top of page

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ। ১৯৭১ সালের এইদিনে বাঙালী জাতির ইতিহাসে এবং বিশ ইতিহাসে নিকৃষ্টতম এক বিভিষিকা নেমে


আজ ভয়াল ২৫ মার্চ। ১৯৭১ সালের এইদিনে বাঙালী জাতির ইতিহাসে এবং বিশ ইতিহাসে নিকৃষ্টতম এক বিভিষিকা নেমে আসে। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পূর্ব পরিকল্পিত অপারেশন সার্চলাইটের নীলনকশা অনুযায়ী আন্দোলনরত বাঙালীদের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে বাঙালীদের ওপর এই আক্রমন চালানো হয়। মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সর্ম্পকে লিখেছেন, সে রাতে ৭,০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেফতার করা হয় আরো ৩,০০০ লোককে। ঢাকায় এই ঘটনা ছিল কেবল শুরু। পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা চালিয়ে যায় হত্যাযজ্ঞ। সেইসাথে তারা জালিয়ে দিতে শুরু করলো ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট। লুট আর ধ্বংস তাদের নেশায় পরিণত হলো যেন। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হলো। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠলো শকুন তাড়িত শ্মশান ভূমিতে। কলকাতা থেকে ডোনাল্ড সিম্যান লন্ডনের সানডে এক্সপ্রেসে লিখেন, ২৫ মার্চের মধ্যরাত থেকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর হাতে ২০ থেকে ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। একাত্তরের ২৮ মার্চ প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র এখন বিদ্রোহের আগুন জ¦লছে।



স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে শেখ মুজিবের মুক্তি বাহিনীর সাথে পাকিস্তানের নিয়মিত বাঙ্গালী সৈন্য, ইষ্ট পাকিস্তান রাইফেলস ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে। একই তারিখে ব্রিটিশ সাংবাদিক সিডনী এইচ সহনবার্গ সানডে টাইমস এ বিগ গানস ব্লাষ্ট আনআর্মড বেঙ্গলিজ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে লিখেন, পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পূর্ব পাকিস্তান দখল করে নিয়েছে। প্রদেশের ৭০ মিলিয়ন জনতার স্বায়ত্ব শাসন লাভের সংগ্রাম বন্ধ করার জন্য আর্টিলারি ও মেশিনগান নিয়ে জনতার উপর হামলা শুরু করেছে। রিপোর্ট এর প্রায় শেষ অংশে বলা হয়, ট্রাকে করে সামরিক বাহিনীর পাহারায় এয়ার পোর্টের রাস্তা দিয়ে আসার সময় স্বাধীনতা সংগ্রামের কঠিন সমর্থক পথের ধারে বসবাসকারী গরিব বাঙ্গালিদের কুড়ে ঘরগুলোতে সৈন্যদের আগুন জালিয়ে দিতে দেখা গেছে। একজন পাকিস্তানী সৈন্য এয়ারপোর্টে এসময় গর্ব করে বলেছেন, বহু মানুষ মারা গেছে এবং বাংলাদেশ শেষ হয়ে গেছে। উল্লেখ্য, এর আগে ৩৫ জন বিদেশী সাংবাদিককে বহিস্কার করা হয়। যার মধ্যে সিডনীও একজন। একাত্তরের মার্চে পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্কট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তানি সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয়: ১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত এক লাখেরও বেশী মানুষের জীবননাশ হয়েছিল। ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানী জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালী বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। সেদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। হেলিকপ্টার যোগে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকেলের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসে। ঢাকার ইপিআর সদর দফতর পিলখানাতে অবস্থানরত ২২তম বালুচ রেজিমেন্টকে পিলখানার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। এদিন মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত এলাকায় আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টার নিয়ে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে উঠে বিভীষিকাময়। পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাবির জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত। বিশিষ্ট নজরুল গবেষক ও বাংলা একাডেমীর সাবেক পরিচালক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নীলক্ষেত আবাসনের ২৪নং বাড়িতে। ওই বাড়ির নিচে দুপায়ে গুলিবিদ্ধ দুই মা তাদের শিশু সন্তানকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সিঁড়ি ভেসে যাচ্ছিল তাদের রক্তে। পাক হায়নারা ভেবেছিল অন্য কোন দল অপারেশন শেষ করে গেছে। তাই তারা ওই বাড়িতে ঢোকেনি। অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম তখন প্রাণে বেঁচে যান। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, তাদের বাড়ির নিচে আর একজন অবাঙালী অধ্যাপক থাকলেও তিনি ২৫ মার্চের আগে কাউকে না জানিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। শুধু তাই নয়- বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার সব অবাঙালী পরিবার তাই করেছিলেন। এ থেকেই ধারণা করা যায় যে, ২৫ মার্চের এই হত্যাযজ্ঞের পূর্বাবাস অবাঙালীরা জানতো। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চ লাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সকল পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোন মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান। বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সকল বাঙালী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। কর্মসূচি: দিবসটি পালন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহন করেছে। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধ’৭১ বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানি গণহত্যা শুরুর ভয়াল রাত এবং স্বাধীনতার পথে আলোকযাত্রার মুহূর্তকে বিস্তারিত অনুষ্ঠানমালায় স্মরণ করবে।


আজ শুক্রবার রাত ১১টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের শিখা চিরন্তন সংলগ্ন বেদীতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হবে। দেশাত্মবোধক নাচ, গান ও কবিতা আবৃতির এক ঘন্টাব্যাপি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি রাত ১১টা ৪৯ মিনিট পর্যন্ত চলবে। রাত ১২টায় এক মিনিটের নীরবতা ও নিষ্প্রদীপ মহড়া অনুষ্ঠিত হবে। এরপর অন্ধকারের তমসা ভেদ করে স্বাধীনতার আলোর পথে যাত্রা। রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে রাত ১১টা ৩০মিনিটে কালো রাত হোক আলোর পথযাত্রী মোমবাতি প্রজ¦লন সূচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিিিথ হিসাবে উপস্থিত থাকবেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। বাংলাদেশ শিশু একাডেমী মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে ২৫ মার্চ ভয়াল কালরাত্রীতে নিহত শহীদদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানাবে।

  • Twitter Social Icon
  • Facebook Social Icon
  • Google+ Social Icon
  • LinkedIn Social Icon
Follow
"SAREGAMA JUST IN"

  জনপ্রিয় সংবাদ সা রে গা মা

বাংলা গান সা রে গা মা

Print  / Press Ctrl+P
Saregama Bangla

Sa Re Ga Ma News Archive

Write Yours Comments. 

RSS Feed

Reproduction of any content, news or article published on this website is strictly prohibited Privacy. 

bottom of page