দেশীয় সংস্কৃতির মূল ধারায় কতটুকু ভূমিকা রাখছে আমাদের গনমাধ্যম ও স্পনসররা?
দেশীয় সংস্কৃতির মূল ধারায় কতটুকু ভূমিকা রাখছে আমাদের গনমাধ্যম ও স্পনসর প্রতিষ্ঠানগুল এ নিয়ে কিছু বাস্তবধর্মী কথা বললেন বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় নজরুল সংগীতশিল্পী, সংগঠক ও গবেষক সুজিত মোস্তফা।
আজ নজরুল প্রয়াণ দিবস। বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, রেডিও এবং খবরের কাগজগুলো তাঁকে নিয়ে সরব। এই উচ্ছ্বাস আবার দেখা যাবে তাঁর জয়ন্তীর সময়। কত অসংখ্যবার এই কথাগুলো যে বলা হয়েছে এবং হচ্ছে তার কোন হিসাব নেই। কিন্তু আমাদের গণমাধ্যমগুলোর এসব নিয়ে কোন মাথাব্যাথাই নেই। আমরা ভুলে যাই যে আমাদের জাতীয় পরিচয় এদের অবদানকে বাদ দিয়ে সম্ভব নয়। এবং শুধু অবদান স্বীকারের জন্য নয়, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ আমাদের জন্য সবসময়ই প্রাসঙ্গিক। শুধু নজরুল একা যে দিক নির্দশনা দিয়েছেন সেটুকু অনুসরণ করতে পারলেই অনেক জাতীয় সঙ্কট আমাদের জন্য সৃষ্টি হতোনা এবং অনেক সঙ্কট আমরা সহজেই মোকাবেলা করতে পারতাম।
কি হয় প্রতিদিনের কিছুটা করে সময় আমাদের পঞ্চকবির সৃষ্টি, আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংগীত সংস্কৃতি, নৃত্য ইত্যাদি প্রচারের জন্য যদি চ্যানেলগুলো ব্যয় করে? স্পনসররা বলবেন বেশির ভাগ দর্শক-শ্রোতা এইসব অনুষ্ঠান দেখবে না। আমি বলবো, এখন যে সমস্ত অনুষ্ঠান প্রচার হচ্ছে সেগুলোই বা কত সংখ্যক দর্শক-শ্রোতা দেখছেন? আপনারা নিজেও জানেন বাংলাদেশের অধিকাংশ দর্শক-শ্রোতা এখন দৃষ্টি দিয়েছে ভারতীয় চ্যানেল জি বাংলা, স্টার জলসা, কালার, সনি ইত্যাদির দিকে।
বাংলাদেশের বিজ্ঞাপণদাতারাও এখন ঝুঁকেছেন ভারতীয় চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপণ প্রচারে। তাহলে? এই ব্যর্থতার পরেও নিজেদের সংস্কৃতির মূল ধারাগুলোর দিকে নজর দিতে আপনারা কুন্ঠিত কেন? নিজেদের সম্পদ নিয়ে আমাদের গর্ব করতে সমস্যা কি? আমাদের সংস্কৃতির মান খারাপ? যথেষ্ট শিল্পী নেই? আমি বলবো আপনারা বাছাইয়ে আরো সতর্ক হোন, আসল ভালো শিল্পীদের খুঁজে বের করুন। আপনাদের অবহেলার জন্য অনেকেই চর্চা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন। এই দায়ভার আপনাদের।
স্পনসররা রবীন্দ্র-নজরুল বা নৃত্যানুষ্ঠানের কথা শুনলে পিছিয়ে যায় ? স্পনসররাতো আমাদের দেশেরই সন্তান, তাদের ঠিকমত বুঝিয়ে উৎসাহিত করুন। শুরুর দিকে তারা যদি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থও হয় একসময় সেই ক্ষতি অবশ্যই পুষিয়ে যাবে। এইবার আমি নজরুলের প্রয়াণদিবস উপলক্ষ্যে কয়েকটি চ্যানেলে গান, সাক্ষাৎকার এবং উপস্থাপনায় অংশ নিয়েছি। আমার বন্ধূ একজন প্রোডিউসার একটি চ্যানেলে দুঃখ করে বললেন, সুজিত ভাই, স্পনসর ছাড়া প্রোগ্রাম করছি, নজরুল-রবীন্দ্র শুনলেই স্পনসররা পিছিয়ে যায়। কি কষ্টের কথা।
আমাদের গণমাধ্যমগুলো পরিচালনার নিশ্চয়ই একটা নীতিমালা আছে। আমাদের সংস্কৃতি এবং তথ্য মন্ত্রণালয় মিলে যদি একটা উপযুক্ত নীতিমালা তৈরী করে চ্যানেলগুলোকে দেয় এবং প্রতিদিনের অনুষ্ঠানে প্রদেয় স্পনসরশিপের একটা নির্দষ্ট পারসেন্টেজ যদি দেশীয় সংস্কৃতির মূল ধারার জন্য নির্ধারণ করে দেয়া হয় খুব সহজেই এই অনুষ্ঠানগুলো চালানো সম্ভব।
আমাদের এই মন্ত্রণালয় দুটিকে আমি বিনীত আহ্বান জানাচ্ছি এই উদ্যোগটি গ্রহণ করবার জন্য। এখনো ঢাকা ছাড়াও দেশের আনাচে কানাচে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষ মূলধারার সংস্কৃতি চর্চা করছে ভালোবাসার টানে। আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই ভালবাসার টানে সাড়া দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
সুত্র : সুজিত মোস্তফার ফেইসবুক পাতা থেকে।