বুদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উত্সব পবিত্র বৌদ্ধ পূর্ণিমা আজ।
বৌদ্ধ ধর্ম মতে, আজ থেকে দুই হাজার ৫৫৮ বছর আগে এই দিনে মহামতি গৌতম বৌদ্ধ আবির্ভূত হয়েছিলেন। তার জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে এর (বৈশাখী পূর্ণিমা) অপর নাম দেয়া হয় ‘বৌদ্ধ পূর্ণিমা’। এই পুণ্যতিথিতে গৌতম বুদ্ধের আবির্ভাব, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহাপরিনির্বাণ ঘটেছিল।
যথাযথ ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এ উত্সব পালন করবেন। বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আজ সকালে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হবে। দেশের বিভিন্ন বুদ্ধ মন্দিরে আলোকসজ্জা, পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠ, কঠিন চিবর দান, আলোচনা সভাসহ থাকছে নানা আয়োজন। জগতের সব প্রাণীর সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ প্রার্থনা।
বৌদ্ধ ধর্মমতে,আজ থেকে আড়াই হাজারেরও বেশি বছর আগে বর্তমান নেপালের অন্তর্গত কপিলাবস্তু রাজ্যের শাক্যবংশীয় রাজা শুদ্ধধনের ঔরসে রানী মায়াদেবীর গর্ভে লুম্বিনী কাননে সিদ্ধার্থ গৌতমের জন্ম হয়। রাজপুত্র সিদ্ধার্থ মানুষের দুঃখে বেদনার্ত হয়ে মুক্তির উপায় খুঁজতে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন সত্যের সন্ধানে। বিভিন্নস্থানে পরিভ্রমণের পর অবশেষে তত্্কালীন উপমহাদেশের বিহার রাজ্যের গয়ার ফলগু নদীর তীরে অশ্বত্থ গাছের নিচে বজ্রাসনে বসে কঠোর সাধনায় লাভ করেন বুদ্ধত্ব। বুদ্ধত্ব পরবর্তী দীর্ঘ ৪৫ বছর ধর্ম প্রচার করে কুশিনারা মল্লদের শালবনে পরিনির্বাপিত হন। তার জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে বৈশাখী পূর্ণিমার অপর নাম দেয়া হয় ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’।
গৌতম বুদ্ধ বিশ্বের মানুষের দুঃখ-বেদনাকে নিজের দুঃখ বলে হূদয় দিয়ে উপলব্ধি করেন। মানব জীবনের দুঃখ তার দৃষ্টিগোচর হলে তিনি সম্পদ, ঐশ্বর্য তথা সংসার জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন এবং জন্ম, জরা, ব্যাধি ও মৃত্যু এ চারটির কারণ উদঘাটন এবং মানুষের শান্তি ও মুক্তির লক্ষ্যে নিমগ্ন হন। বৌদ্ধ ধর্ম কর্মবাদী ধর্ম। এতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক মানুষ তার কাজ অনুসারে ফল পাবে। প্রকৃত কর্মসাধনার মধ্য দিয়ে প্রত্যেক মানুষের পক্ষে বুদ্ধত্ব অর্জন ও নির্বাণ লাভ সম্ভব। মহামতি বুদ্ধ মানুষকে মৈত্রী ভাবনায় ভাবিত হতে বলেছেন, পরের দুঃখে দুঃখী হয়ে, অপরের সুখে সুখী হয়ে উপেক্ষার মনোভাব নিয়ে জীবনযাপনের উপদেশ দিয়েছেন। বিশ্বচরাচরে সকল সত্তা যেন সুখী হয়, এটাই ছিল বুদ্ধের ঐকান্তিক কামনা। বুদ্ধ তার শিক্ষা ও আদর্শ বিস্তারের জন্য গড়ে তুলেছিলেন ‘ভিক্ষু সংঘ’।
এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণীতে বৌদ্ধ সমপ্রদায়কে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। এ উপলক্ষে সকাল ১০ টায় বুদ্ধ পূজা ও সংঘদান। সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বিশেষ ধর্মীয় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা সভায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। সভায় বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয়গুরু সংঘরাজ ড. ধর্মসেন মহাথেরো সভাপতিত্ব করবেন।
এর পর বিশ্ব শান্তি কামনায় প্রদীপ প্রজ্বলন ও সমবেত প্রার্থনা শেষে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে বিকেলে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আয়োজিত বৌদ্ধ নাগরিকদের জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন তারা। বাসাবো সবুজবাগ ধর্মরাজী বৌদ্ধ মহাবিহার বৌদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে সকাল ৮ টায় প্রভাতফেরির আয়োজন করেছে। প্রভাতফেরি বাসাবো বৌদ্ধমন্দিরের সামনে থেকে শুরু হয়ে মুগদা স্টেডিয়ামের সামনে গিয়ে শেষ হবে। এছাড়াও সমবেত প্রার্থনা, ধর্মীয় আলোচনা সভা ও বৌদ্ধ পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
বিকেলে বৌদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে সবুজবাগ বৌদ্ধবিহার মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি। সভায় সভাপতিত্ব করবেন শুদ্ধানন্দ মহাথেরো। বৌদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা বৌদ্ধ সমপ্রদায়কে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।