top of page

‘চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা, যদি না পড়ে ধরা’।


প্রবাদ আছে- ‘চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা, যদি না পড়ে ধরা’। কিন্তু চোরকে ডেকে নিয়ে চুরি কর্মের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত করার মতো ঘটনা আগে কখনো শুনেছি বলে ঠিক মনে করতে পারি না। কিন্তু সেটাই হতে চলেছে বাংলাদেশে।

একটি সংবাদ মাধ্যম মারফত জানতে পারলাম, ‘বৃহন্নলা’ চলচিত্রটি একাধারে সংলাপ, কাহিনী এবং শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র তিনটি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে। যে কাহিনীর জন্য মুরাদ পারভেজকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য পাচ্ছেন সেটি আদৌও তাঁর লেখা কিনা সেটা ক্ষতিয়ে দেখার দাবী রাখে।

গেল বছর ভারতের জয়পুর চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বৃহন্নলা’ পুরস্কৃত হলে ঘটনাটা সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের পরিবারের দৃষ্টিগোচর হয়। সেই সময় সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের কনিষ্ঠ পুত্র সাংবাদিক অমিতাভ সিরাজ The Times of India তে "Bangla director lifted father`s story: Mustafa Siraj`s son" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন লেখেন। এর পরেই পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রের প্রাণকেন্দ্র টালিগঞ্জে পাড়ায় বিতর্কের ঝড় ওঠে। যেসময় দুই বাংলার সিনেমাকে একই সুতোয় বাঁধার জন্য আপ্রাণ চেস্টা চালানো হচ্ছে সেই সময় বাংলাদেশের কোনো পরিচালকের এই নির্লজ্জ কাজকে বাংলাদেশের মানুষ কীভাবে দেখছে সেটা জানার জন্য তারা খুব উৎসুক হয়ে ওঠে। ভারতে প্রকাশিত সেই The Times of India এর কয়েক কপি বাংলাদেশেও উড়ে গিয়েছিলো। কিন্তু বৃহন্নলা সিনেমার নায়িকা, মুরাদ পারভেজের সহধর্মিনী সোহানা সাবার হস্তক্ষেপে তা মিডিয়ায় ধামাচাপা দেওয়া হয়। ফলে মুরাদের এই চুরির তথ্য থেকে যায় সকলের অগোচরে। এ ছাড়া মুরাদ পারভেজের প্রথম সিনেমা `চন্দ্র গ্রহণ`ও প্রয়াত লেখক সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের গল্প অবলম্বনে।


গতকাল সকালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া স্ট্যাডিজ বিভাগের করিডোরে বসে ছোট ভাই আনন্দ কুটুম (কলকাতার একটি ইন্সটিটিউটে ফিল্ম স্ট্যাডিজ নিয়ে পড়ছে) যখন কথাগুলো বলেছিলো, তখন ভাবতে সত্যি অবাক লেগেছিলো। এতটা ছোটো মনের অধিকারী হতে পারি আমরা! নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিলাম। তারপর আনন্দ কুটুমের ব্যক্তিগত উদ্যোগে গিয়েছিলাম লেখকের পার্ক সার্কাসের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে জানতে পারি আরো অদ্ভুত সব ঘটনা।

সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের মেয়ে নাইনা সিরাজ লম্বা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘বাবা বেঁচে থাকতেও বাংলাদেশের কেউ বাবাকে মূল্যায়ন করেনি। আজ অব্দি কেউ কখনো তার বাবার কোনো বই ঢাকা বইমেলায় নিয়ে যায়নি। কিন্তু বাবা বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ছিলেন প্রচণ্ড দুর্বল। তাই মুরাদ এসে যখন বাবার হাতে পায়ে ধরে, তখন বাবা তাকে চন্দ্র গ্রহণ সিনেমা করার অনুমতি দেয়। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পরে (২০১২) সে আর কখনোই আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। বাবার গল্প চুরি করে কেন সে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার মত সাহস দেখালো, সেটা ভাবলে আমি অবাক হই।’

অনেকটা অভিমানের স্বরেই লেখক কন্যা বলেন, ‘তোমরা কিছু মনে করো না ভাই। বাংলাদেশ বা বাংলাদেশী টপিকে কথা বলার মতো রুচি আমাদের আর নেই। নেহাতই তোমরা দূরদেশ থেকে এসেছ বলে তোমাদের সাথে আলাপ করছি। অন্যথায় বাংলাদেশী হিসেবে তোমার সাথে আমার আলাপ করার কোনো ইচ্ছা নাই।’

সকালে কথা বলতে গিয়ে কুটুম নিজেই বলে উঠলো, ‘একটি বিষয় ভেবে আমি খুব অবাক হয়েছি। যারা সিনেমা দেখে, সিনেমার অনুদান দেয়, সিনেমার সেন্সর করে, সিনেমার জন্য জাতীয় পুরস্কার দেয়- তারা কী বাংলা সাহিত্য পড়ে না? নাকি প্রটোকলের খাম আর ফাইলের তলায় বিবেক আজ হারিয়ে যেতে বসেছে?’

আনন্দ কুটুমের ভাষ্যমতে, ‘যারা মুস্তফা সিরাজের `গাছটি বলেছিল` গল্পটি পড়েছেন তাদের কাছে অন্তত পরিষ্কার সিনেমার নামকরণ (বৃহন্নলা) করাও হয়েছে গল্পের ভেতর থেকেই। শুধু মাত্র সিনেমার শেষে একটু পরিবর্তন দেখা যায়। তাও সেটা শিল্প নির্দেশক উত্তম গুহের পরামর্শে। গল্পের শেষে দেখা যায়- হিন্দু মুসলিম উভয়ে গাছটাকে কেন্দ্র করে দাঙ্গায় জড়িয়ে যায়। আমি যখন প্রথম স্ক্রিপ্ট হাতে পেয়েছিলাম সেখানেও এই একই দৃশ্য ছিলো। কিন্তু শ্যুটিং শুরু হওয়ার কয়েকদিন পরে উত্তম গুহ, পরিচালকে পরামর্শ দেন যে, ‘তুমি যদি শেষ দৃশ্যে দাঙ্গা দেখাও তা হলে সেন্সরে আটকে যাবে সিনেমাটা। কেননা শেষ পর্যন্ত সিনেমাটা ধর্মীয় দাঙ্গাকে প্রমোট করছে। তুমি বরং এখানে সম্প্রীতি দেখাও’। উত্তম গুহের পরামর্শে শেষ দৃশ্যটি মূল গল্প থেকে ভিন্ন হয়। এবং এই শেষ দৃশ্যর কারণেই বাংলাদেশী অনেক সমালোচক ও দর্শক সিনেমাটির শেষ দৃশ্যকে এনজিও বাজি বলে আখ্যা দিয়েছেন।’

এত কিছুর পরেও যদি কাহিনীকার হিসেবে একজন চোরকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়া হয়, তা হলে আজকের পর থেকে এই পুরস্কারের আর কোনো মূল্য থাকবে না। তাই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার মনোনয়ন কমিটির সাথে জড়িত সকলকে বিষয়টি নিয়ে গভীর চিন্তা করার বিনীত অনুরোধ করছি। সেই সাথে সাংবাদিক ভাইদেরকেও অনুরোধ করছি বিষয়টিতে দয়া করে আপনারা একটু নজর দিবেন। কারণ ‘সাংবাদিকদেরকে বলা হয় জাতির চতুর্থ স্তম্ভ।

  • Twitter Social Icon
  • Facebook Social Icon
  • Google+ Social Icon
  • LinkedIn Social Icon
Follow
"SAREGAMA JUST IN"

  জনপ্রিয় সংবাদ সা রে গা মা

বাংলা গান সা রে গা মা

Print  / Press Ctrl+P
Saregama Bangla

Sa Re Ga Ma News Archive

Write Yours Comments. 

RSS Feed

Reproduction of any content, news or article published on this website is strictly prohibited Privacy. 

bottom of page