“সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে আঞ্চলিক গানের শিক্ষা দেয়া আমার খুব ইচ্ছা”..প্রয়াত বরেন্য সংগীত সাধক পন্ডি
ওস্তাদ রামকানাই দাশ বা পণ্ডিত রামকানাই দাশ বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত লোকসংগীত শিল্পী ও সংগ্রাহক। জন্ম একটি সঙ্গীত পরিবারে। ১৯৩৫ সালে সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহন করেন। বাবা রসিক লাল দাশ ও মা দিব্যাময়ী দাশ দু'জনই ছিলেন লোককবি এবং লোকগানের শিল্পী। তাই খুব ছোটবেলা থেকে গান শুনেই বড় হয়েছেন তিনি।
লোকসংগীত সংগ্রহে অবদানের জন্য ২০১৪ সালে সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে। পন্ডিত রামকানাই দাস পুরাতনী বাংলা গান নিয়ে অনেক দিন যাবৎ কাজ করছেন। পুরাতনী বাংলা গানকে নাগরিক শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় করতে ভূমিকা রাখেন তিনি। দেশে ও দেশের বাইরে তার অসংখ্য ছাত্রছাত্রী রয়েছে তার। তিনি দেশের আনাচে-কানাচে হারিয়ে যাওয়া বহু লোকসঙ্গীত সংগ্রহ করে বাংলা গানকে সমৃদ্ধ করেছেন। লোকসঙ্গীতের ধারা রক্তে থাকলেও রামকানাই সেই গণ্ডি পেরিয়ে ধ্র“পদী সঙ্গীত, বিশেষ করে ‘খেয়াল’-এ মন দিয়েছিলেন। তালিম নিয়েছিলেন তবলাতেও। গাওয়ার পাশাপাশি তিনি গান লিখেছেন এবং সুর করেছেন। সেইসঙ্গে শিক্ষক হিসাবে বহু শিল্পীও তৈরি করেছেন তিনি।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৪ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন।
রাগসঙ্গীতের শিল্পী হলেও লোকগীতির বৈশিষ্ট্য তার কণ্ঠে যেন অন্য আরো একটি মাত্রা যোগ করে। শিকড়টি মাটিতে প্রোথিত বলেই সঙ্গীতের সর্বক্ষেত্রে তার এই স্বাচ্ছন্দ্য বিচরণ। তাই সঙ্গীত জীবনে রাগরাগিণীর চর্চা, লোকগীতির চর্চা আবার একইসঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সাধনাও করে গেছেন রামকানাই দাশ।
১৯৬৭ সাল থেকে সিলেট বেতারে নিয়মিত সংগীত শিল্পী হিসেবে গান পরিবেশন করে থাকতেন তিনি।
পণ্ডিত রামকানাই দাশের ভাষায় :
(৩ ফেব্রুয়ারী ২০১২ ইং সালে প্রকাশিত দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকার একটি সাক্ষাতকার।)
আমার বয়স যখন তিন বছর তখন আমি বহু গান গাইতে পারতাম। পরবর্তীতে দেশে ও বিদেশের অনেক ওস্তাদের কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তালিম নিয়েছি। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে আমার শিৰাগুরু হলেন ওস্তাদ কালীমোহন চক্রবর্তী, রাজবিহারী চক্রবর্তী, উমেশ চন্দ্র রায়, অরম্নণ ভাদুড়ী ও ছগীর উদ্দিন খান।
আপনার প্রকাশিত একক এ্যালবাম সম্পর্কে কিছু বলুন। এ পর্যন্ত আমার পাঁচটি একক এ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। আমার প্রথম এ্যালবামের নাম বন্ধুর বাঁশি বাজে। এটি প্রকাশ হয় কমিটমেন্ট প্রডাক্টের ব্যানারে। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন বের করে সুরধ্বনির কিনারায় ও 'অসময়ে ধরলাম পাড়ি' নামে দুটি এ্যালবাম, লেজার ভিশন থেকে বের হয় 'পাগলা মাঝি' এবং সুরের মেলা থেকে বের হয় 'রাগাঞ্জলী' নামে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি এ্যালবাম। এছাড়া নবযুগ প্রকাশনী থেকে ২০১১ সালে 'সঙ্গীত ও আমার জীবন' নামে বের হয় একটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ। সরল সঙ্গীত শিৰা নামে প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ডের আমার দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে।
আপনার সঙ্গীত জীবনে উল্লেখযোগ্য সম্মাননার কথা বলুন।
বাংলাদেশ জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন পরিষদ থেকে ২০০০ সালে দেশের শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত গুণী হিসেবে রবীন্দ্র পদক, ওস্তাদ মোজাম্মেল হোসেন স্মৃতি পদক, উর্বশী পদক এবং লোকগানের একক এ্যালবাম পাগলা মাঝির জন্য শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে সপ্তম সিটিসেল চ্যানেল আই মিউজিক এ্যাওয়ার্ড লাভ করি। এছাড়া দেশ-বিদেশ থেকে বেশ কিছু সম্মাননাও পেয়েছি। আমি দেশে ও দেশের বাইরে পঞ্চাশটিরও বেশি জাতীয়ভিত্তিক সঙ্গীত সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছি।
সঙ্গীত নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
আমি যদিও শাস্ত্রীয়সঙ্গীতের মানুষ, কিন্তু পিতৃ ও মাতৃ সূত্রে লোকগান আমার অন্তরে গেঁথে আছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে এই গান সংগ্রহ করা আমার একান্ত ইচ্ছা। এবং ইতোপূর্বে এ কাজ শুরু করেছি। সিলেটের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে আঞ্চলিক গানের শিক্ষা দেয়া আমার খুব ইচ্ছা। এছাড়া প্রাচীন লোকগানের একটি স্বরলিপির বই করতে চাই।
অ্যালবাম সমূহ :
বন্ধুর বাঁশি বাজে (২০০৪)
সুরধ্বনির কিনারায় (২০০৫)
রাগাঞ্জলি (২০০৬)
অসময়ে ধরলাম পাড়ি (২০০৬)
পাগলা মাঝি (২০১০)
পুরস্কার :
১৯৯৭ - সালে ওস্তাদ মোজাম্মেল হোসেন পদক,
২০০৭ - সালে ওস্তাদ মোশাররফ হোসেন পদক,
২০১১ - সালে ‘সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস’
২০১২ - বাংলা একাডেমী ফেলোশিপ লাভ
২০০০ - সালে দেশের শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত গুণী হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ থেকে রবীন্দ্র পদক।২০১৪ - একুশে পদক ( লোকসংগীত সংগ্রহে অবদানের জন্য ২০১৪ সালে সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে।)
তথ্যচিত্র :
২০১১ সালে নির্মাতা ‘নিরঞ্জন দে’ ওস্তাদ রামকানাই দাশের জীবন ও কর্ম নিয়ে 'সুরের পথিক' নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন এবং এটি লেজার ভিশন থেকে প্রকাশিত হয় তথ্যচিত্রটিতে কবি, ঘাটু, উড়ি, গাজী, ত্রিনাথ, বাউল, টপ্পাসহ লোক আঙ্গিকের বিভিন্ন ধারার গান ও তার শিল্পী জীবনের নানা ঘটনা তুলে ধরা হয়। এতে সঙ্গীতজ্ঞ প্রয়াত ওয়াহিদুল হক, ড. সন্জীদা খাতুন, ড. করম্নণাময় গোস্বামী, সঙ্গীতশিল্পী সুবীর নন্দী, চন্দনা মজুমদারসহ অনেকের বক্তব্য এবং উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের কিছু কিছু অংশ স্থান পায়।
মৃত্যু :
২৬ শে আগস্ট সিলেটের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের বিষয়টি ধরা পড়ে। পরদিন তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বেড়ে গেলে ৩০ আগস্ট মেট্রোপলিটন হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের পর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে তার অবস্থার অবনতি হয়। ৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাত সোয়া ১১টায় নিউরো সার্জারি বিভাগের আইসিইউতে মারা যান তিনি।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------- প্রয়াত বরেন্য সংগীত সাধক পন্ডিত রামকানাই দাশ স্মরনে.............
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
১৩ই মে ২০১৬ বরেন্য সংগীত সাধক ,পন্ডিত রামকানাই দাশ সংগীত উৎসব ,সিলেটে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে । অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ঠ সংগীত শিল্পীদের পরিবেশনার পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন এর পরিবেশনা থাকবে এবং পন্ডিত রামকানাই দাশ রচিত ও সুরারোপিত " রামকানাই গীতি " পরিবেশিত হবে।
এছাড়া যোগ্য পিতার সুযোগ্য কন্যা নিউইয়র্ক প্রবাসী গুনী সঙ্গীত শিল্পী করেরী দাশ তার বাবার সৃতিচারন করেন :
বাবা গানের বিষয়ে কিছু উপদেশ দিচ্ছিলেন, কেন জানি মনে হল ভিডিও করে রাখি, কিন্ত বাবা মানা করলেন । আমি পেছনে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে বাম হাতে ক্যামেরা নিয়ে বাবার নিষেধ না শুনেই রেকর্ড করলাম। এখন পর্যন্ত বাবার কোন ভিডিও দেখতে পারিনা , দেখা সম্ভব হয়না , ভীষন কান্না চলে আসে । ৮ ই মে বাবার জন্মদিন পালন করবো সংগীত পরিষদ এর পক্ষ থেকে।
সংগীত পরিষদ,নিউইয়র্ক এর সকল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অত্যন্ত আনন্দের সংগে জানাচ্ছি , ৮ই মে ২০১৬ রবিবার সংগীত পরিষদ এর প্রতিষ্ঠাতা ও বরেন্য সংগীত সাধক পন্ডিত রামকানাই দাশ এর ৮১ তম জন্মবাষিকী ও বাংলা নববর্ষ ১৪২৩ বরন এর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠান সুচী: ------------- 🎼। ৮ ই মে রবিবার সকাল ১১ টা থেকে শুরু হবে।
🎼। বিশেষ আলোচনা : ------------------------ পন্ডিত রামকানাই দাশ এর সংগীত জীবন নিয়ে বিশেষ আলোচনা করবেন সাপ্তাহিক বাঙালী'র সম্পাদক বিশিষ্ঠ সাংবাদিক জনাব কৌশিক আহমেদ ।
🎼। সংগীত পরিষদ,নিউইয়র্ক - এর সকল শিক্ষার্থী বৃন্দের , রামকানাই গীতি পরিবেশন ।
সংগীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহনে: সামী স্পন্দন ,ঋতিকা দাশ,সম্প্রীতি ,,অভিজিৎ সিন্হা ,স্তোতি ব্যানার্জি ,ওয়াজিহা চৌধুরী,আরিশা দাশ,অর্পিতা ,আদিতি ,অনন্যা দেবী,অধরা মাধুরী ,রাধিকা দাশ ,ধীমান শাহিদ,চৈতী বিশ্বাস,অনামিকা,প্রার্থনা নাথ,ইরফাত,সানজার আহমেদ,অমিত দত্ত ,অর্জুন দত্ত,পাস্মৃতি বডুয়া,রীমা,সারগাম চৌধুরী ,বডুয়া ,সানাই,পারমিতা তালুকদার।
ফারজানা মম,রুখসান আরা ,অনিতা দাশ,নার্গিস বেগম,চিত্রা রোজারিও , ক্রিস্টিনা লিপি রোজারিও,তাহরিনা পারভীন প্রীতি ,শাহীন খান ,ডানা ইসলাম, সুপ্রিয়া চৌধুরী ,শিরিন রহমান , অনামিকা ঘোষ, কৃষ্ণা দেব ।
🎼। দুপুরের খাবার ।
🎼। কৌতুক পরিবেশন ।
🎼। কবিতা আবৃতি ।
🎼। পন্চ কবির গান ।
🎼। লোকগীতি ।
🎼। বেহালা বাদন : শ্রুতিকনা দাশ।
🎼। বিকালের চা চক্র ।
🎼। বিশেষ আকর্ষন :নিউইয়র্ক এর জনপ্রিয় শিল্পী তাজুল ইমাম ও শাহ মাহবুব এর সংগীত পরিবেশন ।
🏠স্থান-:৩৪-৪১ ৭১ স্ট্রীট জ্যাকশন হাইটস , নিউইয়র্ক। সবাইকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি । ধন্যবাদ কাবেরী দাশ ৩৪৭ ৪৬৬ ২৯২৭