top of page

বাবা, তুমি কেবলই ছবি নও..- কবীর হোসাইন।


বাংলা সঙ্গীতের কিংবদন্তি শিল্পী খালিদ হাসান মিলু। অকালে চলে গেছেন পৃথিবী ছেড়ে। বিশ্ব বাবা দিবস উপলক্ষে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন তারই সন্তান সঙ্গীতশিল্পী প্রীতম হাসান।

স্মৃতিচারণার চুম্বকাংশ তুলে ধরছেন- কবীর হোসাইন।

১২-১৩ বছরের চটপটে কিশোর। সারাদিন দুষ্টুমি, খেলাধুলা, পড়াশোনা-সমানতালে চলে সব। বড় ভাইয়ের সঙ্গে খুনসুটি, মান-অভিমান কিংবা মায়ের শাড়ির আঁচল ধরে এ ঘর-ও ঘর। আবার কখনো সখনো গলায় বেজে ওঠে বাবার গানের দু’এক কলি আনমনে। রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে বাবার কাছে সারাদিনের অভিযোগ-অনুযোগের ফিরিস্তি অথবা হাজারটা ছেলেমানুষী দাবি। বড় আনন্দে কাটছিল সেসব দিন। এর মাঝে হঠাৎ করেই জানা গেল, বাবা অসুস্থ। পরিবারের সমস্ত আনন্দ ম্লান হতে হতে একদিন নিভেই গেল অপ্রত্যাশিত দমকা হাওয়ায়। কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী বাবা খালিদ হাসান মিলু চলে গেলেন পৃথিবী ছেড়ে। কিশোর প্রীতম হাসান রৌদ্রদগ্ধ পৃথিবীর কঠিন পথে পা বাড়াবার আগেই হারালেন ছায়াদানকারী বটবৃক্ষ বাবাকে। বড় ভাই প্রতীক হাসান ততদিনে পথ চলতে শুরু করেছেন বাবার জগতে, বাংলা সঙ্গীতে। বাবার গান নিজের গলায় তুলে পৌঁছেও গেছেন শ্রোতাদের হৃদয়ে। সেসব দিনের কথা স্মরণ করে প্রীতম বলেন, আমার মনে হয়, আমার চেয়ে বড় ভাই প্রতীক হাসান বেশি সৌভাগ্যবান। বাবার সঙ্গে আমার চেয়ে বেশি সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছেন। তবে ছোট ছেলে হওয়ায় আদরটা কিন্তু আমিই বেশি পেয়েছি। সেই আদরের নমুনাও তুলে ধরলেন প্রীতম। স্মৃতিতে জ্বলজ্বলে হয়ে আছে যেন সেই ঘটনা। তিনি বলেন, ঘটনাটি স্পষ্ট মনে আছে। তখন আমি খুব ছোট। সবেমাত্র স্কুলে ভর্তি হয়েছি। একদিন ক্লাসে অন্য একটা বাচ্চা দুষ্টুমি করছিল আর টিচার থাপ্পড় মেরেছিলেন আমাকে। আমি বাসায় এসে বাবাকে যখন সব বললাম বাবা আমাকে কোলে করে নিয়ে স্কুলে গেলেন। সেই শিক্ষককে ডেকে এনে কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, আপনার ছেলে দুষ্টুমি করছিল তাই মেরেছি। আমি কিন্তু তখনো বাবার কোলে বসে কেঁদেই যাচ্ছি। বাবা আর কিছু শুনলেন না। স্কুল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে আমাকে নিয়ে চলে এলেন। হ্যাঁ, বাবার কোলে বসে কান্না করা সেদিনের সেই ছোট্ট প্রীতম আজ বাবার বিচরণ করা জগতে পথ হাঁটছেন একবুক স্বপ্ন নিয়ে। বাবার দৈহিক উপস্থিতি কিংবা নির্ভরতার হাতস্পর্শ আর পাচ্ছেন না হয়তো, কিন্তু বিদেহী আত্মার আশীর্বাদ চলার পথে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছে নিরন্তর। বাবাকে স্বপ্নে দেখেন?-এমন জিজ্ঞাসায় জানালেন, জীবনে মাত্র একবার না দু’বার স্বপ্নে দেখেছেন। শেষ কবে দেখেছেন মনে করতে পারলেন না। তিনি বলেন, আসলে এত ছোট বয়সে বাবাকে হারিয়েছি, খুব বেশি স্মৃতি তো নেই। স্মৃতিগুলোই তো স্বপ্ন হয়ে দেখা দেয়। বাবাকে নিয়ে স্মৃতি হয় তো খুব বেশি নেই, কিন্তু বাবার গানগুলো তো রয়ে গেছে। হ্যাঁ, গানগুলোর মাঝেই খুঁজে পান বাবাকে। জানালেন বাবার গাওয়া গানগুলোর মধ্যে বেশি ভালো লাগে, ‘সবার কাছে প্রিয় নিজের জীবন’ গানটি। প্রিন্স মাহমুদের কথায় ও সুরে ‘জয়-পরাজয়’ অ্যালবামের সবগুলো গানই অসম্ভব ভালো লাগে। বাবার গাওয়া সমস্ত গান সংরক্ষণের জন্য বড় ভাই প্রতীক হাসান আর্কাইভ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানালেন প্রীতম। সে কাজে যতটা সম্ভব শ্রম দেবেন। আলোচনার শেষদিকে এসে একটু ভিন্ন ধরনের একটি জিজ্ঞাসা- স্রষ্টা যদি বিশেষ ক্ষমতায় বাবার মুখোমুখি করে দেন বাবাকে কী বলবেন? জবাবে বললেন, ব্যাপারটি দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে। প্রথমত যদি নিজের চেষ্টায় জীবনে সফল হতে পারি বাবাকে বলব- বাবা দেখ, তোমার সন্তান নিজের চেষ্টায় নিজ পায়ে দাঁড়িয়েছে। আর যদি ব্যর্থ হই, তাহলে বলব- বাবা, চেষ্টা করেছিলাম।

সুত্র : ভোরের কাগজ।


  • Twitter Social Icon
  • Facebook Social Icon
  • Google+ Social Icon
  • LinkedIn Social Icon
Follow
"SAREGAMA JUST IN"

  জনপ্রিয় সংবাদ সা রে গা মা

বাংলা গান সা রে গা মা

Print  / Press Ctrl+P
Saregama Bangla

Sa Re Ga Ma News Archive

Write Yours Comments. 

RSS Feed

Reproduction of any content, news or article published on this website is strictly prohibited Privacy. 

bottom of page