‘ভাল চলচ্চিত্র সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাজ গঠনের বার্তা দিন।’ : প্রধানমন্
দেশের সাম্প্রতিক চলচ্চিত্রের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সিনেমাগুলো চমৎকার, জীবনধর্মী। সবচেয়ে বড় কথা, মনের ভেতর দাগ কাটে।’ বুধবার বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৪’ -এর পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
‘ভাল চলচ্চিত্র সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে। আপনারা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাজ গঠনের বার্তা দিন।’
চলচ্চিত্রে সামাজিক বার্তা থাকা উচিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশের সিনেমা হলগুলোর আধুনিকায়নে গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবসা পরিবর্তনের জন্য অনেক হলমালিক তাদের সিনেমা হল ভেঙে ফেলছেন। অথচ এটি আরও আধুনিক করলে ব্যবসা ও সুস্থ সামাজিক বিনোদনের সুযোগ তৈরি করা যায়, যা সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশও বটে। দর্শকদের ধরে রাখার জন্য ভালো ছবি নির্মাণের পাশাপাশি আধুনিক ও ডিজিটাল সিনেমা হল নির্মাণ এবং সিনেমা হলের পরিবেশ সুন্দর করারও তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, চলচ্চিত্রের উন্নয়নের ক্ষেত্রে শুধু সরকারি পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়। আমি আশা করি বেসরকারি পর্যায় থেকেও এই শিল্পের উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কথা ভেবেই আমরা বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটি করে দিয়েছি। ফিল্ম সিটির জন্য ১০৫ একর জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউট করেছি। সরকার চলচ্চিত্রের সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করার চেষ্টা করে যাবে।’
এছাড়া সবার সম্মতিক্রমে একটি স্থায়ী চলচ্চিত্র নীতিমালা করার ব্যাপারেও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার মনোনীতদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন হাসান ইমাম ও রানী সরকার। তারা এবছর যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন।
চলচ্চিত্র শিল্পের গৌরবোজ্জ্বল ও অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২৬টি ক্ষেত্রে বিশিষ্ট শিল্পী ও কলাকুশলীকে এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করা হয়।
গল্প চুরির অভিযোগে এ বছর সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘বৃহন্নলা’ চলচ্চিত্রের পুরস্কার বাতিল হওয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মাসুদ পথিকের ‘নেক্কাবরের মহাপ্রয়াণ’ নির্বাচিত হয় সেরা চলচ্চিত্র।
সেরা কাহিনিকার হয়েছেন ‘মেঘমল্লা’র চলচ্চিত্রের জন্য আখতারুজ্জামান ইলিয়াস (মরণোত্তর)।
একই ছবির জন্য সেরা চিত্রনাট্যকার ও সেরা পরিচালকের পুরস্কার পান জাহিদুর রহিম অঞ্জন।
সেরা অভিনেতা হয়েছেন ফেরদৌস (এক কাপ চা)।
যৌথভাবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছেন মৌসুমী (তারকাঁটা) ও মিম (জোনাকীর আলো)।
‘দেশা দ্য লিডার’ ছবির গানের জন্য সেরা গায়ক নির্বাচিত হয়েছেন জেমস।
যৌথভাবে সেরা গায়িকা নির্বাচিত হয়েছেন রুনা লায়লা (প্রিয়া তুমি সুখী হও) ও মমতাজ (নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ)।
‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ ছবির জন্য সেরা সংগীত পরিচালক, গীতিকার, সুরকার ও রূপসজ্জা শিল্পী নির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে সাইম রানা, মাসুদ পথিক, বেলাল খান ও আবদুর রহমান।
‘দেশা দ্য লিডার’ ছবির জন্য সেরা খলনায়ক নির্বাচিত হয়েছেন তারিক আনাম খান। একই ছবির জন্য সেরা চিত্রনাট্যকার সৈকত নাসির ও সেরা সম্পাদক হয়েছেন তৌহিদ হোসেন চৌধুরী।
সেরা কৌতুক অভিনয়শিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন মিশা সওদাগর।
সেরা পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে ‘তারকাঁটা’ ছবির জন্য এজাজুল ইসলাম ও ‘৭১ এর মা জননী’ ছবির জন্যে পুরস্কার জিতেছেন চিত্রলেখা গুহ।
পুরস্কার পাওয়া অন্যদের মধ্যে আছেন সেরা চিত্রগ্রাহক মোহাম্মদ হোসেন জেমী, সেরা শিশুশিল্পী আবির হোসেন অংকন (বৈষম্য), সেরা শিল্প নির্দেশক মারুফ সামুরাই (তারকাঁটা), সেরা শব্দগ্রাহক রতন পাল, শিশুশিল্পী বিশেষ শাখায় পুরস্কার মারজান হোসাইন জারা (মেঘমল্লার) ও শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা কনক চাঁপা চাকমা (জোনাকীর আলো)।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন চিত্রনায়ক রিয়াজ ও অভিনেত্রী নওশীন।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ১৮ ক্যারেট মানের ১৫ গ্রাম স্বর্ণের একটি পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা, একটি সম্মাননাপত্র দেয়া হয়।
এছাড়া জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ক্ষেত্রে আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্তকে এক লাখ টাকা। শ্রেষ্ঠ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রযোজক, শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রযোজক, শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রযোজক ও শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালককে ৫০ হাজার টাকা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ত্রিশ হাজার টাকা করে দেয়া হয়।.