সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের
- MUSIC BANGLA
- May 15, 2016
- 2 min read

বাংলাদেশ নিরক্ষর দেশ হিসেবে বহির্বিশ্বে পরিচিত হলেও এবার সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বাংলাদেশের মেয়ে আয়েশা কাজ করছেন কৃত্রিম মানব অঙ্গ নিয়ে।
বাংলাদেশের মেয়ে আয়েশা আরেফিন এবং তাঁর সহযোগী বিজ্ঞানী রাশি আয়ারের যৌথ প্রয়াসে তাঁরা মানব শরীরে কৃত্রিম অংগ সংস্থাপনের জন্য সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছেন। তাঁদের এই প্রযুক্তির সাহায্যে মানুষের শরীরে কৃত্রিম ফুসফুস সংস্থাপন সম্ভব হবে।
আমেরিকার তৃতীয় ভয়াবহ মহামারী ধরণের রোগ Chronic Obstructive Pulmonary Disease যার ফলে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষ প্রতিবছর মারা যায় কেবল অামেরিকাতেই। আয়েশা আরেফিন এবং তাঁর সহযোগী বিজ্ঞানী রাশি আয়ারের দলের প্রধান কাজ ছিল এই রোগের বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা করা এবং এই রোগে আক্রান্ত রোগীর ফুসফুসের কোষগুলো কিভাবে কাজ করে তা জানা ও এর প্রতিষেধক উদ্ভাবন করা। উক্ত গবেষণা চালানোর সময় আয়েশা ও তাঁর দল মানব শরীরে কৃত্রিম অংঙ্গ সংস্থাপনের জন্য সম্পূর্ণ নতুন এ প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছেন। আয়েশার এই উদ্ভাবনের ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অসামান্য অগ্রগতি সাধিত হল।
আয়েশা নিজের এই আবিষ্কারের বিষয়ে বলেন, “আমি আমার সকল সহযোগী গবেষকদের নিকট কৃতজ্ঞ। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ছাড়া এই অর্জন সম্ভব হতোনা। এখানে সবাই বন্ধুত্ব প্রবণ আমি এখানে আনন্দময় এক পরিবেশে আমার গবেষণা চালিয়েছি। আমাদের উদ্ভাবন নিয়ে আমি আনন্দিত।”
আয়েশা আরেফিন যার ডাকনাম টুম্পা, তিনি ক্যারিয়ার শুরু করেন লস আলামস ন্যাশনাল ল্যাবেরটরির বায়ো-সিকিউরিটি বিভাগে। এর পর একই ল্যাবেরটরিতে তাঁর সাথে পরিচয় হয় ভারতীয় গবেষক প্রখ্যাত টক্সিকোলজিস্ট রাশি আইয়ারের সাথে। পরে রাশি আয়েশাকে অপ্টোজেনিক্স (এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও কৃত্রিম টিস্যু বা কলা তৈরি করা সম্ভব) সঙ্ক্রান্ত গবেষণা কাজের জন্য নিয়োগ দেন।
এর আগে বাংলাদেশের মেয়ে আয়শা আরেফিন টুম্পা ২০১১ সালে আমেরিকার আলামস ন্যাশনাল ল্যাবেরটরির গবেষক ক্রিস ডেটারের বাংলাদেশ সফরের সময় তাঁর নজরে পড়েন নিজের প্রতিভা গুণের মাধ্যমে। ক্রিস আয়েশাকে লস আলামস ন্যাশনাল ল্যাবেরটরিতে উচ্চতর পড়াশোনা ও গবেষণার সুযোগ করিয়ে দেন। আয়েশা বর্তমানে নিজের গবেষণার পাশাপাশি ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকোতে ন্যানো-সায়েন্সের উপর ডক্টরেট করছেন।
পড়াশোনাঃ জিনবিজ্ঞানী আয়েশা আরেফিন টুম্পা ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকোতে ন্যানো-সায়েন্সের উপর ডক্টরেট করছেন। একই সঙ্গে লস আলামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
পরিবারঃ চট্টগ্রামের মেয়ে আয়েশার জন্ম ১৯৮৮ সালের ২৪ আগস্ট, হালিশহরে। অবসরপ্রাপ্ত চাকুরে বেলায়েত হোসেন ও গৃহিণী রোকেয়া বেগমের তিন ছেলে দুই মেয়ের একজন আয়েশা বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামেই।
পছন্দ-অপছন্দঃ টুম্পা পছন্দ করেন পাহাড়-পর্বত বাইতে, দৌড়াতে, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠতে আর বই পড়তে।
অন্যান্যঃ দেশে থাকাকালীন সময়ে জিনবিজ্ঞানী আয়েশা আরেফিন বাংলাদেশের নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি এইচআইভি/এইডস নিয়ে পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেও কাজ করেছেন। তার ইচ্ছা দেশে ফিরেও কাজ করবেন দেশের মানুষের জন্য।
তবে একথা সত্যি যে বাংলাদেশে নারী শিক্ষার হার যেভাবে বেড়ে উঠছে, সেভাবে মেধার প্রচার হচ্ছে না। সেটা হতে পারে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাব। তারপরেও বাংলাদেশের নারীরা বিজ্ঞান কিংবা চিকিত্সায় অবদান রাখছে, এটা অবাক করার মতোই বটে। সুদিনের অপেক্ষায় থাকবে জাতি। উঠে আসবে এমন অনেক মেধাবী তরুণী, এমনটা কাম্য পুরো জাতির।