সুষমা স্বরাজ যে বিগ ব্রাদারদের কথা বলেছেন তিনি তেমনই একজন বিগ ব্রাদার.. বললেন প্রভাষ আমিন।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের একটা ঐতিহাসিক, কূটনৈতিক, ইমোশনাল, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। আরেকটু ছোট করে বললে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের সম্পর্কটা নাড়ির টানের। ১৯৪৭ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান একটি অভিন্ন রাষ্ট্র ছিল ভারত নামে। ব্রিটিশরা দুইশ বছরের শাসন শেষে ফিরে যেতে বাধ্য হওয়ার আগে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতকে ভেঙে দিয়ে যায়। সৃষ্টি হয় পাকিস্তান নামে এক অদ্ভুত রাষ্ট্রের। ধর্মের ভিত্তিতে সৃষ্টি হওয়া পাকিস্তানের দুটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তানে ভৌগোলিক দূরত্ব ছিল ১১০০ মাইল। কিন্তু মানসিক দূরত্ব ছিল হাজার কোটি মাইল। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা সেই দূরত্ব কমানোর উদ্যোগ তো নেনইনি। বরং তাদের শোষণ, বঞ্চনা আর অবহেলায় পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মনে সৃষ্টি হয় স্বাধীনতার আকাংখা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ মুক্তি সংগ্রাম শেষে একাত্তরে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। এক সময়ের পূর্ববঙ্গ, পরের পূর্ব পাকিস্তান বদলে যায় স্বাধীন বাংলাদেশে। স্বাধীনতা অর্জনের পর পাকিস্তানের সৌজন্যের কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও তা বরাবরই শীতল রয়ে গেছে। যুদ্ধে স্বাধীনতা পেলেও আমরা আমাদের ন্যায্য পাওনা পাইনি। স্বাধীনতার আগের সম্পদের ন্যায্য হিস্যা, ’৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আসা আন্তর্জাতিক সাহায্য পুরোটাই মেরে দিয়েছে পাকিস্তান। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর তাদের মধ্যে ১৯৫ জনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়। নিজের দেশে নিয়ে বিচার করার কথা বলে তাদের ফিরিয়ে নিলেও সেই যুদ্ধাপরাধীদের আর বিচার করেনি পাকিস্তান। ফিরিয়ে নেয়নি আটকেপড়া পাকিস্তানিদেরও। ক্ষমা চায়নি একাত্তরের গণহত্যার জন্য। বরং যত দিন যাচ্ছে, তারা আস্তে আস্তে গণহত্যার দায় অস্বীকার করছে। তাই পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা বরাবরই বিদ্বেষের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যাই হোক, জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক একেবারেই নেই। এই বিচ্ছিন্নতার মূল কারণ পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টির কোনো মিল নেই; বিচ্ছিন্নতাটা আসলে মানসিক। কিন্তু ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা তেমন নয়। বাংলাদেশ আর ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ একসময় অভিন্ন বাংলা ছিল। ১৯০৫ সালে প্রথম বঙ্গভঙ্গ হয়। ১৯১১ সালে আবার বঙ্গভঙ্গ রদ হয়। তবে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় পুরোপুরি ভেঙে যায় বাংলা। পূর্ব বাংলা থেকে পূর্ব পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশ হলেও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আমাদের রক্তের সম্পর্কটা এখনো রয়ে গেছে। দেশভাগের সময় বা পরে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় এপার বাংলা থেকে সংখ্যালঘুদের অনেকেই ভারতে চলে গিয়েছেন বা চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। যতই বাধ্য হন, তাদের শেকড় তো বাংলাদেশেই। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মানুষেরা কলকাতায় পরিচিত ‘বাঙাল’ হিসেবে। এই বাঙালদের অনেকেই রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্যে অনেক উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। কিন্তু তারা ভুলে যাননি বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের প্রতি তাদের টানটা রয়েই গেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই বাঙালরা একটি বড় প্রভাবক। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা কৃতজ্ঞতার। এই কৃতজ্ঞতা জন্মের। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত আমাদের সরাসরি সহায়তা করেছে। বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার পরিচালিত হয়েছে কলকাতা থেকে। ভারত আমাদের শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে, খাইয়েছে। তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দৃঢ় কূটনৈতিক পদক্ষেপ বাংলাদেশকে অনেক বিপদ থেকে বাঁচিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ভারত সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে পাকিস্তানের পরাজয় নিশ্চিত হয়। একাত্তরের এই অপরিসীম সহায়তা আমরা কোনোদিন ভুলিনি, ভুলব না। এ ধরনের ক্ষেত্রে সাধারণত সৈন্যরা নতুন দেশে ঘাঁটি গেড়ে বসে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে প্রথম সুযোগেই ভারতীয় সৈন্যদের ফেরত পাঠান। এতকিছুর পরও ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা বরাবরই অম্লমধুর। বিশেষ করে ’৭৫ সালের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতির একটি বড় ফ্যাক্টর হয়ে যায় ভারতবিরোধিতা, কখনো কখনো তা অন্ধ ভারতবিরোধিতা। কিন্তু বাস্তবতা হলো ভারতের মতো একটি বড় দেশের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ রেখে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা কঠিন। ভারত শুধু সমৃদ্ধ ও বড় দেশ নয়, বাংলাদেশের বৃহৎ প্রতিবেশী। আর এটা তো সত্যি বন্ধু বদলানো যাবে, প্রতিবেশী বদলানো যায় না। কিন্তু স্বার্থটা যখন একতরফা হয়ে যায়, তখন সম্পর্কটা টেকসই হয় না। আমাদের যেমন ভারতকে দরকার, তেমনি ভারতেরও আমাদের দরকার। একসময় ভারত বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে শান্তিবাহিনীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। আবার ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীরাও বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরে আটক হওয়া ১০ ট্রাক অস্ত্র তো ভারতেই যাচ্ছিল। তখন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ছিল অবিশ্বাস আর সন্দেহের। তবে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তখন ভারতের ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেসের সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়া হয়। দুই দেশই নিজেদের স্বার্থটা বুঝে নিতে চেষ্টা করে। ফলে স্বস্তি আসে দুই দেশেই। কিন্তু কংগ্রেসকে হারিয়ে বিজেপি ভারতে ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে একটু অস্বস্তি তৈরি হয়। কারণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্কটা ঐতিহাসিক। সবার আশঙ্কা ছিল বিজেপি সেই সম্পর্কের ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে কি না। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে বিএনপি শিবিরে এক ধরনের উচ্ছ্বাস ছিল। তাছাড়া ভারতের নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশবিরোধী মনোভাব প্রকাশ্য ছিল। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার পর নরেন্দ্র মোদি নিজেকে দারুণভাবে বদলে ফেলেন। দুই দেশের স্বার্থটা বুঝতে সমস্যা হয়নি ক্যারিশমেটিক মোদির। সব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরো উষ্ণ এবং দ্বিপাক্ষিক হয়। দীর্ঘদিনের জিইয়ে থাকা ছিটমহল সমস্যা সমাধান দারুণ আশাবাদের সৃষ্টি করে। তবে এখনো বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সব সমস্যা মিটে যায়নি। সীমান্তে হত্যা, চোরাচালান, বাণিজ্য ঘাটতি তো আছেই; সবচেয়ে বড় সমস্যা তিস্তার পানি। এসব সমস্যাও মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে কূটনৈতিক পর্যায়ে। তবে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের সবচেয়ে বড় সমস্যা ভারতের মানসিকতায়। এ ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি বলেছেন সুষমা স্বরাজ ভারতের সংসদে। মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির অনুমোদন দেওয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হলে বাংলাদেশের এলডার ব্রাদার হতে হবে, বিগ ব্রাদার নয়। এটাই মূল কথা। কিন্তু সমস্যা হলো, ভারতের অনেকেরই আচরণ এলডার ব্রাদারসুলভ। ভারত আয়তনে, জনসংখ্যায়, সম্পদে সবকিছুতে আমাদের চেয়ে এগিয়ে। তবে বাংলাদেশও একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। গত ৪৫ বছরে বাংলাদেশও অনেক এগিয়েছে। এমনকি অনেক সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ এখন ভারতের চেয়েও এগিয়ে। এটা মানতেই হবে, রাতারাতি তো বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে চলে যেতে পারবে না। তবে বাংলাদেশ উন্নয়নের সঠিক পথেই এগুচ্ছে। বাংলাদেশ যে নতজানু মানসিকতা এড়িয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে, এটাই ভারতের কারো কারো পছন্দ হচ্ছে না। তাদের কেউ কেউ চান বাংলাদেশ সবসময় পরনির্ভরশীল থাকুক। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নাটকীয় মোড় নিয়েছে ক্রিকেটকে ঘিড়ে। বিশেষ করে গত বছর মার্চে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হারের পর। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ বাজে আম্পায়ারিংয়ের শিকার হয়েছিল। বাজে আম্পায়ারিংও খেলারই অংশ। কখনো সিদ্ধান্ত আপনার বিপক্ষে যাবে, কখনো হয়ত পক্ষেও যাবে। এটা মেনে নিতে পারলেই ভালো। তবে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে এমন দুঃখজনক বিদায় মেনে নিতে পারেননি বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী সমর্থকরা। যদিও সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই, ভুল-শুদ্ধ যা হয়েছে সব মাঠে, তবুও এর পেছনে বাংলাদেশের অনেকে ভারতের ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়েছেন। তবে এই সন্দেহ একেবারে অমূলক নয়। তখনকার আইসিসির চেয়ারম্যান শ্রীনিবাসন বাংলাদেশবিদ্বেষী লোক হিসেবে পরিচিত। সেই ম্যাচের পর আইসিসির প্রেসিডেন্ট লোটাস কামালের প্রতিক্রিয়ার জের ধরে তাকে ফাইনালে ট্রফি দেওয়ার নির্ধারিত সম্মান থেকে বঞ্চিত করা হয়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের ক্রিকেট সম্পর্কটা নাটকীয়ভাবে বিষিয়ে যায়। এর অবশ্য আরেকটু প্রেক্ষাপট আছে। ২০০৭ সালে ভারতের বিশ্বকাপ স্বপ্নের বাড়া ভাতে ছাই ঢেলে দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই জ্বালাটা ভারত ভুলতে পারেনি। তাই গত বছরের বিশ্বকাপের আগে ভারতীয়রা ‘মওকা মওকা’ বিজ্ঞাপন বানায়, যাতে বাংলাদেশকে হেয় করা হয়। বাংলাদেশের লোকজনও সামাজিক মাধ্যমে পাল্টা জবাব দেয়। এ নিয়ে মাঠের বাইরে এক ধরনের যুদ্ধংদেহী পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিশ্বকাপের পর ভারত বাংলাদেশে এসে সিরিজ হেরে গেলে আঁতে ঘা লাগে ভারতীয়দের। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট সম্পর্কে একটা দারুণ উপভোগ্য বৈরিতা তৈরি হয়। অথচ কদিন আগেও বাংলাদেশে ভারতের পক্ষে গলা ফাটানোর মতো মানুষ ছিলেন অনেক। বাংলাদেশের যারা হৃদয়ে পাকিস্তান ধারণ করেন, যারা পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে মাঠে যান, যারা ‘আফ্রিদি ম্যারি মি’ বলে প্ল্যাকার্ড তোলেন মাঠে; তারা এই সুযোগটাই নিয়েছেন। ভেতরে ভেতরে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন ভারত-বিদ্বেষ। কিন্তু খেলার মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর রাজনীতির হিসাব-নিকাশ এক নয়। আগে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের যে উত্তেজনা ছিল তা আস্তে আস্তে বাংলাদেশ-ভারতের ম্যাচে চলে আসছে। এটা আমার কাছে দারুণ লাগছে। একটু-আধটু উত্তেজনা না থাকলে খেলা দেখে মজা পাওয়া যায় না। আর বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সমানে সমানে পাল্লা দিয়ে লড়তে পারছে, ম্যাচের আগেই হেরে বসছে না; এটা দারুণ তৃপ্তিদায়ক। তবে এটা মানতেই হবে ভারতের ক্রিকেট ঐতিহ্য অনেক পুরনো। আর আইসিসির আয়ের মূল উৎস ভারতের বিশাল বাজার। তাই ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার পাশে ভারতও আইসিসির নিয়ন্ত্রক। সে তুলনায় বাংলাদেশ চুনোপুঁটি। বাংলাদেশ অভিষেক টেস্ট খেলেছে ২০০০ সালে। শিশু বাংলাদেশ যে এখন ভারতকে সিরিজ হারাচ্ছে; পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডের মতো প্রতিষ্ঠিত শক্তিকে হোয়াইটওয়াশ করে; তাতে অনেকের চোখ টাটায়। বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট খেললেও ভারত এখনো বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি। বাংলাদেশের মানুষের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে, বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে যতটা করা সম্ভব ছিল, ভারত ততটা করেনি। বরং উল্টো ভারত-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া এই তিন মোড়ল মিলে আইসিসিকে সংকুচিত করে রাখছেন, যাতে বাংলাদেশের মতো উঠতি দলগুলোর ঝামেলা হয়। এশিয়া কাপের ফাইনালের দিন ভারতে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ম্যাচ থাকে। আইসিসি কল্পনাই করেনি, বাংলাদেশ ফাইনালে ওঠে যাবে। তবে আমরা কখনোই অস্বীকার করি না, বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তি ভারতের ক্রিকেট সংগঠক জগমোহন ডালমিয়ার একটা বড় অবদান রয়েছে। আড়ালে-আবডালে কেউ কেউ বলেন, বাংলাদেশ একটু আগেই টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়ে গিয়েছিল। তাতে যতটা মাঠের পারফরম্যান্সের অবদান, তারচেয়ে বেশি টেবিলের। অভিযোগটা একেবারে মিথ্যা নয়। এটা ঠিক, শুধু মাঠের পারফরম্যান্স নয়, বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ক্ষেত্রে খেলাটির জন্য মানুষের আবেগ, সংগঠকদের দক্ষতা, অবকাঠামো ইত্যাদিও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। শুধু পারফরম্যান্স বিবেচনা করলে হয়ত তখন কেনিয়াই কিছুটা এগিয়ে ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ দ্রুতই সে সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণ করেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্ব ক্রিকেটেরই পরাশক্তি। ভারতের কেউ কেউ মনে করেন, ভারত যেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং টেস্ট ক্রিকেট প্রাপ্তিতে সহায়তা করেছে; তাই বাংলাদেশের উচিত সবসময় কৃতজ্ঞ থাকা। অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু তার মানে তো এই নয়, আমরা মুখ বুজে সব অন্যায় মেনে নেব। ডালমিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞ বলেই শ্রীনিবাসনের সব আচরণ মানতে হবে কেন, ইন্ধিরা গান্ধীর প্রতি কৃতজ্ঞ বলেই কি আমরা তিস্তার পানির দাবি ছেড়ে দেব? ভারতের কেউ কেউ এখনো আমাদের ৩০/৪০ বছর আগের বাংলাদেশ মনে করেন। তারা ভুলে যান আমরা অনেক এগিয়েছি, আমাদের আত্মমর্যাদাবোধ যে আমাদের সামর্থ্যরে সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে সেটা বোঝতে চান না অনেকে। এটা ঠিক আমরা এগিয়েছি, তবে ভারতকে হয়ত ছাড়িয়ে যাইনি, যাওয়াটা কঠিনও। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের আগে যে ভারত আমাদের ভয় পায়, আমরা যে সমানে সমানে লড়তে পারি, এটা তো আমাদের অর্জন। রাতারাতি আমরা হয়ত ভারতের সমকক্ষ হতে পারব না। কিন্তু খেলার মাঠে ভালো দিন তো আমাদেরও আসতে পারে। সেদিন আমরা কাউকেই ছেড়ে কথা বলব না, বলি না। হোক সেটা ভারত বা অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান বা নিউজিল্যান্ড। একটু বাড়তি উত্তেজনা না থাকলে খেলা দেখায় আনন্দ থাকে না। তবে খেলার উত্তেজনাকে জাতিগত প্রতিহিংসার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াটা ঠিক নয়। বাংলাদেশের গণমাধ্যম যথেষ্ট দায়িত্বশীল হলেও সামাজিক মাধ্যমে কখনো কখনো সীমা ছাড়িয়ে যান দুই দেশের সমর্থকরাই। তবে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের এক ডিপ্লোম্যাটের অকূটনৈতিকসুলভ আচরণ, বাংলাদেশকে হেয় করে একের পর এক মন্তব্য সব সীমা অতিক্রম করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারতের একাধিক ম্যাচের আগে-পরে তিনি একের পর এক উসকানিমূলক স্ট্যাটাস দিয়েছেন এবং ক্রমাগত আজেবাজে মন্তব্য করেছেন। অবশ্য তোপের মুখে তিনি তার একাধিক স্ট্যাটাস মুছেও দিয়েছেন। কিন্তু কোনোবারই ক্ষমা চাননি। এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের পর তিনি মিরপুর স্টেডিয়ামে উপস্থিত বাংলাদেশের দর্শকদের অশিক্ষিত বলে মন্তব্য করেন। তোপের মুখে পরদিন স্ট্যাটাসটি প্রত্যাহার করলেও তার আগে বারবার বলেছেন, তিনি যা বিশ্বাস করেন, তাই বলেছেন। এটা ঠিক এক সময় বাংলাদেশে ভারতের ক্রিকেটের অনেক সমর্থক ছিল। আমি নিজেও একসময় গাভাস্কার, কপিল, গাঙ্গুলী, আজহার, শচীনদের জন্য অনেক গলা ফাটিয়েছি। কিন্তু ক্রিকেট শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের উত্থানের পর পাল্টে গেছে সব হিসাব-নিকাশ। কলকাতার ইডেন গার্ডেনে যেমন বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচে সবাই পাকিস্তানকে সমর্থন করেন, তেমনি ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেমিফাইনালে বাংলাদেশের প্রায় সবাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সমর্থক বনে গিয়েছিলেন। আমি এমনিতে খুবই ইতিবাচক মানুষ। কখনো কারো পরাজয় আমাকে উল্লসিত করে না। কিন্তু ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের দিন, বাংলাদেশের অনেকেই যতটা না ওয়েস্ট ইন্ডিজের সমর্থক ছিলেন, তার চেয়ে অনেকে বেশি ভারতের পরাজয় চেয়েছেন। এটাই মানতে পারেননি সেই অসহিষ্ণু ডিপ্লোম্যাট। ভারতের পরাজয়ের পর তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, বাংলাদেশের অনেকের মুখোশ উন্মোচিত হলো আজ। ভিসা নিতে এসে তারা গদ গদ থাকেন। আর এখন সবাই ভারতবিরোধিতা করছেন। প্রথমে এটি দেখে আমার বিশ্বাস হয়নি। একজন ডিপ্লোম্যাট বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশের মানুষের ভিসা সম্পর্কে এভাবে খোঁটা দিতে পারে, এটা অবিশ্বাস্য। এটা ঠিক, বাংলাদেশের অনেকেই প্রতিদিন ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা, পর্যটনসহ নানা কাজে ভারতে যান। বাংলাদেশের ভারতীয় হাইকমিশনকে প্রতিদিনই প্রচুর ভিসা দিতে হয়। এটা করতে তারা হিমশিম খেয়ে যান। কিন্তু এই কাজটি তারা যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে করতে পারেন বলে মনে হয় না। ভারতের ভিসার জন্য বাংলাদেশের মানুষকে যে হয়রানির মুখোমুখি হতে হয়, তা অবর্ণনীয়। ভিসার জন্য ডেট পেতেই দালালদের ঘুষ দিতে হয়। ভিসা বেশি দিতে হলে আপনি ভিসা সেকশনে লোক বেশি রাখবেন, দক্ষ লোক রাখবেন। কিন্তু অবধারিত হয়রানি জেনেও বছরের পর বছর কোনো কার্যকর কৌশল বের করতে না পারাটা তো ব্যর্থতাই। বছরের পর বছর এই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে রাখা কোনো কাজের কথা নয়। এমনিতে তো হয়রানির সীমা-পরিসীমা নেই, তার ওপর সেই বাংলাদেশবিদ্বেষী ডিপ্লোম্যাট মনে করেন, তারা করুণা করে বাংলাদেশিদের ভিসা দেন। একজন মুক্ত মানুষের বিশ্বের সব দেশের ভিসা পাওয়ার অধিকার আছে, যদি তিনি সংশ্লিষ্ট দেশের সব চাহিদা ও শর্ত পূরণ করতে পারেন। বাংলাদেশের যারা ভারতের ভিসা চান বা পান, তারা নিশ্চয়ই সব নিয়ম-কানুন-প্রক্রিয়া মেনেই পান। এখানে দয়া বা করুণার কোনো ব্যাপার নেই। সংখ্যায় হয়ত কম। কিন্তু ভারতের অনেকেও তো প্রতিদিন বাংলাদেশে আসছেন। আমরা তাদের ভিসা দিচ্ছি সম্মান করে, করুণা করে নয়। ভারতের অনেকে বাংলাদেশে কাজ করেন। ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার একটি বড় উৎস বাংলাদেশ। আবার বাংলাদেশি চিকিৎসাপ্রার্থী আর পর্যটকরা ভারতের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছেন। বাংলাদেশের রোগী না পেলে ভারতের অনেক হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাবে। সেই ডিপ্লোম্যাট এমন প্রশ্নও তুলেছেন, বাংলাদেশিরা কেন ভারতে চিকিৎসা নিতে যায়, কেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে যায় না। খেলার সঙ্গে চিকিৎসার কী সম্পর্ক তা ঠিক পরিষ্কার নয়। তার কথা শুনে মনে হচ্ছে, ভারতের সব দাতব্য চিকিৎসালয়, আর বাংলাদেশিরা সেখানে যায় বিনা পয়সায় চিকিৎসা নিতে। এমনিতে জীবনের সব ক্ষেত্রে আমি সমালোচনা এবং ভিন্নমতকে স্বাগত জানাই। কেউ অসম্মানজনক কিছু বললে তার প্রতিবাদ জানাই। তিনি যখন বাংলাদেশিদের ভিসা নিয়ে খোঁটা দিলেন, আমি তার প্রতিবাদ করেছি। তবে একজন বন্ধু হিসেবে বিনয়ের সঙ্গে তাকে বলেছি, একজন ডিপ্লোম্যাট হিসেবে বাংলাদেশিদের করুণা করে ভিসা দিচ্ছেন, এ ধরনের মন্তব্য করা তার উচিত নয়। আগে একাধিক স্ট্যাটাস ডিলিট করার অভিজ্ঞতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছি, এমন কিছু বলবেন না বা লিখবেন না, যাতে পরে আবার তা গিলে ফেলতে হয়। তা তো করেনইনি উল্টো আমাকে ঝালমুড়ি সাংবাদিক, বাংলাদেশি ইন্টেলেকচুয়েলদের আশি ভাগ ভারতে ক্লার্কের চাকরিও পাবেন না বলে মন্তব্য করেন। ফাঁকে ফাঁকে তিনি বাংলাদেশি সমর্থকদের পাগল, ছাগল, মূর্খ, অশিক্ষিত বলে মন্তব্য করেই যাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি বলেন, বাংলাদেশিরা নাকি ভিসার জন্য হাইকমিশনে গিয়ে পায়ে ধরে পড়ে থাকে। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই আমি। বিস্ময়ের ঘোর কাটার পর তাকে পরামর্শ দেই হাইকমিশন বন্ধ করে আশ্রম খোলার। কারণ বিশ্বের কোনো দেশে আরেক দেশের লোক গিয়ে ডিপ্লোম্যাটদের পায়ে ধরে পড়ে থাকে, এটা দুই দেশের জন্যই লজ্জার। অন্য সব ক্ষেত্রে আমি শেষ পর্যন্ত আলোচনা বা বিতর্ক চালিয়ে যাই। কিন্তু তিনি যেভাবে কথায় কথায় গালি দিচ্ছিলেন আর বাংলাদেশকে হেয় করছিলেন, তাতে আমি তার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। আমার আশঙ্কা ছিল, তার সঙ্গে আরো কিছুক্ষণ আলোচনা চালিয়ে গেলে আমার মনেও ভারতবিদ্বেষ তৈরি হবে। কিন্তু আমি মোটেই ভারতবিদ্বেষী নই। বরং ভারতের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা আছে। ভারতের শিল্প-সংস্কৃতি-সাহিত্যের প্রতি আমার এক ধরনের ভালোবাসা আছে। ভারতের সিনেমা, সংগীত, টিভি সিরিয়াল, ফ্যাশন বাংলাদেশে তুমুল জনপ্রিয়। কেউ কেউ একে আগ্রাসন বলেন। কিন্তু মানুষ যদি গ্রহণ করে, আপনি ঠেকাতে পারবেন না। আমাদের ছেলেবেলা কেটেছে ভারতীয় লেখকদের বই পড়ে আর ভারতীয় শিল্পীদের গান শুনে। এখনো আমার পছন্দের তালিকার বড় অংশ জুড়েই ভারতীয় গান, বই, সিনেমার নাম। তাই সেই ভালোবাসা নষ্ট না করতে সেই ডিপ্লোম্যাটের সঙ্গে আলোচনা থামিয়ে দেই। তবে আমি যা আশঙ্কা করেছিলাম তাই হলো। সকালে উঠে দেখি তিনি স্ট্যাটাস ডিলিট করে দিয়েছেন। কিছুক্ষণ পর আমাকেও ব্লক করে দিলেন। আমি আবার অবাক হলাম। কী অপরাধে আমাকে ব্লক করলেন বুঝতে পারিনি। অকারণে তিনি বারবার গালি দিলেও আমি তাকে একটিও অসৌজন্যমূলক শব্দ বলিনি। আমি শুধু বাংলাদেশের মর্যাদা তুলে ধরতে চেয়েছি। তিনি অবশ্যই তার দেশকে ভালোবাসবেন। আমি তার অনুভূতির প্রতি বরাবর শ্রদ্ধাশীল থেকেছি। কিন্তু নিজের দেশকে ভালোবাসলেই আরেক দেশকে হেয় করতে হবে, অসম্মান করতে হবে কেন? তিনি যেমন তার দেশকে অনেক ভালোবাসেন, আমিও তো আমার দেশকে ভালোবাসি। বড়ত্বের যে উদারতা থাকে, তা তার মধ্যে বিন্দুমাত্র ছিল না। বরং নিজের আচরণ দিয়ে তিনি বারবার তার দেশকেই ছোট করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তি নিয়েও। তিনি অভিযোগ করেছেন, ডালমিয়া ঘুষ খেয়ে বাংলাদেশকে স্ট্যাটাস দিয়েছে। বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির জন্য আমি জগমোহন ডালমিয়ার কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু ডালমিয়া ঘুষ খেয়ে বাংলাদেশকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন এটা আমি বিশ্বাস করি না।
এ অভিযোগ করে তিনি যে তার দেশের একজন নিবেদিতপ্রাণ ক্রিকেট সংগঠককেই খাটো করলেন, সেটা বোঝার মতো যথেষ্ট সংবেদনশীলতা তার নেই, অন্তত ভারত হারার পর ছিল না। আমি অনেকবার বলেছি, দাদা আপনি দলের পরাজয়ে শোকার্ত। এই সময় এই তর্কটা করাটা ঠিক নয়। আপনার পেশার প্রতি আপনি সম্মান দিতে পারবেন না। আমি তাকে বন্ধুর মতোই পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু তিনি রাতভর গোয়ারের মতো তর্ক করে সকালে স্ট্যাটাস ডিলিট করে দিয়েছেন। এটা কোনো দায়িত্বশীল ডিপ্লোম্যাটের কাছে আশা করা যায় না। স্ট্যাটাস ডিলিট করলেও তিনি কিন্তু ক্ষমা চাননি। তার মানে ডিলিট করতে বাধ্য হলেও মনোভাব তার বদলায়নি। ডিপ্লোম্যাসির যতটুকু বুঝি তাতে কোনো দেশে কাউকে পোস্টিং দেওয়ার আগে বিবেচনা করা হয়, তিনি সেই দেশের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল কি না। আমিও ভেবেছি বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন বলেই তাকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে।
প্রথম প্রথম আমি ভেবেছি, তিনি ভারতকে বেশি ভালোবাসেন বলেই খেলা নিয়ে তার আবেগ বেশি। তবে তিনি অত সিরিয়াস বাংলাদেশবিদ্বেষী এটা বুঝতে আমার একটু সময়ই লেগেছে। বাংলাদেশিরা ভিসার জন্য পায়ে ধরে পড়ে থাকে, করুণা করে ভিসা দেন; এ ধরনের মনোভাবে অনড় থাকা দেখে বুঝেছি আসলে তিনি বাংলাদেশকেই অপছন্দ করেন। সবসময় ধন্যবাদ পেয়ে অভ্যস্ত বলে, আমার প্রতিবাদ তিনি নিতে পারেননি। সুষমা স্বরাজ যে বিগ ব্রাদারদের কথা বলেছেন, তিনি তেমনই একজন বিগ ব্রাদার, এলডার ব্রাদার নন। তবে এমন বিগ ব্রাদারদের বাংলাদেশে না পাঠালেই ভালো। আমি নিশ্চিত, তার মতো মানসিকতার একজন লোক হাইকমিশনে থাকলে বাংলাদেশে ভারতবিদ্বেষী লোকের সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে। আমি সবসময় খেলাকে খেলা হিসেবেই নেই। শুধু খেলা নয়, জীবনটাকেই স্পের্টিংলি নেওয়ার পক্ষে আমি। পাকিস্তানের ব্যতিক্রম বাদ দিলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, রাষ্ট্র কারো প্রতি আমার বিদ্বেষ নেই। সেখানে নিছক খেলাকে উপলক্ষ করে আর এক-দুজন ডিপ্ল্যোম্যাটের অকূটনৈতিকসুলভ আচরণের জন্য ভারতের মতো বৃহৎ প্রতিবেশীর প্রতি আমি বা আমরা কোনো বিদ্বেষ তৈরি করতে রাজি নই। ভারত একটি স্বাধীন দেশ, বাংলাদেশও একটি স্বাধীন দেশ। আমাদের সম্পর্ক হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধার, ভালোবাসার; বিদ্বেষের নয়। খেলার মাঠে, আলোচনার টেবিলে সবকিছু হবে সমানে সমানে। ভালো খেললে ভারত জিতবে, যৌক্তিক কথা বললে আমরা তাদের কথা মানব। কিন্তু আমাদের খাটো, হেয় করলে, আমরা মানব না, প্রতিবাদ করব; তিনি যেই হোন। probhash2000@gmail.com