যেমন খুশি তেমন না সেজে-দর্শক চাহিদার কথা মাথায় রাখুন!
ছোটবেলায় স্কুল ফাইনাল পরীক্ষার পর বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগীতায় একটি খেলায় অংশ নিতে কখনই মিস্ করতাম না যেটি হল “যেমন খুশি তেমন সাজো” কারন ইচ্ছে মত যা খুশি তাই করার সুযোগ ছিল সেই খেলাতে নিজেকে কাদামাটি দিয়ে একটা সং বানালেই চলত। এখন হয়ত এই খেলার প্রচালন নেই বললেই চলে।
আকাশ-সংস্কৃতির যুগে বিনোদনের আকাশপথ আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, কারন আমাদের চ্যানেল গুলো ব্যাবসা করতে করতে এমন একটা জায়গায় দড়িয়ে গেছে যেখানে দর্শক চাহিদা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। আজকের টিভি কর্তৃপক্ষ মনে করেন আমরা যা দেখাব দর্শক সেটাই দেখতে বাধ্য ব্যবসা আর নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতেই যেন তারা ব্যাস্ত। প্রতিটি চ্যানেল আজ যেমন খুশি তেমন সাজো হিসেবে নিজেদেরকে দাড় করিয়েছে। দর্শক এর বিনোদন তো বাদই দিলাম মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপন আর টকশোর গলাবাজি রীতিমত দর্শকের বিরক্তির কারন হয়ে দাড়িয়েছে আমাদের চ্যানেল গুলো। রিমোর্ট ব্যাবহার না করে টিভি দেখা এখন অসম্ভব।
চ্যানেলগুলোতে অনুষ্ঠান দেখার অর্থই হচ্ছে এক গাদা বিজ্ঞাপনের মুখোমুখি হওয়া। মন টানে না এমন অযত্নে বানানো জিনিস মানুষ দেখবে কেন ? দেশে প্রতিভাবান শিল্পী, অভিনেতা, গায়ক, সুরকার—সবই আছে। আমাদের শাকিব খান, আমাদের জয়া, আমাদের মোশাররফ করিম, আমাদের ফেরদউস, আমাদের সাবা, তো কলকাতায় অনেক জনপ্রিয়। আমাদের জেমস্ সহ অনেক শিল্পীই বলিউডে গিয়ে গান শোনান। আয়নাবাজি এখন দেশছাড়িয়ে বিদেশেও ব্যাবসা করছে, তাহলে সমস্যাটা কোথায় ?
কিছুদিন আগেও একটা সময় ছিল যখন আমাদের চ্যানেলগুলো নাটকের গল্প দেখেছে, নির্মাতার সঙ্গে কথা বলেছে। উঠতি মেধাবী নির্মাতাদেরও তারা সুযোগ দিয়েছে। এখন তো নাটকের সঙ্গে চ্যানেলের কোনো সম্পর্কই নেই। একেকটি এজেন্সি ঈদ বা অন্যান্য উৎসবে ৭০-৮০টি করে নাটক বানাচ্ছে। তারা তাদের পছন্দমতো শিল্পী ঠিক করছে। অত্যন্ত কম বাজেট তরুণ নির্মাতাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে নাটক নির্মানের কাজ। সিনিয়র নির্মাতাদের পক্ষে চ্যানেলের এই অহেতুক ফরমাইশ কম্প্রোমাইজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই তারা এখন নির্বিকার, আন্দোলের পথে পা বাড়িয়েছেন।
ভারতের বাংলাভাষী তিনটি রাজ্যেও কেন আমরা আমাদের চ্যানেল দেখাতে পারি না? যেখানে মাত্র দেড় লাখ টাকা ফি দিয়ে যেকোনো ভারতীয় চ্যানেল বাংলাদেশের ঘরে ঢুকতে পারে, সেখানে বাংলাদেশি চ্যানেলের জন্য তারা ফি ধার্য করেছে পাঁচ কোটি টাকা? এটার কারন কি ?
দর্শক জনপ্রিয়তা থাকলে, বিদেশি সিরিয়াল আগেও চলেছে এখনও চলতে পারে, যদি একই সময়ে অন্য কয়েকটি চ্যানেলে ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘বহুব্রীহি’, ‘সংশপ্তক’, ‘এই সব দিনরাত্রি’, ‘অয়োময়’ দেখানো হয়, তখনই বোঝা যাবে দর্শক কোনটি দেখছেন। অবশ্যই আমাদের নাটকগুলো সবাই দেখবেন ! এ জন্যই বলতে চাই, আমাদের প্রোডাকশানের মানের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে। একটা ধারার নাটক ক্লিক করল তো সবাই একই দিকে ছুটতে থাকল।
দর্শককে টেলিভিশন বিমুখ করেছে মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপন,ও সস্তাদরের বস্তা পচা নির্মান।