top of page

চলে গেলেন বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত, সাহিত্যিক নূরজাহান বেগম।

বেগম পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ সোমবার সকালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ৯১ বছর বয়সের এই নারী সাংবাদিক গত ৪ মে থেকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তিনি শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। নুরজাহান বেগমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জন্ম : জুন ৪, ১৯২৫ সাল চালিতাতলী গ্রাম, চাঁদপুর।

বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত এবং সাহিত্যিক। তিনি সওগাত পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের কন্যা। তিনি ভারত উপমহাদেশের প্রথম নারী সাপ্তাহিক পত্রিকা "বেগম" পত্রিকার সূচনালগ্ন থেকে এর সম্পাদনার কাজে জড়িত এবং ছয় দশক ধরে বেগম পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর ডাক নাম ছিল নূরী।

নূরজাহান বেগমের মার নাম ফাতেমা বেগম। গ্রামে থাকার সময়ে নূরজাহান বেগম খালের পানিতে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটান। তাই তার পরিবার গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯২৯ সালে সাড়ে তিন বছর বয়সে মা আর মামা ইয়াকুব আলী শেখের সঙ্গে তিনি কলকাতায় বাবার বাসায় চলে যান যা ছিলো কলকাতার ১১ নম্বর ওয়েলেসলি স্ট্রিটের দোতলা বাড়ি, সওগাত পত্রিকার দপ্তর। সওগাত পত্রিকা অফিসে নিয়মিত সাহিত্য মজলিস বসত যেখানে যোগ দিতেন কাজী নজরুল ইসলাম, খান মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন, আবুল মনসুর আহমদ, আবুল কালাম শামসুদ্দিন, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী, হবীবুল্লাহ বাহার, ইব্রাহীম খাঁ, কাজী মোতাহার হোসেন প্রমুখ৷ এই সাহিত্য মজলিসের নিয়মিত শ্রোতা ছিলেন নূরজাহান। তাঁর প্রথম স্কুল সাখাওয়াত মেমোরিয়াল বিদ্যালয়ে যেখানে তিনি শিশু শ্রেণীতে ভর্তি হন। তাঁর মা প্রতিদিন স্কুলে খাওয়ার জন্য টিফিনে পরোটা, ডিম, হালুয়া, মিষ্টি দিলেও এক উর্দুভাষী মেয়ের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে নূরীকে ফুসলিয়ে তার দুটো গুলগুললার বিনিময়ে তাঁর ভালো ভালো টিফিনগুলো খেয়ে ফেলত। এই ঘটনা তাঁকে পরবর্তীতে মানুষ চিনতে সাহায্য করেছে। বেগম পত্রিকা বেগম পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয় ১৯৪৭ সালের ২০ জুলাই যখন নূরজাহান বেগম বিএ শ্রেণীতে পড়তেন। তাঁর বাবা নাসিরুদ্দীন প্রতিষ্ঠিত বেগম পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন সুফিয়া কামাল। প্রথম চার মাস সম্পাদক হিসেবে এর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। নূরজাহান বেগমের মতো যারা সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল ও লেডি বেবোর্ন কলেজে পড়তেন তারা সবাই মিলে বেগম-এর জন্য কাজ করতেন। বেগমের শুরু থেকে নূরজাহান বেগম ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। তিনি বিয়ে করেন রোকনুজ্জামান খান (দাদা ভাই) কে। ১৯৫০ সালে তাঁরা বাংলাদেশে চলে আসেন। ঢাকায় এসে নারীদের ছবি আঁকতে, লেখার জন্য উৎসাহী দিতেন নূরজাহান বেগম, যাতে তাদের অংশগ্রহণ বাড়ে। যারা লেখা পাঠাত, তাদের ছবিও ছাপাতেন বেগম পত্রিকা। প্রথমদিকে পুরুষরাও এতে লিখতেন। তবে এখন এতে শুধুমাত্র নারীরাই লিখে থাকেন। ১৯৫৪ সালে মার্কিন মহিলা সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী মিসেস আইদা আলসেথ ঢাকায় বেগম পত্রিকা অফিস পরিদর্শন করেন। ১৯৫৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বেগম ক্লাব’ প্রতিষ্ঠিত হয় যার প্রেসিডেন্ট হন বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ, সেক্রেটারি হন নূরজাহান বেগম এবং বেগম সুফিয়া কামাল ছিলেন এর অন্যতম উপদেষ্টা। সম্মাননা নূরজাহান বেগম অনেক সম্মাননা লাভ করেছেন এ পর্যন্ত। ১৯৯৬ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তিত্ত্ব হিসেবে নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠ চক্রের সন্মাননা লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার থেকে রোকেয়া পদক, ১৯৯৯ সালে গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতি থেকে শুভেচ্ছা ক্রেস্ট , ২০০২ সালে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার, ২০০৩ ও ২০০৫ সালে নারী পক্ষ দুর্বার নেটওয়ার্ক ও কন্যা শিশু দিবস উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে তিনি সংবর্ধনা লাভ করেন। এছাড়াও তিনি সংবর্ধিত হয়েছেন বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ, চট্রগ্রাম লেডিজ ক্লাব, চট্রগ্রাম লেখিকা সংঘ, ঢাকা লেডিজ ক্লাব, ঋষিজ শিল্প গোষ্ঠী, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র প্রভৃতি সংগঠনের মাধ্যমে। স্বর্ণপদক পেয়েছেন বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, লেখিকা সংঘ, কাজী জেবুনন্নেসা মাহাবুবুল্লাহ ট্রাষ্ট, বাংলাদেশ সাংবাদিক ফোরাম, রোটারি ক্লাব প্রভৃতি সংগঠন থেকে। ২০১০ সালে পত্রিকা শিল্পে তাঁর অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক নারী সংগঠন ইনার হুইল ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮ সম্মাননা পান তিনি।


  • Twitter Social Icon
  • Facebook Social Icon
  • Google+ Social Icon
  • LinkedIn Social Icon
Follow
"SAREGAMA JUST IN"

  জনপ্রিয় সংবাদ সা রে গা মা

বাংলা গান সা রে গা মা

Print  / Press Ctrl+P
Saregama Bangla

Sa Re Ga Ma News Archive

Write Yours Comments. 

RSS Feed

Reproduction of any content, news or article published on this website is strictly prohibited Privacy. 

bottom of page