top of page

মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অধ্যায়।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের পবিত্র রক্ত, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম, অনেক অশ্রু ও ত্যাগের বিনিময় আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে মহত্তম ও গৌরবময় ঘটনা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একদিকে যেমন করুণ, শোকাবহ, লোমহর্ষক, তেমনি ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল ও বীরত্বপূর্ণ। যার কারণে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের অহঙ্কারের শেষ নেই।

শুরু হল ডিসেম্বর মাস। ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস। আর ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জিত হয়। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় দিন এটি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অাঁধারে পাকিস্তানি বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। এ প্রেক্ষাপটে অবিসংবাদিত জাতীয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ২৬ মার্চের সূচনালগ্নে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় এক লাখ সদস্যের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের এই বিজয় জাতির শ্রেষ্ঠতম অর্জন। প্রতি বছর ডিসেম্বরের এই দিনে আমরা একাত্তরের বিজয়দীপ্ত সেই দিনগুলোকে স্মরণ করি। মাটি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার যে আকুতি মহান মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার হিসেবে বিরাজ করছে, তা আমাদের আত্মবিশ্বাসকে বলীয়ান করে। এক অনিন্দ্যসুন্দর আত্মশ্লাঘায় আপ্লুত হই আমরা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় বাঙালি জাতির গৌরবময় ইতিহাসের সেরা ঘটনা।

জাতি এ বছর মহান বিজয় দিবসের ৪৫তম বার্ষিকী পালন করছে। একটি সুখী-সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা। গত চার দশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতি এগিয়ে গেলেও আশানুরূপ অর্জিত হয়নি। এবারের বিজয় দিবসে এ লক্ষ্য অর্জনে জাতিকে জোর কদমে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে অর্থবহ করে তুলতেই এ ব্যাপারে আমাদের দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিল, বিগত চার দশকে তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। রাজনৈতিক হানাহানি সংঘাত, সহিংসতা, রক্তপাত যেন আমাদের নিত্যসঙ্গী।

ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ও অঙ্গীকার নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। বিজয়ের ৪৫ বছরেও কেন আমরা তেমন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারিনি, এ ব্যর্থতার দায় কার? সেটাই আজ সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে।

১৯৭১ বাঙালি জাতির একটি ক্রান্তিকালের বছর। মুক্তিকামী মানুষের কঠিন পরীক্ষার বছর। আবার এ মুহূর্তকে আমরা আত্মত্যাগ ও উৎসর্গের প্রতিযোগিতার এক সুবর্ণ ক্ষণ বলতে পারি। একটি স্বাধীন মানচিত্র, নতুন একটি পরিচয়। একটি লাল সবুজের পতাকার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে সর্বস্তরের মানুষ। ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধে। দীর্ঘ যুদ্ধ শেষে অর্জিত হয় প্রিয় স্বাধীনতা। যারা দেশ মাতৃকার টানে নিজেদের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিল, আমরা তাদের মুক্তিযোদ্ধা বলে থাকি। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বলে থাকি। কিন্তু তাদের কি শ্রেষ্ঠ সন্তানের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে পেরেছি? মনে রাখতে হবে, মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে বাঙালির সব চেয়ে বড় বিজয়, বাঙালি জাতিসত্তার বিজয়। শত প্রতিকূলতার মাঝেও আমাদের এ অর্জন ধরে রাখতে হবে।

রাজনৈতিক অঙ্গনের হতাশা সত্ত্বেও বাংলাদেশ উন্নয়ন ধাঁধা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে বিশ্ববাসীর কাছে। শুধু কি তাই, বাংলাদেশের উন্নয়নকে বিশ্বব্যাংক একটি অমীমাংসিত বিস্ময় হিসেবে মন্তব্য করেছে।

বাংলাদেশ যে এগিয়ে চলেছে সেটা শুধু আমরাই জানি না বিশ্ববাসীও জেনেছে। দেশটি আরো জোর কদমে এগিয়ে যেতে পারে যদি দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকে। যদি দুর্নীতির মচ্ছব বন্ধ করা হয়। দলে দলে, নেতায়-নেতায় ঝগড়া-বিবাদ দূর হয়। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা যদি দেশের উন্নয়নের চাকাকে আরো এগিয়ে নিতে সব ভেদাভেদ ভুলে ঝাঁপিয়ে পড়ি তাহলে আমাদের সাফল্য সুনিশ্চিত। কেউ আমাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। কিন্তু সেটা কি সম্ভব? আমরা কি পারব সহনশীল হতে? ক্ষমতার মসনদে আসন নেয়ার প্রতিযোগিতা থেকে আমরা কি নিবৃত্ত হতে পারব? রাজনীতির মূলকথা হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত মানুষের প্রতি ভালোবাসা, দেশকে ভালোবাসা, সর্বোপরি দেশপ্রেমের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে কি পারব আমরা? আমাদের ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া এ থেকে উত্তরণের কোনো পথ খোলা নেই।

একথাও মনে রাখতে হবে, মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয় অর্জন সহজ ছিল না। আমাদের চেয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গায়ের জোর কম ছিল নাকি? হ্যাঁ, আমাদের পাশে ছিল ভারত-রাশিয়া, পাকিস্তানের পাশেও ছিল চীন-আমেরিকা। তাহলে পরাজিত হলো কেন? বাংলাদেশের যুদ্ধ ছিল ন্যায়যুদ্ধ আর পাকিস্তানের যুদ্ধ ছিল অন্যায় যুদ্ধ। এ হলো একদিক। অন্যদিক হলো বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ও সিভিল সমাজ স্বাধিকার স্বায়ত্তশাসনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিল, সেই চেতনার জোরে পাকিস্তানের মতো একটি জাদরেল রাষ্ট্রকে পরাজিত করেছিল। আর এটাই বাঙালির সব চেয়ে বড় বিজয়, বাঙালি জাতিসত্তার বিজয়। আমাদের এ অর্জন ধরে রাখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার রক্ষায়, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ও সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষার তাগিদে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে।

মাত্র নয় মাসের ব্যবধানে বিজয় ছিনিয়ে এনে এ দেশের বীরজনতা বুঝিয়ে দিল, ঐক্য ও ত্যাগ থাকলে বুলেট আর কামান দিয়ে কোনো জাতিকে দমিয়ে রাখা যায় না। আমরা স্বাধীন হয়েছি ঠিকই, স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আমাদের প্রকৃত মুক্তি কি অর্জিত হয়েছে? আমরা কি আজ সত্যিই স্বাধীন? স্বাধীন হলেও এমন স্বাধীনতাই কি আমরা চেয়েছিলাম? জাতি অর্জন করেছিল একটি জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত। স্বাধীনতা মানে ইচ্ছার স্বাধীনতা, রাজনীতির স্বাধীনতা এবং অবশ্যই অর্থনৈতিক মুক্তি। সে মুক্তি কি আমাদের এসেছে?

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটি স্বপ্ন ছিল। একটি স্বপ্ন নিয়েই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম আমরা। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৫ বছরে এসেও সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। গড়ে তোলা যায়নি শোষণহীন সমাজব্যবস্থা। আসেনি অর্থনৈতিক মুক্তি। নিশ্চিত করা যায়নি মানুষের মৌলিক অধিকার। তারপরও বিজয়ের মাসে একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন। রাফেয়া আবেদীন : কবি, কলাম লেখক, নারী উদ্যোক্তা ও ল্যান্ডস্কেপ বিশেষজ্ঞ

  • Twitter Social Icon
  • Facebook Social Icon
  • Google+ Social Icon
  • LinkedIn Social Icon
Follow
"SAREGAMA JUST IN"

  জনপ্রিয় সংবাদ সা রে গা মা

বাংলা গান সা রে গা মা

Print  / Press Ctrl+P
Saregama Bangla

Sa Re Ga Ma News Archive

Write Yours Comments. 

RSS Feed

Reproduction of any content, news or article published on this website is strictly prohibited Privacy. 

bottom of page