শত বছরের যৌবনে সুন্দরবন ও বার্ধক্যে সুন্দরবন।
সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি।
এই বনভূমি গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র মোহনায় অবস্থিত এবং বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিস্তৃত।
সুন্দরবন ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০০০০ বর্গ কি.মি। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশের আয়তন প্রায় ৬,০১৭ বর্গ কি.মি।
বনভূমিটিতে, বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরণের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। এছাড়া এই বনভূমিতে বিখ্যাত সুন্দরী ও গোলপাতা গাছও পাওয়া যায়। এই বনের মৌমাছিদের তৈরি মৌচাক থেকে প্রচুর মধু সংগ্রহ করা হয়।
সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় যে, সুন্দরী গাছ থেকেই সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে।
সুন্দরবনের প্রধান বনজ বৈচিত্রের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সুন্দরী, গেওয়া, গরান এবং কেওড়া ।
১৯০৩ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের হিসেব মতে সর্বমোট ২৪৫টি শ্রেণী এবং ৩৩৪টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে সেখানে।
এই প্রতিবেদনের পর সেখানে বিভিন্ন ম্যানগ্রোভ প্রজাতি ও তাদের শ্রেণীকরণের এর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। বনজ প্রকৃতিতে খুব কমই অনুসন্ধান করা হয়েছে এসব পরিবর্তনের হিসেব রাখার জন্য। ঘাস ও গুল্মের মধ্যে রয়েছে শন, নল খাগড়া, গোলপাতা ইত্যাদি। কেওড়া নতুন তৈরি হওয়া পলিভূমিকে নির্দেশ করে এবং এই প্রজাতিটি বন্যপ্রাণীর জন্য জরুরী , বিশেষ করে চিত্রা হরিণের জন্য।
সুন্দরবনে ব্যাপক প্রাণীবৈচিত্র্য বিদ্যমান। প্রাণীবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা সুন্দরবনের কিছু কিছু এলাকায় শিকার নিষিদ্ধ করেছে যার ফলে শর্তহীনভাবে বনজ সম্পদ সংগ্রহ করা যায় না এবং বন্য প্রাণীর জীবনে সামান্যই ব্যাঘাত ঘটে। যদিও এটা স্পষ্ট যে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের প্রাণী সম্পদ হ্রাস পেয়েছে এবং সুন্দরবনও এর বাইরে নয় ।
সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান মৌলিক প্রকৃতির এবং যা বন্য প্রাণীর বিশাল আবসস্থল। কচ্ছপ, গিরগিটি, অজগর এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগার সুন্দরবনের স্থানীয় প্রজাতিগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, মহিষ, গন্ডার এবং কুমিরের এর মত কিছু কিছু প্রজাতি সুন্দরবনে বিরল হয়ে উঠেছে ২১ শতকের শুরু থেকে।
বাংলাদেশের সুন্দরবন বাণিজ্যিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রাজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ সরীসৃপ এবং ৮ টি উভচর প্রজাতির আবাসস্থল। এ থেকে বোঝা যায় যে বাংলাদেশের সুন্দরবনে বিভিন্ন প্রজাতির একটি বড় অংশ বিদ্যমান (যেমনঃ ৩০ শতাংশ সরীসৃপ, ৩৭ শতাংশ পাখি ও ৩৭শতাংশ স্তন্যপায়ী)। পাখি বিষয়ক পর্যবেক্ষণ, পাঠ ও গবেষণার ক্ষেত্রে পাখিবিজ্ঞানীদের জন্য সুন্দরবন এক স্বর্গ।
সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার নামক বাঘ বিশ্ব-বিখ্যাত। ২০০৪ সালের হিসেব মতে, সুন্দরবন প্রায় ৫০০ রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাঘের আবাসস্থল যা বাঘের একক বৃহত্তম অংশ। কিন্তু এই বাঘের সংখ্যা দিনকে-দিন কমে আসছে। ২০১১ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে সুন্দরবনে মোট বাঘের সংখ্যা প্রায় ৩০০। এদের সংরক্ষণের জন্য বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কমিটি নানা ধরণের কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সুন্দরবনের সামগ্রিক মাছের ওপর পূর্বাপর কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়নি। ফলে মাছের বর্তমান অবস্থা বিলুপ্তপ্রায়। শুধু, মানুষ যেসব মাছ খায় এবং যেসব মাছ রপ্তানি উপযোগী, ধারণা করা হয়, সুন্দরবনে শিরদাঁড়াওয়ালা মাছ রয়েছে প্রায় ৩০০ প্রজাতির। সুন্দরবনে মৎস্যসম্পদকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সব মাছ মিলিয়ে হয় সাদা মাছ, বাকিরা বাগদা, গলদা, কাঁকড়া। আশির দশকে চিংড়ির পোনা ধরা শুরু হওয়ার পর মাছের প্রাচুর্য হঠাৎ কমে যায়। একসময় স্থানীয় জনসাধারণের প্রাণিজ প্রোটিন ৮০ শতাংশ মেটাতো মাছ। এখন মাছ খাওয়ার সৌভাগ্য এলাকার খুব কম লোকের ভাগ্যে জোটে। সুন্দরবনে কালা হাঙর, ইলশা কামট, ঠুঁটি কামট, কানুয়া কামট পাওয়া যায়। আগে এদের খালিশপুর এলাকা পর্যন্ত পাওয়া যেতো, এখন অনেক দক্ষিণে সরে গেছে। পশ্চিম সুন্দরবনে এদের উৎপাত বেশি। এরা সংখ্যায় অনেক কমে গেছে, বিশেষ করে কালা হাঙর প্রায় দেখাই যায় না।
এ তো সুন্দরবনের প্রাগ ঐতিহাসিক গল্প, কিন্তু বর্তমানে সুন্দরবনের বাস্তব আবস্থা কি তা জানাতে সম্প্রতি সুন্দরবন ঘুরে বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা জানালেন আমাদের এক বন্ধু, সহপাটী বৃক্ষপ্রেমী সাবা মঙ্গল।
নিচে তার বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরা হল।
কত লক্ষ লক্ষ বছরের নির্যাস মহা প্রকৃতির এমন সৃষ্টি যা আমাদের দেশকে বাঁচিয়ে দেয় ঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে। আসুন আমরা সুন্দরবন বাচাতে আরও উদ্যোগী হতে সকলকে আহবান জানাই,,,,,,,,
সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে অসংখ্য নদী বয়ে চলে আকবাকা কত বিচিত্র এমনি দুকূলে গাছেদের সারি সারি দাড়িয়ে থাকা,,,,,,,, বনের ভিতরে গুহার মতো দেখতে যা গাছ দিয়ে ঘেরা ভিতরে প্রবেশ করলে কি এক গা ছমছম নির্জনতা,,,,,,, আমাদের মত টুরিস্টদের পদভারে বনের ক্ষতি যা হবার তা হয়, বন কর্তৃপক্ষর এই টুরিস্ট এবং ভিতরে প্রবেশ অধিকার কতটুকু ন্যায়সঙ্গত তা প্রশ্ন রাখে যে সকল টুরিস্ট স্পটের সাথে সুন্দরবনকে গুলিয়ে ফেলা, এটা শ্বাসমূল সমৃদ্ধ এক বিশাল বিচিত্র সৃষ্টি প্রকৃতির যা মানুষের পদভারে খতি গ্রস্ত হয়,,,,,,,
টুরিস্টদের ফেলে দেয়া আবর্জনা এই ভাবেই যেখানে সেখানে পড়ে থাকতে দেখা যায়, যা বনের জন্য খুবই ক্ষতি বয়ে আনবে। সুন্দরবনের নির্জনতাই বন সৃষ্টির সহায়ক বিষয় সেখানে মানুষের পদচারণা, লঞ্চে জাহাজে সাউন্ড বক্সে কনসার্ট খুবই হাস্যকর,,,,,, কোনদিন হয়তো শুনব সুন্দরবনের ভিতরেই কনসার্ট দেশের বিখ্যাতরা হেলিকপ্টারে উপস্থিত হবে ব্যস্ততার অজুহাতে বাঘ ভাল্লুক কে গান শোনাতে, সরকারি কর্তারা অহংকারের হাসিতে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাবে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণায়,,,,,,,,, সুন্দরবন বাচাতে যেকোন স্বার্থকে বিসর্জন দিতে হবে, আসুন সুন্দরবন বাচাতে আরও প্রাণস্পর্শী চেতনা গড়ে তুলি।
সুন্দরবনের ভিতরে চিড়িয়াখানা গড়ে তুলেছে, বন কর্তৃপক্ষ যে কিরকম চিড়িয়া তা এখানেই বোঝা যায়, আসলে বনে কোন জীবজন্তুই নেই যা আছে তা টুরিস্টদের ভেলকি দেখানোর জন্য যেমন গাছের বানর আমাদের মত সবাই কে দেখায়,,,,,, হরিন গুলোর দিকে তাকিয়ে কি এক মায়া হয় আমরা ''মানুষ'' এই নিরীহ হরিণের বন্ধিদষা নিয়ে নিয়ে টাকা আয় করি কত ফন্দি ফিকির,
নিথর কুমির পড়ে থাকে মানুষ তা দেখেও মজা লোটে সে সৃষ্টির সেরা জীবের একজন সেই অহংকারে সে দাত খেলাল করে লঞ্চে ছাগলের মাংস দিয়ে ভাত খেয়ে লোলুপ দৃষ্টিতে হরিণের দিকে তাকিয়ে থাকে,,,,,ক্ষমতা পেলে সেও হরিণের গোস্ত দিয়ে ভাত খাবে। আমরা মানুষ বড় বিচিত্র চিড়িয়া হিংস্র প্রাণীকেও হার মানালাম,,,,,,,, সুন্দরবন বাচাতে আরও প্রাণস্পর্শী কি করণীয় তা আপনাদের আমাদের সকলের খুজে বের করা উচিত নয়তো ভয়ংকর নিদারুন করুন রাত অপেক্ষা করছে যে একটি ঢেউ আপনার সকল সাজানো গোছানো দেশ-সংসার তছনছ করে দেবে,,,,,,, ।
সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ এর ভিতর একটি জায়গায় দেখি ঘরবাড়ি আগুনে পোড়ানো, জানতে চাইলে বন কর্তৃপক্ষর একজন বলল, লোকজন গোলপাতা কেটে সংগ্রহ করে এখানে জমা করে রাখে পরে নিয়ে যাওয়ার সময় অস্থায়ী ঘর গুলি পুড়িয়ে দেয়,,,,,,,, ২০১৩ সালে ভ্রমণে যাই আমরা বার/তের জনের একটি দল। মনে পড়ে যায় একটি গানের কথা
''কাটিয়া ভূজঙ্গলের তীর কলিজা করিল চৌচির কেমনে শিকারী তীর মারিলো গো,
বিষ মাখাইয়া তীরের মুখে মারিল তীর আমার বুকে
দেহ থুইয়া প্রাণটি লইয়া যায় আমার অন্তরায়,,,,,,,,,,
মরমী বাউল কবির গানের মর্মবাণী আজ আমাদের দেশের দেহ শরীরে একি নির্মম ভাবে ফলে যাবে ভাবতে অবাক লাগে।
যে সুন্দরবনের ভিতরেই এখন আগুন লাগে প্রায়ই এবং হেটে কিছু দুর যাওয়ার পর দেখি হরিণের বিচরণ ভুমি, শোন-ঘাসের শুকনো অসংখ্য ঝোপ ঝাড় এবং সেখানে আগুন ধরার আশংকা থেকেই যায়,,,,,,,,,। সুন্দরবনের গভীরে মানুষের প্রবেশ অধিকার কতটুকু ন্যায়সঙ্গত বন কর্তৃপক্ষ তা নতুন করে বিবেচনায় নিতে হবে, তানাহলে সুন্দরবন উজাড় হয়ে যাবে, বিষ মাখানো তীর সকলের অন্তর-কলিজা চৌচির-তছনছ-লন্ডভন্ড হবে,
আসুন আমরা শ্লোগান দেই,,,,,,,, সুন্দরবন বাচলে বাংলাদেশ বাচবে।
সুন্দরবনের ভিতরে মসজিদের জন্য দান বাক্স, আমাদের দশ পনের জনের একটি টুরিস্ট দলকে দেখে একজন মোল্লা/মুসল্লি/খাদেম টেবিল চেয়ারে বসে পড়ে টাকা পাওয়ার আশায়, যেখানে সারা সপ্তাহে দু একটা দল ভ্রমণে আসে এবং সেখানেও ভিক্ষা দানের এই পসরা সাজিয়ে ভন্ডামি আয়োজন যেন বাঘ বানর হরিণ শুয়োরেরা এসে নামাজ পড়বে, অদ্ভুত লাগে যে সুন্দরবনের গহীন অরণ্যেও ইসলামের এই বিষ প্রবাহিত হচ্ছে, আসলেই হাস্যকর যতসব আয়োজন, কষ্টদায়ক এইযে আমাদের নদীমাতৃক কৃষিমাতৃক দেশে হারিয়ে প্রতিদিন হারিয়ে যাচ্ছে কৃষি জমি শুকিয়ে যায় নদনদী।
সুন্দরবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য শ্বাসমূল বৃক্ষ বা ম্যানগ্রোভ যা পৃথিবীতে বিরল ঘটনা সৃষ্টি জগতের তাই বাংলাদেশের শ্বাস প্রশ্বাস নিশ্বাস নেবার একমাত্র বন সুন্দরবন। টুরিস্টদের হাটা চলার মাঝে বহু শ্বাসমূলের ক্ষতি হয়। বাংলাদেশকে বাচাতে হলে সুন্দরবন বাচাতে হবে।।