কুমিরের মাংস রপ্তানি করবে রেপটাইলসফার্ম ময়মনসিং!
বেশ কিছুদিন ধরে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে কুমিরের চামড়া। দেশে আসছে বিদেশি মুদ্রা। চামড়ার পর এবার মাংস রপ্তানির চিন্তাভাবনা চলছে। আর এ লক্ষ্যে মাংস রপ্তানির প্রক্রিয়া শুরু করবে ময়মনসিংহে রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড।
সম্প্রতি ওই খামারে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্যই পাওয়া গেল।
ময়মনসিংহের ভালুকার উথুরা ইউনিয়নের হাতিবেড় গ্রামে অবস্থিত ময়মনসিংহে রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড নামের কুমিরের খামারটি। ২০০৪ সালে এটি দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে কুমিরের প্রজনন শুরু করে। ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে তারা কুমিরের চামড়া রপ্তানি শুরু করে। এখন পর্যন্ত মূলত জাপানে বছরে ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ চামড়া রপ্তানি হচ্ছে। এর পরিমাণ বাড়িয়ে বছরে দুই হাজার করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। খামারের কর্মকর্তারা বলেন, কুমিরের মাংস এখনো কোনো কাজে আসছে না।
২০১৮-১৯ সালের মধ্যে কুমিরের মাংস রপ্তানি করা সম্ভব বলে মনে করছেন তাঁরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, এই অজপাড়া গাঁয়ে ১৫ একর জায়গায় গড়ে উঠেছে কুমিরের খামারটি। বর্তমানে এখানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় এক হাজার ৪৫০টি কুমির আছে। ডিম দেওয়ার জন্য আছে বড় ৪০টি পুকুর। জন্মের পর ডিম ও বাচ্চা দিতে একটি কুমিরের আট থেকে নয় বছর লাগে। বর্তমানে ৭০-৮০টি কুমির ডিম দিচ্ছে। রপ্তানির জন্য প্রয়োজন আড়াই থেকে তিন বছর বয়সী কুমিরের চামড়া। ইলেকট্রিক শক দিয়ে অচেতন করার পর কুমিরের গল কেটে চামড়া ছাড়ানো হয়। এ কাজে পারদর্শী মূলত নারীরা।
টেবিলের পাশে রাখা হয়েছে কুমিরের অনেকগুলো ডিম।
খামার ব্যবস্থাপক আবু সাইম মোহাম্মদ আরিফ বলেন, তাঁরা এখন কুমিরের মাংস রপ্তানির প্রক্রিয়ার দিকে এগোচ্ছেন। বর্তমানে চামড়া রপ্তানির পর কুমিরের দেহ ধ্বংস করা হচ্ছে। বিদেশে কুমিরের মাংসের চাহিদা অনেক। দেশেও বড় বড় হোটেলে, বিশেষ করে বিদেশি নাগরিকেরা যেখানে বেশি থাকেন, সেখানেও এই মাংসের চাহিদা আছে। তবে দেশে কুমিরের মাংস বিক্রি করার নিয়ম নেই। যেসব ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো সম্ভব নয়, ওই সব ডিমও ফেলে দেওয়া হচ্ছে।এই কর্মকর্তার মতে, সরকার কুমিরের প্রজননসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা তৈরি করে নজরদারি বাড়াতে পারে। বর্তমানে আরেকটি প্রতিষ্ঠান কুমিরের প্রজনন নিয়ে কাজ শুরু করেছে। আরও প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোক্তা এ খাতে এগিয়ে আসতে পারে। এ ব্যবসায় পুঁজি অনেক লাগে, তবে তা একসঙ্গে লাগে না। লাভের মুখ দেখতে একটু সময় লাগে—এই যা।
এ খামারের বর্তমান মালিক মেজবাউল হক ও রাজীব সোম। প্রথমে মালয়েশিয়া থেকে আনা ৭৫টি কুমির দিয়ে খামারটির যাত্রা শুরু হয়। কুমিরের খাবার ব্রয়লার মুরগি ও মাছ খামারের ভেতরেই উৎপাদন করা হচ্ছে। এখানে আছেন তিনজন নারীসহ প্রায় ২০ জন কর্মচারী। তবে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে চামড়া রপ্তানির সময় এ তিনজন নারীসহ আশপাশের গ্রামের ২০ জন নারী চামড়া ছাড়ানোর কাজ করেন।
কর্মী আবেদা সুলতানা আড়াই বছর ধরে এখানে কাজ করছেন। তিনি চামড়া ছাড়ান, অন্য সময়ে মুরগি ও অন্যান্য বিষয় দেখাশোনা করেন। তিনি বলেন, ‘কুমির ছিলাইতে প্রথম প্রথম ডর (ভয়) লাগত। এখন দুজন মিলে দিনে তিনটি কুমির ছিলাইতে পারি। এখানে যে বেতন দেয়, তা দিয়ে ভালোই চলে।’
খামারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, একেকটি কুমির ৮০ থেকে ১০০ বছর বাঁচে। এখানকার কুমিরের ওজন সর্বোচ্চ ৬০০ কেজি হয়। বিভিন্ন ভাইরাসজনিত রোগবালাই ছাড়া কুমিরের তেমন বড় কোনো অসুখ হয় না। তবে কুমির নিজেদের মধ্যে লড়াই করে আহত হয়।
খামারে বর্তমানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ। কারণ, বিভিন্ন শব্দে কুমিরের প্রজননে সমস্যা হয়।
খামারের বিভিন্ন ঘর সাজানোতে ব্যবহার করা হয়েছে কুমিরের কঙ্কাল।
মানসুরা হোসাইন ও কামরান পারভেজ, ময়মনসিংহ থেকে ফিরে সুত্র: প্রথম আলো।