সন্তানের বেড়ে ওঠায় “মা” ই হতে পরে আদর্শ বন্ধু!
সন্তান জন্ম নেয়ার পর থেকে তার বেড়ে ওঠা, বড় হওয়া, জীবন গঠন সব কিছুতেই মায়ের সরাসরি অবদান থাকে। তার দেখভাল করা, সঙ্গ দেয়া সর্বপরি তাকে বোঝা মায়ের পক্ষেই সম্ভব, যা আর অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়। সেই মা যদি হতে পারেন সন্তানের সবচেয়ে কাছের বন্ধু তাহলে তার বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না।
ছবি : মা ও মেয়ে পলি সায়ন্তনী (কন্ঠশিল্পী)ডানে ও তার মেয়ে রাইসা বামে। ফটোগ্রাফী : নাহিদ অসিম।
বয়ঃসন্ধিকাল সব ছেলেমেয়ের জীবনে এক বড় ধরনের পরীক্ষা। শরীর-মনে দ্রুত ঘটতে থাকা পরিবর্তন গুলো মানিয়ে নেয়া তার জন্য মোটামুটি কষ্টকর। ওদের এই বিশেষ সমস্যার সময়ে সঠিক সমাধান দিতে বন্ধুর মতো একমাত্র মা-ই পারেন পাশে থাকতে। এ বয়সের ছেলে-মেয়েদের মনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব গুলোকে মা হয়ে এড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়। সহানুভুতির সঙ্গে সমস্যাগুলো বুঝতে হবে, খোলামেলা আলোচনা করে সমাধানে আসতে হবে। তবে ছেলেদের সমস্যায় বাবাও কিছুটা ভূমিকা পালন করতে পারেন। বয়ঃসন্ধির সমস্যা আর মনস্তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।
ছবি : মা ও মেয়ে পলি সায়ন্তনী (কন্ঠশিল্পী) ও তার মেয়ে রাইসা । ফটোগ্রাফী : নাহিদ অসিম।
বাড়ির সদস্যদের মাঝে নানা ধরনের বই পড়ার অভ্যাস থাকা জরুরি। এসব বই থেকে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনবোধের আলোয় ছেলে মেয়েরা সুস্থ যৌন চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে পারে। ছেলেমেয়েকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে যৌবনের পরিবর্তন সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞান মা আগেই জেনে বুঝে নিতে পারেন। এরপর সন্তানদের বোঝাতে পারেন ভালোভাবে। ঠিক এই কাজটি সমবয়সী কোনো বন্ধুর পক্ষে সহজ নয়। কথায় কথায় তর্ক করা বা বড়দের অগ্রাহ্য করার প্রবণতা এ বয়সে থাকবেই। তাই উত্তেজিত না হয়ে শান্তভাবে মা বুঝিয়ে বলতে পারেন। মাঝে মাঝে তাদের যৌক্তিক জিদকে প্রাধান্য দিলেন, ক্ষতির তো কিছু নেই। কিছু অহেতুক বায়না মেটাতে গিয়ে সামান্য সময় বা অর্থ ব্যয় হলেও করতে পারেন। তবে অবশ্যই বুঝতে হবে এতে তার ভবিষ্যৎ ক্ষতির আশঙ্কা আছে কিনা। না থাকলে আপনিও বয়সটা তাদের কাতারে এনে করে নিন কিছুটা পাগলামি। ছেলে-মেয়েদের নিজস্ব কল্পনার জগতটাকে ভেঙে দেয়া যাবে না। বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখাতে পারেন বেশি করে। তাতে সন্তানের আগ্রহ বাড়বে।
ছবি : মা ও মেয়ে পলি সায়ন্তনী (কন্ঠশিল্পী) ও তার মেয়ে রাইসা । ফটোগ্রাফী : নাহিদ অসিম।
১৫ থেকে ১৬ বছরে পা দেয়ার পর ছেলে-মেয়েদের মাঝে প্রেম বিষয়ক ব্যাপার গুলি উকি-ঝুঁকি দিতে পারে। রোমাঞ্চেরও সৃষ্টি হতে পারে মনে। এ সময় অনেক সন্তান মায়ের সঙ্গে সব বিষয় শেয়ার করতে নাও চাইতে পারে। মা যদি সন্তানের ভালো বন্ধু হয় তবে ছোটবেলা থেকেই এসব বিষয়ে সন্তানের পরামর্শ চলে। প্রেম বিষয়ে আগে থেকেই খোলামেলা আলোচনা তাকে হালকা করে রাখে। সন্তানের বেড়ে ওঠার সময় সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারে একজন ভালো বন্ধু ‘মা’।
ছবি : মা ও মেয়ে পলি সায়ন্তনী (কন্ঠশিল্পী) ও তার মেয়ে রাইসা । ফটোগ্রাফী : নাহিদ অসিম।
জীবনের শক্ত ভিত রচনার এই সময়টা যাতে উপযুক্ত ব্যবহার হয় তার জন্য বুদ্ধির সঙ্গে তাকে বোঝান। মাঝে মাঝে সন্তানদের নিয়ে অবসরে বিনোদনের সঙ্গেও থাকতে পারেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মেয়েদের ক্ষেত্রে খুব বেশি সমস্যা না হলেও ছেলেদেরকে নানা ধরনের নেশাদ্রব্য হাতছানি দেয় কিশোর বয়স থেকেই। সমবয়সী বন্ধুরা অনেক সময় এসব বিষয়ে উৎসাহিত করতে পারে। কিন্তু মা নেশার কুফল সম্পর্কে বুঝিয়ে তার সন্তানকে সাবধান রাখতে পারেন সবসময়। এছাড়াও তাদের শপিং এমন কি বন্ধুকে দেয়ার গিফট কেনার সময়ও পারলে সঙ্গে থাকুন। নিজ হাতে টাকা খরচের অভ্যাসটা বড় হবার পরে হলেই ভালো। একজন সচেতন মা অবশ্যই জানেন, তার সন্তানের খুব ভালো সঙ্গ একমাত্র তিনিই নিশ্চিত করতে পারেন যা অন্য কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।
রিপোর্ট : শাওন রহমান।