হলের পানিতে বিষক্রিয়া, অসুস্থ হয়ে পড়ছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খাবারের কোন ঠিক নেই। পানিই সুস্থ থাকার একমাত্র ভরসা। কিন্তু এখন সেই পানিই হয়ে পড়েছে বিষাক্ত। এমনটিই বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা ........
গতকাল থেকে বিষাক্ত পানি পান করছি আমরা, অথচ বিষয়টি জানতে পারলাম আজ ! বলা হয়, আমরা নাকি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ছাত্র। অথচ আমাদের জীবনের কোন গুরুত্ব নেই’!-এমন আক্ষেপের সুরেই কথাগুলো বলছিলেন মুহসিন হলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাস্টার্সের এক ছাত্র।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর যেন সমস্যার কোন শেষ নেই। একদিকে পুরানো জরাজীর্ণতা। সবসময় থাকে ভূকিম্প আতংক। আবাসান সমস্যা তো আছেই ! তার উপর অস্বাস্থ্যকর খাবার ! ঢাবির হলগুলোতে খাবার পানিটাই ছিলো মূলত অনেকটা ভালো। কিন্তু এবার জীবনের অপর নাম ‘পানি’তেই দেখা দিলো সমস্যা।
শুক্রবার বিকাল থেকে মুহসিন সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি হলের পানিতে সমস্যা দেখা দেয়। পাইপ দিয়ে বিষাক্ত পানি বেরিয়ে আসছিল। শুরুতে ছাত্ররা এই সমস্যা বুঝতে পারেনি। ভেবেছিল হয়তো পানির ট্যাংক পরিষ্কার করা হয়েছে। একারণে কিছুক্ষণের জন্য ময়লাগুলো বেরিয়ে আসছে। এই ভেবে তীব্র এই তাপদাহে তৃষ্ণা মেটানোর তাগিদ থেকে ভুলে বিষাক্ত পানি পান করে আসছিলেন ছাত্ররা। আর এতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শতাধিক ছাত্র। পেটের অসুখে ভোগে বেশ কিছু ছাত্র মেডিকেলে দৌঁড়ঝাপ করছেন! অনেকে পেটের ব্যথায় ভুগছেন।
জিয়া হলে অবস্থিত পানির ট্যাংকে সমস্যা দেখা দেওয়া এই ভোগান্তি বলছেন কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে পানি সমস্যা লাঘবে কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
ছাত্রদের অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পানির সেই পুরানো ট্যাংকগুলোর সংস্কারে কোন পদক্ষেপ দেখা যায় না। ক্যান্টিনগুলোর খাবার আগে থেকেই অস্বাস্থ্যকর, নোংরা। আর এখন পানিতে বিষক্রিয়া ছাত্রদের ভাবিয়ে তুলছে।
মুহসিন হলের ছাত্ররা বলছেন, পানিতে গতকাল থেকে যে এতো সমস্যা দেখা দিয়েছে তা কর্তৃপক্ষ তাদেরকে জানায়নি। দীর্ঘ ২০ঘণ্টা পর হল কর্তৃপক্ষ তা অবগত করে বলে জানান ছাত্ররা। কিন্তু এরই মধ্যে অনেকেরই মাথাব্যথা, পেট ব্যথা শুরু হয়ে গেছে।
ছাত্ররা বলছেন, যে পানি দিয়ে তারা গোসল করেন সেই পানিই পান করতে হয় তাদের। ট্যাংকগুলো কতো মাস কিংবা বছরের পর বছর পরিষ্কার করা হয় না তা তাদের জানা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে তেমন একটা মাথা ঘামান না বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্ররা।
জিয়া হল এবং সূর্য সেন হলের ছাত্ররাও বলছেন গতকাল থেকে তাদের পানিতেও সমস্যা দেখছে। এরপরও ঘোলাটে পানিই তারা ব্যবহার করছেন। এদিকে জহরুল হক হলের একজন ছাত্রও বলছেন, তাদের হলের পানিতেও সমস্যা নিয়মিত দেখা দিচ্ছে। অনেক সময় ঘোলাটে পানি দেখতে পাচ্ছেন তারা। তবে মুহসিন হলের পানিতেই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
মুহসিন হলের একজন হাউজ টিউটর বলছেন, মুহসিন হলের ট্যাংকগুলো ৩মাস পর পর পরিষ্কার করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তারা। এতে পানিতে ময়লা এবং কোন ব্যাকটেরিয়া থাকার সম্ভাবনা থাকবে না।
এদিকে পানিতে এই বিষক্রিয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ার সেকশনের কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবি করছেন ছাত্ররা। আবার অনেক ছাত্র হল কর্তৃপক্ষের এবিষয়ে অবহেলা এবং ধীরগতিকে দায়ী করছেন।
এবিষয়ে মুহসিন হলের অধাক্ষ্য অধ্যাপক নিজামুল হক ভুইয়া বলেন, এটি খুবই দু:খজনক ব্যাপার। আমি পুষ্টি বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে জানি, আয়রণযুক্ত পানি পানে শরীরে কতোটা সমস্যা হতে পারে। এবিষয়ে আমি জেনেছি সকাল সাড়ে ১০টায়। ইঞ্জিনিয়ার সেকশন এর আগে আমাকে জানায়নি। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় কয়েকজন ছাত্র আমাকে জানায়।
তিনি বলেন, এবিষয়ে অবগত হওয়ার সাথে সাথে আমরা এই পানি পান না করার জন্য মাইকিং করে জানিয়ে দেয় এবং বিকল্প ব্যবস্থা পানি পানের ব্যবস্থা করেছি, তা তা পর্যাপ্ত নয়। এই গরমে একজন সুস্থ মানুষের ৩-৪লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। আমরা তা পুরণ করতে পারছি না। ইতোমধ্যে ইঞ্জিনিয়ার সেকশনের সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা বলছেন, আজ রাত ৮টার মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হবে’।
ছাত্ররা বলছেন, পানির স্থায়ী সমস্যার সমাধান করতে হলে ট্যাংক এবং পাইপগুলোর পরিবর্তন দরকার এবং সপ্তাহ পরপর ট্যাংকগুলো পরিষ্কার করা প্রয়োজন। এবিষয়ে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।