‘প্রসূতি মায়ের যত্ন নিন, মাতৃমৃত্যু রোধ করুন’ নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস আজ।
আজ মঙ্গলবার নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস আজ। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘প্রসূতি মায়ের যত্ন নিন, মাতৃমৃত্যু রোধ করুন’। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা নানা কর্মসূচি পালন করবে।
নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটি পালন করবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিরাপদ মাতৃত্ব বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় ১৯৮৭ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে উন্নয়ন-সহযোগীদের বৈঠকে। বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন তারিখে দিবসটি পালন করে। ১৯৯৭ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ২৮ মে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়।
দিবসটি উপলক্ষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এবং প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ চিকিৎসকদের জাতীয় ফোরাম সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
রাষ্ট্রপতির বাণী : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস, ২০১৬ উপলক্ষে এক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তিনি বলেন, ‘‘প্রতি বছরের ন্যায় এবারও যথাযথ গুরুত্বের সাথে দেশে ‘নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস, ২০১৬’ পালিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। দিবসটি পালনের মাধ্যমে মাতৃস্বাস্থ্য সম্পর্কে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে বলে আমি মনে করি।
সুস্থ জাতি গড়তে গর্ভবতী মা ও নবজাতকের পরিচর্যা খুবই জরুরি। স্বাস্থ্যখাতে বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু, নবজাতক ও শিশুমৃত্যু হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, যা একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের এ অগ্রগতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও প্রশংসিত। এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘ পুরস্কার লাভ করেছে। মা ও শিশুস্বাস্থ্যে অসামান্য অবদানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল হেলথ ফর ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক ‘সাউথ – সাউথ’ পুরস্কার অর্জন করে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস, ২০১৬ এর প্রতিপাদ্য ‘সকল প্রসূতির জন্য মানসম্মত সেবা আমাদের অঙ্গীকার’ যা মাতৃমৃত্যু ও নবজাতকের মৃত্যু হ্রাসে খুবই গুরুত্বপূর্র্ণ বলে আমি মনে করি।
আমাদের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত ‘Sustainable Development Goal (SDG)’ অর্জন। সরকার ইতোমধ্যে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষ জনবল নিয়োগ, প্রয়োজনীয় ঔষধ ও যন্ত্রপাতি সরবরাহের মাধ্যমে মা ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছে। এছাড়া মিডওয়াইফারি কোর্স চালু, প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফদের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পদায়ন, মহিলা মাঠকর্মীদের ৬ মাসের ধাত্রীবিদ্যা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম মাতৃমৃত্যু ও নবজাতকের মৃত্যু হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।
মায়েদের ও নবজাতকের নিরাপদ ও মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা খুবই জরুরি। আমি আশা করি সকল পর্যায়ে সমন্বিত ও অর্থবহ উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যু ও নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাসে ঝউএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে। রাষ্ট্রপতি নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস, ২০১৬ উপলক্ষে গৃহীত কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস-২০১৬’ উপলক্ষে আলাদা বাণী প্রদান করেছেন। বাণীতে তিনি বলেন, ‘‘ প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ২৮ মে দেশব্যাপী ‘নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস-২০১৬’ উদ্যাপিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জানাই আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা।
দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘সকল প্রসূতির জন্য মানসম্মত সেবা আমাদের অঙ্গীকার’ যা খুবই সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ। মাতৃস্বাস্থ্য, নিরাপদ প্রসব, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবার গুণগতমান বৃদ্ধি সম্পর্কে মা, পরিবার ও সমাজে সকল স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি করাই এ দিবসের মূল লক্ষ্য।
বর্তমান সরকার মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে অঙ্গীকারবদ্ধ। সরকারের বহুবিধ কার্যকর পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এমডিজি অর্জন করেছে। এ অভাবনীয় সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ আমরা অর্জন করেছি এমডিজি পুরস্কার। এছাড়া নারী ও শিশু স্বাস্থ্যের অগ্রগতির জন্য আমরা পেয়েছি ‘সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড’।
আমাদের এ সাফল্যকে ধরে রেখে আরও এগিয়ে যেতে হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত ‘Sustainable Development Goal (SDG)’ অর্জন করা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু হার প্রতি লক্ষ জীবিত জন্মে ৭০ বা তার নীচে নামিয়ে আনতে হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস সরকারের গৃহীত বিভিন্ন বাস্তবমুখী কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।
আমি আশা করি, সরকারি-বেসরকারি ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হার ব্যাপকহারে হ্রাস করে এসডিজি অর্জনে সক্ষম হব। রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণ করতে পারব।
প্রধানমন্ত্রী ‘নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস-২০১৬’ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।