ফ্রান্স, আলজেরিয়া সহ ইউরোপে বাংলা সঙ্গীতকে ছড়িয়ে দিতে নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছেন আরিফ রানা দম্পতি..
দীর্ঘদিন থেকে ফ্রান্সের প্যারিসে বসবাস করছেন কণ্ঠশিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক আরিফ রানা ও তার সহধর্মিণী কণ্ঠশিল্পী জেসমিন আনার কুমকুম।জন্মস্থান খুলনা শহরের খালিশপুর অঞ্চলে ও কুমকুম সিলেট জেলায়। ছেলেবেলা থেকেই গানের প্রতি তার ছিল অদম্য নেশা যা পরবর্তীকালে তাকে পরিনত করেছে একজন সংঙ্গীতের গুনী মানুষ হিসাবে। প্রচার বিমুখ এই মানষটি মিডিয়ার দ্বারস্থ হয়নি কখনই, নিজের প্রতিভাটাকে সারাজীবনই লুকিয়ে রেখেছেন তিনি কিন্তু সত্যিকারের প্রতিভা যা কখনেই লুকায়িত থাকতে পারে না, যারই প্রতিফলন ঘটেছে হাজার মাইল দুরে সুদুর ইউরোপে। দেশের মাটিতে যা হয়নি তা করে দেখিয়েছেন তিনি বিদেশের মাটিতে। ১৯৮৭ সাল থেকে ফ্রান্সের বাঙালি কমিউনিটির সব ধরনের অনুষ্ঠানে সংঙ্গীত পরিবেশন করে আসছেন এই দম্পতি। বাংলা গানের সমৃদ্ধ দ্বার উন্মোচন করেছেন তিনি প্যারিস সহ ইউরোপের পথেঘাটে । সম্প্রতি আলজেরিয়াতে ও গান করে প্রচুর সুনাম অর্যন করেছেন বাঙালি এই দম্পতি।
বাংলার প্রসিদ্ধ বাউল সঙ্গীত নিয়ে তার সাধনা আনেক দিন ধরেই।ভারতের শিল্পী পবন দাশ বাউল যেমন প্যারিসে বিভিন্ন ধরনের বাংলা গানকে পরিচিত করে তুলেছেন, তেমনি তার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশের বাউলসঙ্গীত সম্পর্কে প্যারিসসহ ইউরোপীয় শ্রোতাদের কাছে আগ্রহী করে তুলেছেন আরিফ রানা।
আরিফ রানা জানান,
শুধু প্যারিস নয়, গোটা ইউরোপেই বিভিন্ন উৎসবে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের বাউল গানকে তিনি ক্রমশ ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এর ফলে প্যারিসসহ ইউরোপের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের বাউল গানের পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
প্যারিসে আসলে বিভিন্ন বারে ও ফেস্টিভ্যালে গান করি। প্রথম দিকে শুধু ইংলিশ গান করতাম। পরে দেখলাম ওরা বাহবা দিচ্ছে, কিন্তু অত বেশি ইন্টারেস্টেড হচ্ছে না আমার গান শুনতে। একটা সময় লক্ষ্য করলাম যে, ওরা আসলে আমাদের গান শুনতে চায়। মানে আমাদের শেকড়ের গান, আমাদের অরিজিন কী! এই সব জানতে চায় আমার গানের মধ্য দিয়ে। তখন আমি বাউল গান গাইতে শুরু করি। পবন দাস বাউল আমাকে একটা দোতারা দেন। এই দোতারা বাজিয়েই আমি গান গাইতাম। যে বছর ইউনেস্কো থেকে বাংলাভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় সেই বছর প্যারিসে ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে আমি বাউল গান করি।
সম্প্রতি একটি ফরাসি ছবিতেও একটি বাংলা গান ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
কিছুদিন হল ঢাকায় এসেছেন এই দম্পতি। সম্প্রতি জি-সিরিজ এর প্রকাশনায় আসছে এই দম্পতির দুইটি বাংলা গানের একক এ্যালবাম যার শিরোনাম হয়েছে “ভাবনা” (আরিফ রানা) ও “আমার আমি” (কুমকুম)।
এ্যালবাম প্রসঙ্গে আরিফ রানা বলেন :
দেশে আসার কয়েকটা উপলক্ষ আছে। প্রধান উপলক্ষ মা। কতদিন মাকে দেখি না। অনেক দিন বাদে মায়ের সঙ্গে দেখা হলো। আরেকটি উপলক্ষ হলো দুটো অ্যালবামের কাজ গুছিয়ে নিয়ে এসেছি। অ্যালবাম দুটো প্রকাশ করে যেতে চাই।
এটা আমার তৃতীয় একক অ্যালবাম হবে। আমার প্রথম একক প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সালে। নাম ছিল ‘বিষণ্ন এবং একা’। ২০১১ সালে বেঙ্গল থেকে প্রকাশিত হয় আমার দ্বিতীয় একক “রঙ করা পুতুল”
কণ্ঠশিল্পী জেসমিন আনার কুমকুম বলেন :
এটা আমার প্রথম একক অ্যালবাম। নাম রেখেছি ‘আমার আমি’। অ্যালবামটির সব গান আমি নিজেই লিখেছি, সুর করেছি। আর সঙ্গীত আয়োজন করেছেন আরিফ রানা। প্যারিসেই পুরো অ্যালবামের কাজ শেষ করেছি।আসলে অনেক ভালোবেসে সঙ্গীত চর্চা করি। গানগুলো সবার ভালো লাগলেই নিজেকে সার্থক মনে করব। সবাইকে গানগুলো শোনার আমন্ত্রণ। সবাই বেশি বেশি বাংলা গান শুনবেন এই প্রত্যাশা।