top of page

বাঙালী ফ্যাশন আইকন একজন বিবি রাসেল!

বিশ্বের অন্যতম ফ্যাশন আইকন বাংলাদেশের বিবি রাসেল। ঢাকার মা আর রংপুরের বাবার কোলে ১৯৫০ সালে (চট্টগ্রাম) চাটগায়ে জন্মগ্রহন করেন বিবি। শৈশবের লেখাপড়া ঢাকায় কামরুন্নেছাস্কুল, এরপর হোম ইকোনমিক্স কলেজ, তারপরই (লন্ডন) বিলেতে গ্রাজুয়েশন করতে যাওয়া। সেদিনের সেই বিবি নামের ‘বিলেত ফেরৎ’ বাংলার মেয়েটি দেশে ফিরে এসে ‘বিবি রাসেল’ আর বিবি প্রেডাকশন পরিচিতিতে আন্তর্জাতিক আঙ্গিনায় সাড়া ফেলবে -কে জানতো!

পরিবারের পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে বিবি ছিলেন তৃতীয়। মা চাইতেন, মেয়ে লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়াক। আর সেই সূত্র ধরেই ১৯৭২ সালে প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে লন্ডন কলেজ অব ফ্যাশনে পড়তে যান। একই সঙ্গে শুরু করেন মডেলিং। ১৯৭৫ সালে নিজের স্নাতক প্রদর্শনীতে নিজেই মডেলিং করে হৈচৈ ফেলেন। এরপর বাংলাদেশের বিবিকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। মেধা ও ফ্যাশন নিয়ে ব্যতিক্রমী চিন্তার কারণে বিশ্বের ফ্যাশনবোদ্ধাদের আগ্রহের কেন্দ্রে চলে এলেন পাঁচ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার বিবি।


স্নাতক শেষের পর পরই তিনি মডেলিংয়ের প্রস্তাব পেলেন ইভস সেন্ট লরেন্ট, কার্ল লেগার ফিল্ড, জর্জিও আর্মানির মতো বিখ্যাত ব্র্যান্ডের তরফ থেকে। ১৯৭৬ সালে মডেলিং ক্যারিয়ারের সূচনা করেন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন ভোগ, হারপার’স বাজার এবং কসমোপলিটনের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় মডেল। বিশ্বের অভিজাত প্রায় সব ব্র্যান্ডের মডেল হয়েছেন। যেমন- কোডাক, কোকো শ্যানেল, বিএমডাবি্লউ, ইভস সেন্ট লরেন্ট, টয়োটা, কার্ল লেগার ফিল্ড, জর্জিও আরমানি ইত্যাদি। ক্যাটওয়াক করেন নাওমি ক্যাম্পবেল, ক্লদিয়া শিফারের মতো সুপার মডেলদের সঙ্গে। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে দেশীয় বস্ত্র ও হস্তশিল্প নিয়ে কাজ করার ইচ্ছায় স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন বিবি ১৯৯৪ সালে। ইউরোপীয় মডেলিং ও ফ্যাশন ডিজাইনিং জগতের পিছুটান ছেড়ে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত তাঁতপল্লীতে গিয়ে গামছা, খাদি কিংবা জামদানির মতো দেশীয় বস্ত্র সংরক্ষণ ও উন্নয়নে মনোযোগ দিয়েছিলেন। মনোযোগ দিয়েছিলেন দেশীয় হস্তশিল্পকে বিশ্ববাজারে পরিচয় করিয়ে দিতে। চেষ্টা চালিয়ে যান মসলিনের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে। দেশের গামছা দিয়ে বিশ্ব মাতিয়েছেন। কয়েক বছরের চেষ্টায় ভারতের রাজস্থানের প্রাচীন কোটা শাড়ি পুনরুদ্ধার করেছেন।


১৯৯৫ সালের ১৩ জুলাই দেশে গড়ে তোলেন বিবি প্রডাকশন। ইউনেসকোর সহায়তায় তিনি ইউরোপে তিনটি বড় শো করেন। বিবি রাসেল সব সময় সুতির ওপরই জোর দিয়ে কাপড়চোপড় তৈরি করেন। তিনি মনে করেন, সুতির কাপড় যেকোনো ঋতুতেই শরীরকে আরাম দেয়। খাদি তাঁর সবচেয়ে পছন্দের। বিবি প্রডাকশনের কাপড়চোপড়ের মধ্যে ৬০ শতাংশই খাদি দিয়ে তৈরি। বিবি প্রডাকসের মাধ্যমে বাংলাদেশের ফ্যাশন, বস্ত্রশিল্প ও হস্তশিল্প উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের হস্তশিল্পীদের হাতে জাদু রয়েছে। দেশের আনাচকানাচ ঘুরে বেড়িয়ে তিনি তাঁতিদের খোঁজখবর নেন। শুধু দেশেই নয়, ভারত, শ্রীলঙ্কা, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, ডেনমার্ক ও কম্বোডিয়ার তাঁতিদের নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। ইউনেসকোর সহায়তায় ১৯৯৬ সালে ‘উইভারস অব বাংলাদেশ’ নামে বিবি প্রডাকশন প্রথম ফ্যাশন শো করে প্যারিসে। বিবির কাজের একমাত্র লক্ষ্য, ফ্যাশনের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন। হাতে বোনা খাদি, মসলিন, জামদানি ও উন্নতমানের সুতি কাপড়ের ব্যবহারে তাঁর ডিজাইন ও ফ্যাশন সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে অন্য রকম মর্যাদায় পৌঁছে দিয়েছে। বিশ্বের আটটি দেশে আটটি দোকান খোলা হচ্ছে বিবি রাসেলের নামে, যেখানে পাওয়া যায় তাঁর ডিজাইন করা দেশি তাঁতের পোশাক। এসবের বাইরেও কিছু কাজ আছে বিবির। গৌতম ঘোষের ‘মনের মানুষ’ চলচ্চিত্রের পোশাক পরিকল্পনা করছেন তিনি। এর আগে তানভীর মোকাম্মেলের ‘লালন’ ছবির পোশাক পরিকল্পনাও করেছিলেন। আরণ্যক নাট্যদলের ‘এবং বিদ্যাসাগর’ মঞ্চ নাটকের পোশাক পরিকল্পকও তিনি।


বিবির জীবন ও কর্ম নিয়ে সোনিয়া কিরপালানি নির্মাণ করেছেন প্রামাণ্যচিত্র ‘সিল্কেন সিনার্জি’। বিবি অর্জন করেছেন দেশি-বিদেশি অসংখ্য পুরস্কার, সম্মাননা ও স্বীকৃতি। ১৯৯৭ সালে ‘এল ম্যাগাজিন’-এর বিবেচনায় বর্ষসেরা নারী হিসেবে মনোনীত হন বিবি রাসেল। ১৯৯৯ সালে লন্ডন আর্ট ইউনিভার্সিটির কাছ থেকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ পান বিবি রাসেল। একই বছর ইউনেসকো তাঁকে ‘ডিজাইনার ফর ডেভেলপমেন্ট’ খেতাব দেয়। ২০০১ সালে ইউনেসকো তাঁকে ‘শান্তির শিল্পী’ পদক দেয়। ২০০৪ সালে স্পেনের জাতিসংঘ সমিতির শান্তি পুরস্কার পান বিবি। ২০০৮ সালে ইউএনএইডস তাঁকে শুভেচ্ছাদূত মনোনীত করে। ২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়াারি স্পেনের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ‘দ্য ক্রস অব অফিসার অব দি অর্ডার অব কুইন ইসাবেলা’, নিউ ইয়র্ক থিওলজিক্যাল সেমিনারি থেকে ‘আরবান অ্যাঞ্জেল অ্যাওয়ার্ড-২০১১’ এবং জার্মানির ভিশন সামিট থেকে ‘ভিশন অ্যাওয়ার্ড-২০১১’ পান বিবি রাসেল। সর্বশেষ তাঁতশিল্পে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য ‘আইসিটিএ ডিজাইন অ্যাওয়ার্ড-২০১২’ পেয়েছেন খ্যাতনামা এই ফ্যাশন ডিজাইনার। এখন বিবি গবেষণা করে বের করার চেষ্টা করছেন বিস্কুটের খালি প্যাকেট, চিপসের প্যাকেট কিভাবে কাজে লাগানো যায়।

  • Twitter Social Icon
  • Facebook Social Icon
  • Google+ Social Icon
  • LinkedIn Social Icon
Follow
"SAREGAMA JUST IN"

  জনপ্রিয় সংবাদ সা রে গা মা

বাংলা গান সা রে গা মা

Print  / Press Ctrl+P
Saregama Bangla

Sa Re Ga Ma News Archive

Write Yours Comments. 

RSS Feed

Reproduction of any content, news or article published on this website is strictly prohibited Privacy. 

bottom of page