সন্ত হলেন মাদার তেরেসা.. ভিডিও দেখুন!
মৃত্যুর ১৯ বছর পরে এই স্বীকৃতি পেলেন প্রয়াত মাদার। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। গতকালই তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন রোমে। আজ সকালে সাংসদ সুদীপ বন্দোপাধ্যায় এবং ডেরেক ও’ব্রায়েনকে সঙ্গে নিয়ে সকাল থেকেই প্রভাতফেরী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কণ্ঠে শোনা গেল কখনও ‘প্রাণ ভরিয়ে, তৃষা হরিয়ে’ আবার কখনও ‘মঙ্গলদীপ জ্বেলে’। ‘আগুনের পরশমণি’-ও গাইতে শোনা গেল তাঁকে।
বাংলদেশের সময় ঠিক দুপুর দু’টো বেজে ত্রিশ মিনিট শুরু হল ‘ক্যাননাইজেশন’।
ভ্যাটিকান থেকে অনুষ্ঠানটি লাইভ দেখতে ক্লিক করুন নীচের এই লিংকে—
আজ আনুষ্ঠানিকভাবে মাদার তেরেসাকে সন্ত ঘোষণা করতে যাচ্ছে ভ্যাটিকান সিটি। এই ঘোষণাকে সামনে রেখে কয়েক সপ্তাহ ধরেই প্রস্তুত হয়ে চলেছে এই শহর রাষ্ট্র। দিনটি উপলক্ষে এরই মধ্যে ভ্যাটিকানে পৌঁছে গেছে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মাদার তেরেসা। পাসপোর্টে নাম ছিল, মাদার টেরিজা বোজাজিউ। জন্ম যুগোস্লাভিয়ার স্কপিয়েতে। ছোট শহর। ওসমানিয়া সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত আলবেনিয়া রাজ্যে। বাবা ছিলেন ধনী ঠিকাদার। তেরেসার মাত্র সাত বছর বয়সেই তিনি মারা যান। তেরেসা সন্ন্যাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আঠারো বছর বয়সে। পথচলার সেই শুরু, আলবেনিয়া থেকে কলকাতা।
সন্ত হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ক্যাননাইজেশন। এমনিতে ছিমছাম, চুপচাপ এই ভ্যাটিকান সিটি। কিন্তু এখন সর্বত্র প্রস্তুতি চলছে ক্যাননাইজেশনের। পথঘাটে ভিড়। পর্যটক থেকে জিপসির দল গিজগিজ করছে সর্বত্র।
ক্যাননাইজেশন দীর্ঘমেয়াদি এবং পুরনো একটি প্রথা। রক্ষণশীল রোমান ক্যাথলিক পাদ্রিদের এ এক জবরদস্ত নিয়মের বাঁধনে রাখা বিষয়। এমন কোনো ব্যক্তিকে তাঁরা বাছেন, যিনি যিশুর ইচ্ছায় আর্তের সেবা করেছেন। যদি জানা যায় যে তিনি অলৌকিক বা ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন, তবে তাঁকে মৃত্যুর পাঁচ বছর পর এই স্বীকৃতি দেন ভ্যাটিকান সিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পোপ। এ ক্ষেত্রে পোপ চাইলেই কাউকে বেছে নিতে পারেন না। বরং সন্ত স্বীকৃতি দেওয়ার আগে নামটি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তর পার হতে হয় তাঁকে।
মাদার তেরেসার মৃত্যু হয় ১৯৯৭ সালে। পোপ ফ্রান্সিস সন্তায়নের জন্য তাঁর নাম গত ১৫ মার্চ ঘোষণা করেন। ২০০৩ সালে সন্ত হওয়ার প্রক্রিয়ার একটি ধাপ ‘বিয়টিফিকেশন’ স্তরে প্রবেশ করে তাঁর নাম। সে বছর পোপ দ্বিতীয় জন পল প্রথমবার মাদারের অলৌকিক ক্ষমতার কথা জানান। বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গে দক্ষিণ দিনাজপুরের মনিকা বেসরা নামের এক উপজাতি মহিলার দীর্ঘদিনের টিউমার সারাতে যখন সব চিকিৎসকই হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন, তখন তিনি তেরেসার কথা ভেবে পেটের ওপর একটা ত্রুদ্ধসের ছবি রেখে প্রার্থনা করতে করতে সুস্থ হয়ে ওঠেন। দ্বিতীয় অলৌকিক ঘটনাটি ঘোষণা করেন পোপ ফ্রান্সিস, ২০১৫ সালে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্রাজিলের এক বাসিন্দা জানান, ২০০৮ সালে তাঁর টিউমার সেরেছে মাদার তেরেসার জন্য। ব্রাজিলবাসী ওই রোগী অবশ্য কোনো দিন মাদারকে দেখেননি। তবে ভ্যাটিকানে সংবাদমাধ্যমের একটি বড় অংশের বক্তব্য, মাদার তেরেসাকে এই সন্ত স্বীকৃতি দিয়ে গোটা প্রক্রিয়াটিকেই নাকি লঘু করে দেওয়া হচ্ছে। তিনি নাকি এই স্বীকৃতির যোগ্য নন। বিষয়টি নিয়ে অবশ্য মুখ খোলেননি পোপ।
ভ্যাটিকানে পোপ গণমাধ্যমের কাছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচিত হবেন, এটাই এখানকার দস্তুর। সেই সমালোচনার তালিকায় এবার সংযোজিত হয়েছে মাদার তেরেসার সন্ত হওয়ার প্রসঙ্গও। ক্যাননাইজেশনের এই অনুষ্ঠান নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। বই লিখে ভ্যাটিকান সিটির অনুষ্ঠান সম্পর্কে সমালোচনা করেছেন কেউ কেউ। অভিযোগ, ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসের মধ্যে চার্চের ‘হোলি ইয়ার অব মার্সি’ শেষ হতে চলেছে। তাই পোপ তাড়াহুড়া করে আরো অনেককে সন্ত ঘোষণা করতে চাইছেন। অনেকে তো এমনও অভিযোগ করেছেন যে এই সন্ত তৈরির পেছনেও রয়েছে ভ্যাটিকান সিটির অর্থনীতি। ধনী স্পন্সরদের প্রভাব-প্রতিপত্তিতেই নির্ধারিত হয় নতুন সন্তদের নাম। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে মাঝেমধ্যেই নানা অভিযোগ সামনে চলে আসে। কিন্তু এ যে নীল পাড় সাদা শাড়ির এক ক্ষুদ্রকায় অশক্ত চেহারার নারীর কাহিনি! ১৯৪৮ সালের ১৮ অগস্ট যিনি তাঁর ২০ বছরের আশ্রয়স্থল লরেটো কনভেন্ট ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন হাতে মাত্র পাঁচটি টাকা নিয়ে। সেদিন তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন মিশনারিজ অব চ্যারিটি স্থাপনের। আজ বিশ্বের ১৩৩টি দেশে ৪৭০টি সেবাস্থলে কাজ করছেন সেই নারীর তৈরি প্রতিষ্ঠানের চার হাজার ৭১০ জন সন্ন্যাসিনী।