বাংলা লোক সঙ্গীতের কিংবদন্তি আবদুল আলীম স্মরনে!
বাংলাদেশের লোকসঙ্গীতের ইতিহাসে আবদুল আলীম এক অবিস্মরণীয় নাম। কণ্ঠস্বরের অসাধারণ ঐশ্বর্য্য নিয়ে তিনি জন্মেছিলেন এবং সেক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দী। পেশাগত জীবনে আবদুল আলীম ছিলেন ঢাকা সঙ্গীত কলেজের লোকগীতি বিভাগের অধ্যাপক। বাংলা লোক সঙ্গীতের এই অমর শিল্পী লোক সঙ্গীতকে অবিশ্বাস্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন যেখানে জীবন জগৎ এবং ভাববাদী চিন্তা একাকার হয়ে গিয়েছিল। খুবঅল্প বয়স হতেই বাংলার লোক সঙ্গীতের এই অমর শিল্পী গান গেয়ে নাম করেছিলেন। মাত্র তেরো বছর বয়সে তাঁর গানের প্রথম রেকর্ড হয়।
১৯৩১ সালের আজকের দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
লোক সঙ্গীতের অমর শিল্পী আবদুল আলীমের ৮৫ তম জন্মদিনে সারেগামা পরিবার এর পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা। মরমী শিল্পী আব্দুল আলীমের জন্ম দিনে সারেগামার পরিবার তাঁকে স্মরণ করছে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে এই মেধাবী শিল্পীর দুটি গানের রেকর্ড প্রকাশ করে গ্রামোফোন কোম্পানি। দেশ বিভাগের সময় ঢাকায় চলে আসেন তরুণ আবদুল হালিম। ঢাকায় এসে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে যোগ দেন পূর্ব পাকিস্তান রেডিওতে।
সঙ্গীতশিক্ষার জন্য আবদুল আলীম সংস্পর্শ পান মুমতাজ আলী খান এবং মোহাম্মদ হোসাইন খসরুর মতো উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতবিদদের। স্বতন্ত্র গায়কী আর অসাধারণ কণ্ঠের জন্য তিনি প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেন পল্লীকবি জসীমউদদীন, কানাই লাল শীল, আবদুল লতিফ, খান সমশের আলীসহ অসংখ্য দেশবরেণ্য ব্যক্তির।
সংগীত জীবনে তার দুই শতাধিক রেকর্ড প্রকাশিত হয়। এ দেশের চলচ্চিত্রের প্রথমদিকের শতাধিক ছবিতে প্লে-ব্যাক করেছেন আবদুল আলীম।
১৯৫৬ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ৫০টি ছবিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন আবদুল আলীম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মুখ ও মুখোশ, এদেশ তোমার আমার, জোয়ার এলো, সুতরাং, নদী ও নারী, কাগজের নৌকা, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, সাত ভাই চম্পা, স্বর্ণকমল, গাঁয়ের বধূ, লালন ফকির, দস্যুরানী, উৎসর্গ, তীর ভাঙা ঢেউ। এসব ছবিতে শিল্পীর গাওয়া গান এখনো শ্রোতাদের মুখে মুখে ফেরে। অনন্য দরদী কণ্ঠের অধিকারী আবদুল আলীম মানুষের ভালোবাসা যেমন পেয়েছেন, তেমনি নানা স্বীকৃতি-সম্মাননা-পদক/পুরস্কারও পেয়েছেন।
তিনি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদক, পূর্বাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদক সমিতি পুরস্কার এবং অসাধারণ পারফর্ম্যান্সের জন্য লাহোরে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান মিউজিক কনফারেন্সে ৫টি স্বর্ণপদক লাভ করেন। দেশের অনেক খ্যাতিমান লোকগীতি শিল্পী তার ছাত্র। ১৯৭৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বাংলা লোকসঙ্গীত কুঞ্জের ‘কালো কোকিল’ আবদুল আলীম দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। আবদুল আলীমের গাওয়া জনপ্রিয় গানের মধ্যে অন্যতম হলো– দুয়ারে আইসাছে পালকি, হলুদিয়া পাখি, সর্বনাশা পদ্মা নদী, পদ্মার ঢেউরে, প্রেমের মরা জলে ডুবে না, উজান গাঙ্গের নাইয়া, আমারে সাজাইয়া দিও, মনে বড় আশা ছিলো, বাবু সেলাম বারে বার, সব সখিরে পার করিতে, মনপবনের নাও আমায় লইয়া যাও প্রভৃতি।