মহানবীকে নিয়ে চলচ্চিত্র, মুসলিম বিশ্বে আলোড়ন!
৩৯ বছর আগে ইসলাম ধর্মের সর্বশেষ নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.)- কে নিয়ে নির্মিত আরেকটি চলচ্চিত্র ইসলামি বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছিল৷ ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া সেই ছবির নাম ছিল, ‘মুহাম্মদ, মেসেঞ্জার অফ গড’৷ সিরীয়-অ্যামেরিকান পরিচালক মুস্তাফা আক্কাদ সেই ছবির জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছিলেন তার ২০ গুন খরচ করে এবার নির্মাণ করা হয়েছে ‘মুহাম্মদ’৷ ১৭১ মিনিটের এ ছবির নির্মাণ ব্যয় ৩৬ মিলিয়ন ইউরো বা ৪০ মিলিয়ন ডলার !
ছবির পরিচালক ইরানের মাজিদ মাজিদি৷ মহানবিকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের কারণ জানাতে গিয়ে এএফপিকে তিনি বলেছেন, ‘‘ কিছু লোকের কারণে ইসলাম ধর্মের এক ধরণের উগ্রতা, হিংস্রতা, সন্ত্রাসের ভাবমূর্তি তৈরি হচ্ছে৷ কিন্তু ইসলাম আসলে এমন নয়৷ ইসলামের নাম ব্যবহার করে যেসব জঙ্গি সংগঠন নৃশংসতা, বর্বরতা করছে, ইসলামের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই৷ আমি চেয়েছি ইসলাম যে শান্তি, বন্ধুত্ব, ভালোবাসার ধর্ম সেটা তুলে ধরতে৷’’
তেহরানের রাস্তার পাশে দেখুন ‘মুহাম্মদ’ (সা.) ছবির কত বড় বিজ্ঞাপন! শুধু বিলবোর্ডে নয়, ইরানের অধিকাংশ দর্শকের হৃদয়েও স্থান করে নিয়েছে ৭ বছর সময় নিয়ে গড়ে তোলা এই চলচ্চিত্র৷ ইরানের বেশিরভাগ দর্শক প্রশংসাই করছেন ছবিটির৷ হলগুলো উপচে পড়ছে দর্শকে৷
শুধু বড় বাজেটের ছবিই নয়, বড় বড় শিল্পী, কলা-কুশলীদের ছবিও ‘মুহাম্মদ’ (সা.)৷ পরিচালক মাজিদ মাজিদি সিনেমাটোগ্রাফির দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনবারের অস্কার বিজয়ী সিনেমাটোগ্রাফার ভিত্তোরিও স্তোরারোকে৷ সংগীত পরিচালনার কাজটি করেছেন ভারতের এ আর রহমান৷ দুবারের অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড জয়ী রহমানের সংগীত দর্শকদের স্বপ্নাবিষ্ট করে রাখায় বড় ভূমিকা রাখছে৷
হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ঘটনাবহুল জীবন থেকে শুধু শৈশবের অংশটাকেই তুলে ধরা হয়েছে এই চলচ্চিত্রে৷ প্রথমে ইরানে মুক্তি পেলেও ছবিটি ইতিমধ্যে বাইরে দেখানোও শুরু হয়েছে৷ মন্ট্রিয়ল চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে ছবিটি৷ওপরে ছবির শুটিংয়ের একটি দৃশ্য৷
মুসলমানদের সবচেয়ে প্রিয় নবির মর্যাদা রক্ষার্থে ছবিটি ইরানের ‘ফজর উৎসব’-এর প্রতিযোগিতার অংশ হয়নি৷ প্রতিযোগিতার বাইরে রেখে দেখানো হয় ছবিটি৷
‘মুহাম্মদ’ শিয়া মুসলমানদের মাঝেই সমাদৃত হচ্ছে৷ সুন্নিরা এ ছবি নিষিদ্ধ করার দাবিও করেছেন৷ ‘‘শরিয়তে নবিদের যে কোনো ধরনের উপস্থাপন নিষিদ্ধ’’ -এই যুক্তিতে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে মিশরের আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়৷ তবে পরিচালক মাজিদ মাজিদির পরিকল্পনা জানিয়েছেন, এই ছবি আসলে তাঁর ‘ট্রিলজি’-র অংশ, অর্থাৎ মুসলমানদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে আরো চলচ্চিত্র নির্মাণের ইচ্ছা আছে তাঁর৷
ইরানে তৈরি হয়েছে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে পূর্ণ্যদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র৷ মুসলিম বিশ্বে এ ছবি নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোড়ন৷ ইরানে খুব জনপ্রিয়তা পেলেও ইরানের বাইরে ছবির প্রচার বন্ধ করা, এমনকি হলেও ছবিটি নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে৷