূলহারা কলঙ্কিনী; কেমনে ভুলিবো আমি বাঁচি না তারে ছাড়া; কোন মেস্তরি নাও বানাইছে; কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু; বসন্ত বাতাসে সইগো; আইলায় না আইলায় নারে বন্ধু; মহাজনে বানাইয়াছে ময়ুরপংখী নাও; আমি তোমার কলের গাড়ি; সখী কুঞ্জ সাজাও গো; জিজ্ঞাস করি তোমার কাছে; মানুষ হয়ে তালাশ করলে; আমি বাংলা মায়ের ছেলে; রঙ এর দুনিয়া তরে চায় না।
কোন মেস্তরি নাও বানাইছে/ঝিলমিল ঝিলমিল করেরে ময়ূরপঙ্খী নাও (দোহার)
কোন মেস্তরি নাও বানাইলো এমন দেখা যায় ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায় ।। চন্দ্র-সূর্য বান্ধা আছে নাওয়েরই আগায় দূরবীনে দেখিয়া পথ মাঝি-মাল্লায় বায় ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায় ।। রঙ-বেরঙের যতো নৌকা ভবের তলায় আয় রঙ-বেরঙের সারি গাইয়া ভাটি বাইয়া যায় ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায় ।। জারি গায়ে ভাটি বায়ে করতাল বাজায় মদন মাঝি বড়ই পাজি কতো নাও ডুবায় ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায় ।। হারা-জিতা-ছুবের বেলা কার পানে কে চায় পাছের মাঝি হাল ধরিয়ো ঈমানের বৈঠায় ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায় ।। বাউল আব্দুল করিম বলে বুঝে উঠা দায় কোথা হইতে আসে নৌকা কোথায় চলে যায় ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায় ।। শাহ আব্দুল করিম - আমি গান গাইতে পারি না
গানে মিলে প্রাণের সন্ধান, সেই গান গাওয়া হলনা আমি গান গাইতে পারি না জানিনা ভাব-ক্রান্তি গাইতে পারিনা সেই গান যেই গান গাইলে মিলে আঁধারে আলোর সন্ধান গাইলেন লালন, রাধা রমণ, হাসন রাজা দেওয়ানা আমি গান গাইতে পারি না বাউল মুকুন্দ দাস গেয়েছেন দেশেরই গান বিদ্রোহী নজরুলের গানে পাইলেন মুক্তির সন্ধান ভাবের গান গাইতে গেলে অভাবে ভাব জাগেনা আমি গান গাইতে পারি না আরকুম শাহ্, সিতালং ফকির বলেছেন 'মারফতি গাও' সৈয়দ শাহ্ নূরের গানে শুকনাতে দৌড়াইলেন নাও করিম বলে প্রাণ খুলে গাও গাইতে যাদের বাসনা আমি গান গাইতে পারি না তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো, আজ আমার প্রাণনাথ আসিতেও পারে
তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো আজ আমার প্রাণনাথ আসিতে পারে বসন্ত সময়ে কুকিল ডাকে কুহু সুরে যৌবন বসন্তে মন থাকতে চায়না ঘরে তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো আজ আমার প্রাণনাথ আসিতে পারে আতর গোলাপ সোয়া-চন্দন আনো যতন করে সাজাও গো ফুলের বিছানা পবিত্র অন্তরে তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো আজ আমার প্রাণনাথ আসিতে পারে নয়ন যদি ভুলে সইগো মন ভুলেনা তারে এগো প্রেমের আগুন হইয়া দ্বিগুণ দিনে-দিনে বাড়ে তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো আজ আমার প্রাণনাথ আসিতে পারে আসে যদি প্রাণবন্ধু দুঃখ যাবে দূরে আমারে যেন ছেড়ে যায় না প্রভুক দিও তারে তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো আজ আমার প্রাণনাথ আসিতে পারে আসিবে আসিবে বলে ভরসা অন্তরে এ করিম কয় পাই যদি আর ছাড়িবো না তারে তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো আজ আমার প্রাণনাথ আসিতে পারে ... মন মিলে মানুষ মিলে সময় মিলে না... পিরিতে শান্তি মিলে না। পিরিত করে মন উল্লাসে, ঠেকলো যে জন ভালোবেসে কালনাগে দংশিলে বিষে মন্ত্র মানে না... ভাবিলে কি হবে গো, যা হইবার তা হইয়া গেছে
ভাবিলে কি হবে গো যা হইবার তা হইয়া গেছে জাতি কুল যৌবন দিয়াছি প্রাণ যাবে তার কাছে গো যা হইবার তা হইয়া গেছে কালার সনে প্রেম করিয়া কাল-নাগে দংশিছে ঝাইড়া বিষ নামাইতে পারে এমন কি কেউ আছে গো যা হইবার তা হইয়া গেছে পিরিত পিরিত সবাই বলে পিরিত যে কইরাছে পিরিত কইরা জ্বইলা-পুইড়া কতজন যে মরছে গো যা হইবার তা হইয়া গেছে আগুনের তুলনা হয়না প্রেম আগুনের কাছে নিভাইলে নিভেনা আগুন কি কইরা প্রাণ বাঁচে গো যা হইবার তা হইয়া গেছে বলে বলুক লোকে মন্দ কুলের ভয় কি আছে আব্দুল করিম জিতে-মরা বন্ধু পাইলে বাঁচে গো আসি বলে গেল বন্ধু আইল না
আসি বলে গেল বন্ধু আইল না যাইবার কালে সোনা বন্ধ নয়ন তুলে চাইলো না আসবে বলে আসায় রইলাম আশাতে নিরাশা হইলাম বাটাতে পান সাজাই থুইলাম বন্ধু এসে খাইলো না আসি বলে গেলো বন্ধু আইল না ভব সাগরের নাইয়া
ভব সাগরের নাইয়া মিছা গৌরব করো রে পরার ধন লইয়া একদিন তুমি যাইতে হবে এই সমস্থ থইয়া রে পরার ধন লইয়া ভব সাগরের নাইয়া মিছা গৌরব করো রে পরার ধন লইয়া পরার ঘরে বসত করো পরার অধীন হইয়া আপনি মরিয়া যাইবায় এই ভব ছাড়িয়া রে পরার ধন লইয়া ভব সাগরের নাইয়া মিছা গৌরব করো রে পরার ধন লইয়া কি ধন লইয়া আইলায় ভবে? কি ধন যাইবায় লইয়া? ভবে এসে ভুলে গেলায় ভবের মায়া পাইয়া রে পরার ধন লইয়া ভব সাগরের নাইয়া মিছা গৌরব করো রে পরার ধন লইয়া বাউল আব্দুল করিম বলে মনেতে ভাবিয়া কালসাপিনী ধরতে গেলাম মন্ত্র না জানিয়া রে পরার ধন লইয়া ভব সাগরের নাইয়া মিছা গৌরব করো রে পরার ধন লইয়া ... কেমনে ভুলিব আমি, বাঁচি না তারে ছাড়া, আমি ফুল, বন্ধু ফুলের ভ্রমরা
আমি ফুল বন্ধু ফুলের ভ্রমরা কেমনে ভুলিব আমি বাঁচি না তারে ছাড়া না আসিলে কালো ভ্রমর কে হবে যৌবনের দোসর? সে বিনে মোর শূন্য বাসর আমি জিয়ন্তে মরা কুল-মানের আশা ছেড়ে মন-প্রাণ দিয়াছি যারে এখন সে কাঁদায় আমারে, এই কী তার প্রেমধারা ? শুইলে স্বপনে দেখি ঘুম ভাঙ্গিলে সবই ফাঁকি কত ভাবে তারে ডাকি তবু সে দেয় না সাড়া আশা পথে চেয়ে থাকি তারে পাইলে হব সুখি এ করিমের মরণ বাকী, রইলো সে যে অধরা আমার বন্ধুরে কই পাবো সখিগো
বন্ধুরে কই পাবো সখি গো সখি আমারে বলো না? আমার বন্ধু বিনে পাগল মনে বুঝাইলে বুঝেনা সাধে সাধে ঠেকছি ফাঁদে গো সখি দিলাম ষোল আনা আমার প্রাণ-পাখি উড়ে যেতে চায় আর ধৈর্য মানে না আমার বন্ধু বিনে পাগল মনে বুঝাইলে বুঝেনা কী আগুন জ্বালাইলো বন্ধে গো সখি নিভাইলে নিভে না জল ঢালিলে দ্বিগুণ জ্বলে উপায় কি বলো না? আমার বন্ধু বিনে পাগল মনে বুঝাইলে বুঝেনা বাউল আব্দুল করিম বলে সখি অন্তরের বেদনা সোনার বরণ রূপের কিরণ না দেখলে বাঁচিনা বন্ধুরে কই পাবো সখি গো সখি আমারে বলো না? আমার বন্ধু বিনে পাগল মনে বুঝাইলে বুঝেনা ... আমি তোমার কলের গাড়ি, তুমি হও ড্রাইভার
তোমার ইচ্ছায় চলে গাড়ি, দোষ কেন পড়ে আমার চলে গাড়ি হাওয়ারই ভারে, আজব কল গাড়ির ভিতরে নিচ দিকেতে চাকা ঘুরে, সামনে বাতি জ্বলে না আমি তোমার কলের গাড়ি, তুমি হও ড্রাইভা কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি কেমনে রাখবি তোর মন কেমনে রাখবি তোর মন আমার আপন ঘরে বাধিরে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি পাড়া পড়শী বাদী আমার বাদী কালনী নদী মরম জ্বালা সইতে নারি দিবা নিশি কাঁদিরে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি কারে কী বলিব আমি নিজেই অপরাধী কেঁদে কেঁদে চোখের জলে বহাইলাম নদী রে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি পাগল আব্দুল করিম বলে হলো এ কী ব্যাধি তুমি বিনে এ ভুবনে কে আছে ঔষধি রে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি
কোন মেস্তরি নাও বানাইছে/ঝিলমিল ঝিলমিল করেরে ময়ূরপঙ্খী নাও (দলছুট)
কোন মেস্তরি নাও বানাইলো এমন দেখা যায় ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায় ।। চন্দ্র-সূর্য বান্ধা আছে নাওয়েরই আগায় দূরবীনে দেখিয়া পথ মাঝি-মাল্লায় বায় ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায় ।। রঙ-বেরঙের যতো নৌকা ভবের তলায় আয় রঙ-বেরঙের সারি গাইয়া ভাটি বাইয়া যায় ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায় ।। জারি গায়ে ভাটি বায়ে করতাল বাজায় মদন মাঝি বড়ই পাজি কতো নাও ডুবায় ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায় ।। হারা-জিতা-ছুবের বেলা কার পানে কে চায় পাছের মাঝি হাল ধরিয়ো ঈমানের বৈঠায় ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায় ।। বাউল আব্দুল করিম বলে বুঝে উঠা দায় কোথা হইতে আসে নৌকা কোথায় চলে যায় ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায় ।। মুর্শিদ ধন হে কেমনে
দেখা দেওনা কাছে নেওনা আর কতো থাকি দূরে কেমনে চিনিব তোমারে মুর্শিদ ধন হে কেমনে চিনিব তোমারে। মায়ার জালে বন্দি হইয়া আর কত দিন থাকিব মনে ভাবি সব ছাড়িয়া তোমাকে খুজে নেব।। আশা করি আলো পাবো ডুবে যাই অন্ধকারে কেমনে চিনিব তোমারে মুর্শিদ ধন হে কেমনে চিনিব তেমোরে তন্ত্র মন্ত্র করে দেখি তার ভেতরে তুমি নাই শাস্ত্র গ্রন্থ পড়ি যতো আরো দূরে সরে যাই কোন সাগরে খেলতেছো লাই ভাবতেছি তাই অন্তরে কেমনে চিনিব তোমারে মুর্শিদ ধন হে কেমনে চিনিব তোমারে। পাগল আব্দুল করিম বলে দয়া করো আমারে নতশিরে করজোড়ে আছি তোমার দরবারে ভক্তের অধীন হও চিরদিন থাকো ভক্তের অন্তরে কেমনে চিনিব তোমারে মুর্শিদ ধনহে কেমনে চিনিব তোমারে।
মিনতি করি রে সোনা বন্ধু ভুইলো না আমারে
তুমি বিনে আকুল পরাণ থাকতে চায় না ঘরে রে সোনা বন্ধু ভুইলো না আমারে আমি এই মিনতি করি রে ...এই মিনতি করি রে সোনা বন্ধু ভুইলো না আমারে সাগরে ভাসাইয়া কুল-মান তোমারে সঁপিয়া দিলাম আমার দেহ-মন-প্রাণ সর্বস্ব ধন করিলাম দান তোমার চরণের তরে সোনা বন্ধু ভুইলো না আমারে আমারে ছাড়িয়া যদি যাও প্রতিজ্ঞা করিয়া বলো আমার মাথা খাও তুমি যদি আমায় কান্দাও ...তুমি যদি আমায় কান্দাও তোমার কান্দন পরে রে সোনা বন্ধু ভুইলো না আমারে আমি এই মিনতি করি রে এই মিনতি করি রে সোনা বন্ধু ভুইলো না আমারে কুল-মান গেলে ক্ষতি নাই আমার তুমি বিনে প্রাণ বাঁচেনা কি করিব আর? তোমার প্রেম-সাগরে প্রেম-সাগরে তোমার করিম যেন ডুবে মরে সোনা বন্ধু ভুইলো না আমারে আমি এই মিনতি করি রে এই মিনতি করি রে সোনা বন্ধু ভুইলো না আমারে.....।।
Comentários