লুপ যন্ত্রানুষঙ্গ নির্ভর সংগীতে, শিল্পী ও সংগীত পরিচালকের নিজস্বতা বলতে কিছুই থাকে না।
নভেম্বরে প্রকাশ হচ্ছে আপনার একক অ্যালবাম। অ্যালবামে কয়টি গান থাকছে?
আন্তর্জাতিকভাবে চারটি গানের একটি অ্যালবাম প্রকাশ করতে যাচ্ছি নভেম্বরে। চারটি গানের মধ্যে একটি প্রচলিত লোক গান। বিজয় সরকারের কথায় ‘যে ব্যথা আমার বুকে’। অন্য তিনটি গান মৌলিক। নিসঙ্গতা, দেহের আগুন ও মনের বিজ্ঞাপন শিরোনামের গানগুলি লিখেছেন শাহান কবন্ধ। সুর সংগীত আমারই করা। গানগুলোর মিউজিক ভিডিও হবে। বিভিন্ন কনটেন্টে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচার করবে ‘সনি ডিএডিসি’।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে একটি থিম সং করলেন- এটা কেমন হয়েছে?
যারা শুনেছেন তারাই প্রশংসা করছেন। দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলের জন্য থিমসং তৈরি করাটা ছিল একটু ভাবনার বিষয়। ‘এখন সময় বাংলাদেশের, এখন সময় আমাদের’ শিরোনামের এই গানে কণ্ঠ দিয়েছে পারভেজ, এলিটা, কনা ও আমি নিজেই।
এ সময়ে আর কী কাজ করছেন?
প্রথম আলোর ১৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে সুকান্ত ভট্টাচার্য্যরে লেখা কবিতার ওপর সুর সংগীত করলাম। এ ছাড়া শঙ্কর দা পর্যটনের উপর একটি ডকুমেন্টারি করছেন। এটার মিউজিক করলাম।
গত ঈদে প্রকাশ হয়েছে ইমরানের সঙ্গে আপনার দ্বৈত গানের অ্যালবাম ‘আধেক তুমি’। অ্যালবামের গানগুলোর কতটা সাড়া পেলেন?
আমি ওটা সম্পর্কে কিছুই জানি না, কি অবস্থা। কোনো ধারণাই নেই। তবে গানগুলি আমি শুনেছি। আমার ভালো লেগেছে।
সংগীতের বর্তমান সময়টা কেমন যাচ্ছে?
সংগীতের সময় আমি বলবো, সবসময় ভালোই ছিল। আমরা নিজেরাই সংগীতে অস্থিরতা তৈরি করি। এটা ঠিক যে এখন কিছু কাজ অনেক ভালো হচ্ছে। ভালো গান যেমন লেখা হচ্ছে, সুরও হচ্ছে। নতুনদের মধ্যে যারা ভালো করছেন, তাদের সেই সুযোগ করে দেওয়া উচিত।
এই সুযোগটা কীভাবে দেওয়া যেতে পারে?
ভালো শিল্পীদের গাইবার সুযোগ করে দিতে হবে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া, টিভি চ্যানেলগুলোকে দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। টেলিভিশন চ্যানেলে যে হারে সরাসরি গানের অনুষ্ঠান হয়, সেখানে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আরও দায়িত্ববান হতে হবে। ‘অশিল্পী’দের পেছনে না থেকে যেসব শিল্পী গান গাইতে পারেন, টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর উচিত তাদের সুযোগ দেওয়া। তা না হলে অশিল্পীদের দৌরাত্ম্যে শিল্প আর থাকবে না। পরে যারা মনে-প্রাণে গান গাইতে চান, তারা একসময় গান গাওয়া বন্ধ করে দেবেন। এটা পুরো সংগীতের জন্য ভালো হবে না।
ব্যান্ড গায়ক জেমস বলেছেন এখনকার গান নাকি ‘প্লাস্টিক মিউজিক’ হয়ে গেছে। এটা নিয়ে আপনিও একমত পোষণ করেছেন। এখান থেকে বের হয়ে আসার উপায় কী?
আমি শুনেছি এই মন্তব্য করেছেন জেমস। কিছুদিন আগে তিনি একটি পত্রিকার সক্ষাৎকারে বলেছিলেন ‘সবই প্লাস্টিক মিউজিক হয়ে গেছে।’ জেমসের এই মন্তব্যের সঙ্গে আমিও একমত। আমরা যেভাবে গান করি, বাজাই, রেকর্ড করি সর্বোপরি মানুষের মাঝে আবেদন দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু যখনই একজন গায়ক ও সংগীতপরিচালক প্লাগিংনির্ভর হয়ে যায়, তখন সেটা অবশ্যই প্লাস্টিক মিউজিক। এখন তেমনটাই হচ্ছে। ইদানীং লুপ ব্যবহার করে গানে সব যন্ত্রানুষঙ্গের আবেদন দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে করে সংগীত পরিচালক ও শিল্পীর নিজস্বতা বলতে কিছুই থাকে না। একজন শিল্পী বা সংগীতকর্মীর হাতে বাজানোর জাদু কেমন কিংবা কণ্ঠটা কেমন, তা শ্রোতারা আর শুনতে পারছে না। এই ধরনের কাজে কারোরই কোনো কৃতিত্ব নেই। এটা মেশিনের কৃতিত্ব। যতখানি সম্ভব নিজে বাজিয়ে যদি করা যায় তাহলে বিষয়টার মধ্যে নেচারাল ফিল পাওয়া যাবে। আমরা যদি ড্রামস, গিটার, বেজটা বাজাই তখন গানটার মধ্যে প্রাণ ফিরে পাবে। আমরা চেষ্টা করলে কিন্তু পারবো, যতখানি সম্ভব শ্রোতারাও মিউজিকের প্রকৃত ফিলটাও পাবেন। একেবারেই কম্পিউটার নির্ভর না হয়ে আমাদের এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- তারেক আনন্দ।