১৪০০ আলোকবর্ষ দূরে আরেক পৃথিবী সন্ধান, কেপলার-৪৫২বি।
কেপলার-৪৫২বি।
এই পৃথিবীর বাইরে কোনো গ্রহে কি প্রাণের সঞ্চার হয়েছে? অজানা এ প্রশ্নের উত্তর দীর্ঘদিন ধরে খুঁজে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। খুঁজে পেয়েছেন পৃথিবীসদৃশ বেশ কিছু গ্রহ। সম্ভাবনাময় এই গ্রহের কাতারে যোগ হয়েছে আরও একটি গ্রহ। এর নাম কেপলার-৪৫২বি। এটি পৃথিবী থেকে ১ হাজার ৪০০ আলোকবর্ষ দূরে।
গতকাল বৃহস্পতিবার এমন সম্ভাবনার বার্তাই দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা। বাংলাদেশ সময় গতকাল রাতে (যুক্তরাষ্ট্র সময় সকাল ৯টা) এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ আবিষ্কারের কথা জানিয়ে সংস্থাটি বলেছে, গ্রহটিতে প্রাণের বসবাসের ‘সমূহ সম্ভাবনা’ রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নতুন গ্রহটির নাম দেওয়া হয়েছে কেপলার-৪৫২বি। নাসা বলছে, গ্রহটি আমাদের পৃথিবীর মতোই পাথুরে এবং পানি ও বায়ু রয়েছে- এ কথা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে এ যাবৎকালে পৃথিবীর সঙ্গে এ গ্রহটিরই সবচেয়ে বেশি মিল পাওয়া গেছে। কেপলার-৪৫২বি গ্রহটি পৃথিবী থেকে ৬০ শতাংশ বড়।
নাসা জানায়, গ্রহটি পৃথিবীর মতোই একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। তবে সেই নক্ষত্র আমাদের সূর্যের চেয়ে অনেক বেশি উজ্জ্বল। জ্যোতির্বিজ্ঞানের তত্ত্ব অনুযায়ী, নক্ষত্র থেকে যে দূরত্বে রয়েছে তাতে গ্রহটিতে পানি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এটির বৈশিষ্ট্যও পৃথিবীর মতোই। পৃথিবীর বাইরে প্রাণের খোঁজে বা প্রাণের বিকাশের অনুকূল পরিবেশের খোঁজে যে নিরন্তর চেষ্টা চলছে, এই গ্রহের আবিষ্কার সেই দিক থেকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
বহির্বিশ্বে পৃথিবীসদৃশ গ্রহের সন্ধানে কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করছে নাসা।
টেলিস্কোপটি উৎক্ষেপণ করা হয় ২০০৯ সালে।
বাসযোগ্য গ্রহ অনুসন্ধানের এই কর্মযজ্ঞের নাম ‘কেপলার মিশন’। পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে যে দূরত্ব, মহাকাশে অন্য কোনো গ্রহের সঙ্গে তার ধারক-নক্ষত্রের দূরত্বও যদি তেমন হয়, তাহলে সেই গ্রহ বাসযোগ্য হতে পারে। জোতির্বিজ্ঞানীদের ভাষায় এই ব্যবধানের ভেতরের এলাকাকে বলা হয় ‘গোল্ডিলকস জোন’। এই জোনে বাসযোগ্য ‘পৃথিবী’ খুঁজে বের করার দায়িত্বই দেওয়া হয়েছে কেপলারকে।
ছয় বছর ধরে এমন নতুন গ্রহের খোঁজ করছে কেপলার। গোড়াতে প্রায় লাখ খানেক নক্ষত্রকে লক্ষ্যবস্তু ধরে কাজ শুরু করে সে। এখন পর্যন্ত ওই নক্ষত্রগুলোকে আবর্তনকারী তিন হাজার আট শরও বেশি গ্রহের সন্ধান দিয়েছে সে। এগুলোর কোনোটি খুব উত্তপ্ত বা শীতল নয়। তবে সেসব গ্রহের বেশির ভাগই গ্যাসীয়। সেগুলোর আয়তন বৃহস্পতির সমান বা বড়। মাত্র আটটি গ্রহের আয়তন পৃথিবীর আয়তনের দ্বিগুণের কিছু কম।
এই আটটি গ্রহকে ধরেই এগোচ্ছে নাসা। গতকাল ঘোষিত গ্রহ কেপলার-৪৫২বি নিয়ে সংস্থাটি খুবই উচ্ছ্বসিত। কারণ পৃথিবীর সঙ্গে এর সাদৃশ্য অনেক। আমাদের সৌরজগত যে ছায়াপথে, নতুন গ্রহের অবস্থান সেখানেই। অর্থাৎ আকাশগঙ্গাতেই মিলল নতুন পৃথিবী। আমাদের এ ছায়াপথে উত্তর আকাশ ক্রুশের (নর্দান ক্রস) সিগনাস নক্ষত্রপুঞ্জে এর অবস্থান। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব এক হাজার ৪০০ আলোকবর্ষ। তবে এর মাধ্যাকর্ষণ ক্ষমতা দ্বিগুণ। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এর পরিবেশ এতই অনকূল যে সেখানে গাছপালা পাঠালে তা বেঁচে থাকতে পারবে। ধারণা করা হচ্ছে, এর উপরিভাগ পাথুরে এবং এতে পানি ও আকাশে মেঘ রয়েছে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নাসা বলেছে, ‘হয়তো এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছি। কয়েক হাজার বছর ধরে আমরা ভিনগ্রহের প্রাণী সম্পর্কে বহু কল্পনা করেছি, রূপকথা শুনেছি। এখন সেসব স্বপ্নই সত্যি হতে চলেছে হয়তো।’ এ ব্যাপারে জানতে আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে। কারণ ওই গ্রহে প্রাণ ধারণ সম্ভব কি না তা জানতে সেখানে যাওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা এখনো নেই। গ্রহটির দূরত্ব দুই হাজার ৯৩৯ ট্রিলিয়ন মাইল। আর যে আলোর কারণে তাকে দেখা গেল তাও ৫০০ বছরের পুরনো।
এ বছরই গোল্ডিলকস জোনে আরো আটটি গ্রহের সন্ধান পায় কেপলার। দুটোর সঙ্গে পৃথিবীর সর্বাধিক সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া গেছে। এগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে কেপলার-৪৩৮বি এবং কেপলার-৪৪২বি। দুটিই পৃথিবীর চেয়ে বড় এবং লাল বামন নক্ষত্রের চারপাশে আবর্তন করছে। তবে এ ধরনের নক্ষত্র আমাদের সূর্যের চেয়ে শীতল। ফলে ওই গ্রহগুলো পৃথিবীর মতো বাসযোগ্য নয়। সূত্র : আইবিএনলাইভ, দ্য মেইল, এএফপি।