top of page

ড.ইউনূসের অর্জন কি বাংলাদেশের নয়?


লেখক : প্রভাষ আমিন।

(অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ)

ফেইসবুক পাতা থেকে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেল প্রাপ্তির মুহুর্তটুকু আমি কোনোদিন ভুলবো না। ১০ বছরের পুরোনো হলেও, স্মৃতিতে একটুও ধুলো জমেনি। তারিখটি মনে নেই। আমি শাজাহানপুর এলাকার সরু রাস্তায় প্যাচ লাগানো যানজটে গাড়ি চালাচ্ছিলাম। তখন মোবাইলে সুখবরটি পাই। খুশিতে আমার প্রায় পাগল হয়ে যাওয়ার দশা। গাড়ি চালাতে চালাতেই পাগলের মত একের পর এক ফোন করছিলাম। কোনো কাজে নয়, আনন্দটা সবার সাথে শেয়ার করতে। আমার জীবনে সবচেয়ে আনন্দময় ঘটনার একটি বাংলাদেশেরে একজন মানুষের নোবেল জয়। এরপর ড. ইউনূসকে নিয়ে দেশে-বিদেশে দারুণ উন্মাদনার সৃষ্টি হয়। আমরা যে পারি, জাতি হিসেবেই আমাদের মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস যুক্ত করেছে ড. ইউনূসের এই সাফল্য। এই সময়ে একের পর এক সম্মানের পালক যুক্ত হয়েছে ড. ইউনূসের মুকুটে। সেই মুকুটে আরেকটি ঝলমলে পালক যুক্ত হতে যাচ্ছে। ব্রাজিলের রিওতে অনুষ্ঠেয় অলিম্পিকের মশাল বহন করবেন তিনি। একজন ব্যক্তি হিসেবে, একটি দেশের জন্য এ সম্মানও কম বড় নয়। কিন্তু এবার আমি তেমন আনন্দিত হতে পারছি না। ১০ বছরে কি আমার আবেগ কমে গেল? আমি কি আরো নির্মোহ হয়ে গেলাম ? নিজেকেই এ প্রশ্ন করেছি বারবার। কিন্তু উত্তর হলো, বয়স যাই হোক, আমার আবেগ এখনও ছেলেমানুষি, বাধভাঙ্গা। বাংলাদেশের যে কোনো অর্জন আমাকে উদ্বেলিত করে। সম্প্রতি ক্রিকেটে বাংলাদেশে সাফল্য বারবার আমাকে আনন্দ সাগরে ভাসিয়েছে। কিন্তু ড. ইউনূসের অর্জন আর আমাকে আগের মত উদ্বেলিত করে না। বরং দারুণ একটা আক্ষেপ আমাকে পীড়িত করে। ড. ইউনূস হয়ে উঠতে পারতেন জাতির অভিভাবক, আন্তর্জাতিক বিবেক। কিন্তু এই সময়ে তিনি দেশের ভেতরে একের পর বিতর্কে জড়িয়েছেন। ওয়ান ইলাভেনে তাঁর জন্য অনুকূল পরিবেশে রাজনীতি করার আকাঙ্খা জাগিয়েও হাল ছেড়ে দিয়েছেন। এই সময়ে তিনি যতটা বিশ্বমানব হয়েছেন, ততটা বাংলাদেশী হতে পারেননি। আমি জানি, এইটুকু পড়ে অনেকেই আমাকে গালাগাল শুরু করে দেবেন। আমরা যোগ্য লোককে সম্মান জানাতে পারি না, আমরা পরশ্রীকাতর, সরকারের দালাল ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ড. ইউনূসের অর্জনকে বাংলাদেশের অর্জন হিসেবে বিবেচনা করতে না পারার বেদনা যে আমাকে কতটা পোড়ায়, তা লিখে বোঝানোর সাধ্য আমার নেই। এটা অনস্বীকার্য জীবিত বাংলাদেশীদের মধ্যে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে পরিচিত ও সম্মানিত মানুষ। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাইনবোর্ড ড. ইউনূস। তার নোবেলপ্রাপ্তির পর গত ১০ বছরে বাংলাদেশ যে গতিতে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়েছে, তা স্বীকৃতি পেয়েছে বিশ্বনেতৃত্বের। এই অগ্রযাত্রায় আরো গতি এনে দিতে পারতেন ড. ইউনূস একাই। তাঁর প্রভাব আমাদের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করতে পারতো। কিন্তু আমি গভীর বেদনার সাথে বলছি, এই যাত্রায় ড. ইউনূসের কোনোই অবদান নেই। কেউ কেউ বলতে পারেন, এই সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার ড. ইউনূসকে অনেক হেনস্থা করেছে। তাঁর হাতে গড়া গ্রামীণ ব্যাংক থেকে তাকে জোর করে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। জোর করে হয়তো, কিন্তু তাঁকে সরানোটা আইনগতভাবেই হয়েছে। কোনো আইনই কারো আজীবন একটি পদ আকড়ে থাকা অনুমোদন করে না। এটা ঠিক, আওয়ামী লীগ ড. ইউনূসের প্রতি অনেক বেশি আক্রোশ দেখিয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ড. ইউনূসের বিদায়টা আরো সম্মানজনক হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাগ করে বাংলাদেশকেই যে পরিত্যাগ করে ফেলেছেন ড. ইউনূস। আমার কষ্টটা এখানেই। বুকভরা স্বপ্ন, প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকায় চট্টগ্রামের জোবরা গ্রাম থেকে গ্রামীণ ব্যাংককে যিনি নোবেল মঞ্চে নিয়ে গেছেন; সেই তিনি কেন এত সহজে হাল ছেড়ে দেবেন। ড. ইউনূসের প্রচারণার জন্য শক্তিশালী ই্উনূস সেন্টার রয়েছে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ড. ইউনূস কিছু করলেই ইউনূস সেন্টার দারুণ দক্ষতায় তা প্রচার করে। কিন্তু সেই তালিকায় কখনোই বাংলাদেশকে খুঁজে পাওয়া যায় না। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের কোনো সঙ্কটে ড. ইউনূসকে কখনোই পাশে পাওয়া যায়নি। এই যে এখন বাংলাদেশ তার ইতিহাসে সবচেয়ে অন্ধকার সময় পার করছে, আমাদের তরুণরা বিভ্রান্ত হয়ে জড়িয়ে পড়ছে জঙ্গী তৎপরতায়; তখন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস আশার আলোর মশাল নিয়ে বাংলাদেশের পাশে দাড়াতে পারতেন। সুন্দরবনকে বাঁচাতে মানুষ যখন রাজপথে, তখনও তাদের পাশে ইউনূস নেই। বন্যায় ভেসে যাচ্ছে দেশ, কোথায় ড. ইউনূস? বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর হয়তো তিনি তার সামাজিক ব্যবসা আর ক্ষুদ্র ঋণের বাহিনী পাঠাবেন দুর্গত এলাকায়। বাংলাদেশে যা যা ঘটছে, তা যদি বাংলাদেশে না ঘটে নিকারাগুয়ায় ঘটতো; ড. ইউনূস হয়তো ছুটে যেতেন, দারুণ বক্তৃতা দিতেন। সব বিবেচনাতেই ড. ইউনূসের তালিকায় নেই বাংলাদেশ। গত ১০ বাংলাদেশের কয় জন সাংবাদিক ড. ইউনূসের সাক্ষাত পেয়েছেন বা সাক্ষাতকার নিতে পেরেছেন? বাংলাদেশের কোনো ব্যক্তির অলিম্পিকের মশাল বহনের সম্মান বিরল। ড. ইউনূসের এত বড় অর্জনকে বাংলাদেশের অর্জন হিসেবে মিলিয়ে আমি উল্লাস করতে পারছি না, এটা আমার জন্য সত্যিই কষ্টের, গভীর বেদনার।

Probhash Amin

Head of ATN News.

  • Twitter Social Icon
  • Facebook Social Icon
  • Google+ Social Icon
  • LinkedIn Social Icon
Follow
"SAREGAMA JUST IN"

  জনপ্রিয় সংবাদ সা রে গা মা

বাংলা গান সা রে গা মা

Print  / Press Ctrl+P
Saregama Bangla

Sa Re Ga Ma News Archive

Write Yours Comments. 

RSS Feed

Reproduction of any content, news or article published on this website is strictly prohibited Privacy. 

bottom of page