top of page

বহুমুখী অপরাধ তত্পরতার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে রাজধানী সহ সারাদেশ!

ঘর থেকে বের হলেই পদে পদে বিপদ। আছে শতেক প্রতারণার বেড়াজাল। চাঁদাবাজি, অপরাধ আর প্রতারণার ‘ঈদ ধান্ধা’য় অনেকেই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। চলতি পথে, মার্কেট-বাজারে অজ্ঞানপার্টি, থুথুপার্টি, ধাক্কাপার্টির সীমাহীন দৌরাত্ম্য। সক্রিয় রয়েছে পকেটমার চক্রের কয়েকশ সদস্য। হাজারো পয়েন্টে ওতপেতে আছে চাঁদাবাজ, ঝাপটাবাজ, ছিনতাইকারী চক্র। এসব চক্রের নানা অপরাধ আর অভিনব সব কৌশলের কাছে সাধারণ মানুষ ধরাশায়ী হচ্ছে, সব খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন।

তত্পর হয়ে উঠেছে মৌসুমি অপরাধীরা, বেড়েছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। এ ছাড়া পকেটমার, মলমপার্টি, টানাপার্টি, অজ্ঞানপার্টি চক্রের সদস্যরাও বসে নেই। তাদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নাগরিক জীবন। মাঝেমধ্যে পুলিশের হাতে চক্রের কিছু সদস্য ধরা পড়লেও অধিকাংশই থাকে অধরা। যাদের আটক করা হয় তারা আইনের ফাঁক গলে বাইরে এসে আবারও একই কাজ করে থাকে। জানা গেছে, রাজধানীর বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং রেলস্টেশনসহ অর্ধশত স্পটে ছদ্মবেশে এসব চক্রের সদস্যরা সক্রিয়। প্রায় প্রতিদিনই তাদের কবলে পড়ে টাকা-পয়সা, মোবাইল, মানিব্যাগসহ অন্যান্য জিনিসপত্র খুইয়ে মুমূর্ষু হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন অনেকেই।


রাস্তায়, বাজারে, কর্মস্থলসহ সর্বত্র কত রকমের ফাঁদ, মওকায় যে লোকজনের পকেট খালি হয়, তার ইয়ত্তা নেই। অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েও নিস্তার মিলছে না। অনেক ক্ষেত্রে হারাতে হচ্ছে জীবন। অন্যান্য প্রতারণাও ইদানীং ডিজিটাল রূপ পেতে শুরু করেছে। এখন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি করে যেমন অন্যের অ্যাকাউন্ট খালি করা হচ্ছে, তেমনি গলাকাটা পাসপোর্ট তৈরি, বিদেশি ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট ও নিয়োগপত্র প্রস্তুত করলেও সহজে তা জাল প্রমাণের উপায় থাকে না। জাল টাকার ছড়াছড়ি তো বাজারজুড়েই আছে। ঈদ সামনে জাল টাকার অগণিত মেশিনপত্রে যেন ধুমছে ছাপা চলে টাকার। ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট উল্টেপাল্টে দেখেও বিশ্বাস করতে চান না দোকানিরা। ব্যাংকিং সেক্টরেও অভিনব সব অপরাধ ঘটে চলেছে অহরহ। চেক জালিয়াতির মাধ্যমে যে-কারও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে দেওয়ার সংঘবদ্ধ চক্র তত্পর রয়েছে। তারা কারও অ্যাকাউন্টের একটি চেক পেলে একই আদলের ও স্বাক্ষরের শত শত চেক তৈরি করতে সক্ষম। সেই চেক ব্যবহার করে টাকা উত্তোলনসহ নানা রকম প্রতারণার ফাঁদ পাতলেও কারও কিছু করার থাকছে না।


নকল ভেজাল পণ্য : ঈদ সামনে রেখে ভেজাল আর নকল পণ্যসামগ্রীতে ভরে উঠেছে রাজধানীর বাজারগুলো। গড়ে উঠেছে অবৈধ প্রসাধন তৈরির অসংখ্য কারখানা। তারা দেশি-বিদেশি মোড়কে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম, লোশন, বিউটি সোপ, ফেস ওয়াশ, শ্যাম্পুসহ হরেক রকম প্রসাধনী উৎপাদন করে তা ব্যাপকভাবে বাজারজাত করে চলেছে। ঈদ সামনে রেখে পুলিশ মার্কেট, শপিং মল-কেন্দ্রিক টহল ও সাদা পোশাকে অবস্থান বাড়ালেও রাস্তাঘাটে অপেক্ষাকৃত নির্জন সড়কে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে অহরহ। সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে রিকশাযাত্রীদের ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়া এবং নির্জন এলাকায় ছোরার ভয় দেখিয়ে পথচারী, রিকশা ও ট্যাক্সিযাত্রীদের কাছ থেকে ছিনতাই করে থাকে। ইদানীং ভাটারা থানার নতুনবাজার থেকে নর্দ্দা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত জায়গাটুকু ঝাপটাবাজ চক্রের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই সেখানে মোটরসাইকেল ব্যবহারকারী দুর্বৃত্তরা চলন্ত অবস্থায় ছিনতাই-রাহাজানি ঘটাচ্ছে নির্বিঘ্নে। মাঝেমধ্যে রাতে ওই রাস্তায় গুলশান থানার চেকপোস্ট বসানো হলেও রাস্তাটুকুতে কোনো টহল টিম না থাকায় ছিনতাই ঝাপটাবাজি বন্ধ হচ্ছে না কোনোভাবেই।


তুঙ্গে ডলার বাণিজ্য : ঈদ সামনে রেখে সবচেয়ে জমে উঠেছে মতিঝিলের অবৈধ ডলার বাজার। দুর্বৃত্তশ্রেণির ৩০-৪০ জন যুবক বছরের পর বছর ধরে ডলার বাজার নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। মার্কিন ডলারসহ বিদেশি জাল মুদ্রা চালিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অবৈধ বাজারটির জুড়ি নেই। প্রতিদিন বঙ্গভবন-সংলগ্ন ফুটপাথের এ মুদ্রাবাজার ঘিরে অন্তত দুই কোটি টাকা লেনদেন হয় এবং দুই শতাধিক ব্যক্তি নানাভাবে প্রতারণার শিকার হন বলে জানা গেছে। সেখানে টাকা গুনে দেওয়া-নেওয়ার মধ্যেই মোটা অঙ্কের টাকা কম দেওয়ার ‘কাটিং প্রতারণা’ চলে অহরহ। কাটিং মাস্টার শহিদ প্রতি ১০০ নোট গুনে দেওয়ার ফাঁকে ১০-১৫টি পর্যন্ত জাল নোট ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম। প্রতিদিন ডলার, ইউরো, দিনার, ইয়েন ভাঙাতে দূরদূরান্ত থেকে আগত লোকজন প্রতারণার মুখে সর্বস্ব হারিয়ে বুকফাটা আহাজারিতে ভেঙে পড়ে। কিন্তু অভিযোগ করেও থানা পুলিশের কোনো সহায়তা মেলে না। মতিঝিল থানায় প্রতিদিন দেড় লাখ টাকা ও ডিবির নির্ধারিত একটি টিমকে এক লাখ টাকা মাসোহারা প্রদানের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অবৈধ ডলার বাজারটি দাপটের সঙ্গেই বহাল থাকছে বলে অভিযোগ আছে।


সক্রিয় অজ্ঞানপার্টি : ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানী ও আশপাশ এলাকায় আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা। রাস্তায়, যানবাহনে চলতে-ফিরতে ইসবগুলের ভুসি-মিশ্রিত পানীয়, আখের রস, সেক্স, ডায়াবেটিস বা গ্যাস্ট্রিক ‘নিরাময়ক’ হালুয়া খাইয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে তারা। ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে অজ্ঞান ও মলমপার্টির কমপক্ষে ১০টি চক্র সক্রিয় রয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ ছাড়া ঈদ সামনে রেখে সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজি শুরু করেছে। চাঁদা আদায় করতে ব্যবসায়ীদের স্ত্রী-সন্তানদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তাদের হত্যার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।


নারীকেন্দ্রিক অপরাধ দৌরাত্ম্য : ঈদ সামনে রেখে মৌসুমি অপরাধীদের পাশাপাশি নিত্যনতুন অপরাধ কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে বেড়েই চলেছে। নানা প্রলোভনে নতুন কৌশলে অপহরণ-মুক্তিপণ আদায় ও ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটাচ্ছে দুর্ধর্ষ নারী অপরাধী চক্র। কখনো কখনো গায়ে পড়েই কারও সঙ্গে বিবাদ সৃষ্টি করছে, ‘কু’ প্রস্তাব দেওয়ার মিথ্যা কথা বলে পথেঘাটে জিম্মি করে টাকা আদায় করছে এ চক্রের সদস্যরা। চক্রগুলো উত্তরা, গুলশান, ধানমন্ডি ও বারিধারার মতো অভিজাত এলাকায় সক্রিয়। চন্দ্রিমা উদ্যান, শ্যামলীর শিশুমেলা, মিরপুর চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, শাহবাগের শহীদ জিয়া শিশুপার্ক, রমনা পার্ক, গুলিস্তান, মতিঝিলসহ আরও কিছু স্থানে এসব নারী অপরাধী সিন্ডিকেটের তত্পরতা রয়েছে। টার্গেট ব্যক্তিকে কৌশলে বাসা কিংবা নির্জন স্থানে নিয়ে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এ ধরনের কয়েকটি চক্রকে ডিবি গ্রেফতার করলেও তাদের দৌরাত্ম্য পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না। রাজধানীর বিভিন্ন মহল্লায় স্থানীয় বখাটে মাস্তানদের সহায়তায় একদল প্রতারক তরুণী বসাচ্ছে নিত্য প্রতারণার আসর। তাদের পেছনে স্থানীয় থানার দুর্নীতিপরায়ণ পুলিশের সাহায্যের হাতও রয়েছে। প্রতারণার আস্তানায় পুলিশের সিভিল টিম পরিচয়ে দফায় দফায় সাজানো অভিযান চালিয়ে কথিত খদ্দেরদের টাকা-পয়সা, মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয়।


প্রাইভেটকার ফাঁদ : ফার্মগেট, মহাখালী, মালিবাগ, মৌচাক এলাকায় মাঝেমধ্যে কিছু খালি প্রাইভেটকার বা মাইক্রো ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। অফিস-ফেরত লোকজনকে লিফ্ট দেওয়ার ভাব নিয়ে জায়গায় জায়গায় এগুলো দাঁড়িয়ে থাকে। লোকজনকে মাইক্রোতে তুলেই অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাতের মোবাইল, পকেটের টাকা ছিনিয়ে নেয় সংঘবদ্ধ চক্র। এটিএম কার্ড থাকলে কোনো ব্যাংকের বুথে গাড়ি দাঁড় করিয়ে টাকা তুলে নেওয়া হয়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বজন-পরিজনদের কাছে ফোন করিয়ে বিকাশ নম্বরে প্রয়োজনীয় পরিমাণ টাকা আনিয়ে তারপর মারধর করে চোখে মলম লাগিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়। এভাবেই ভ্রাম্যমাণ মাইক্রোবাসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা টহল দিয়ে একের পর এক অপরাধ সংঘটন করে চলেছে কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ।

সাঈদুর রহমান রিমন।

  • Twitter Social Icon
  • Facebook Social Icon
  • Google+ Social Icon
  • LinkedIn Social Icon
Follow
"SAREGAMA JUST IN"

  জনপ্রিয় সংবাদ সা রে গা মা

বাংলা গান সা রে গা মা

Print  / Press Ctrl+P
Saregama Bangla

Sa Re Ga Ma News Archive

Write Yours Comments. 

RSS Feed

Reproduction of any content, news or article published on this website is strictly prohibited Privacy. 

bottom of page