তাজরিন গহর গাইলেন বীর সঙ্গীতযোদ্ধা নয়ীম গহরের গান ‘একুশ আসে’।
যে কণ্ঠ একাত্তরের রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা দিত আর পাক হায়নাদের বুকে ধরাত ভয়ের কাঁপন। সেই কণ্ঠও আজ নিস্প্রাণ হয়ে গেছে। যে দূরন্ত স্বপ্ন চেখে নিয়ে সেদিন দেশ মা’কে রক্ষা করার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল হয়ত যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সেই স্বপ্নগুলো চোখের সামনে ম্লান হয়ে গেছে তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধ নয়ীম গহর। একাধারে গীতিকার,ঔপন্যাসিক,গায়ক, নায়ক, নাটক রচয়িতা, বিবিসির (লন্ডন) বাংলা ভাষ্যকার ও খবর পাঠক।
বিক্রমপুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম বাংলা ১৩৪৪ সনের ২৯ শ্রাবণ, ইংরেজি ১৪ আগস্ট, ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে। মৃত্যু ৭ অক্টোবর ২০১৫ ইং। ছাত্রজীবনেও তিনি অত্যন্ত মেধার পরিচয় দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন।
বহুমুখি প্রতিভাবান এই মানুষটি ছোট বেলায় কলেজ জীবনে ইংরেজী কবিতা দিয়ে তাঁর প্রতিভা প্রকাশ করেন, তখনকার প্রথম শ্রেণির ইংরেজী পত্রিকা ‘অবজারভার’ এ। প্রকাশিত হয় বাংলা কবিতার বই ‘শব ও স্বগতোক্তি এবং নিষিদ্ধ বিছানা’। গল্পগ্রন্থ- ‘রাহুগ্রাস’।
পত্র-পত্রিকাতে অসংখ্য কবিতা, ছোট গল্প রচনা করেছেন। কিন্তু কবি বড় অগোছালো। তার এই মূল্যবান রচনা গুলি নানা দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
তাঁর সবচেয়ে সর্বজনীন পরিচয়টি, তিনি সৃষ্টি করেছেন বহু আধুনিক ও মুক্তিযুদ্ধের হৃদয়স্পর্শীগান। ১৯৭১ সালের রক্তঝরা দিনগুলোতে যাঁর গান মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধের প্রেরণা জুগিয়েছে।
যেমন ‘নোঙ্গর তোলো তোলো সময় যে হলো হলো’,‘সাগর পাড়িতে ঝড় জাগে যদি জাগতে দাও’, ‘পুবের ওই আকাশে সূর্য উঠছে আলোকে আলোকময়’,‘জয় জয়জয় জয় বাংলা’ ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’। দেশাত্মবোধক গানের পাশাপাশি অনেক জনপ্রিয় আধুনিক, উচ্চাঙ্গসংগীত রচনা করেন তিনি। যার সংখ্যা প্রায় ২০০।
স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁর রচনায় প্রথম নাটক বিটিভিতে প্রচারিত হয় ‘পাখি আমার জয়ন্ত’ (জয়ন্ত তাঁর ছেলের নাম)। ফজলে লোহানী ও নয়ীম গহর মিলে একটি নতুন ধারার টিভি অনুষ্ঠান করেন ‘যদি কিছু মনে না করেন’ শিরোনামে।
প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম তাঁর ছবিতে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য নয়ীম গহরকে বারবার অনুরোধ করেছিলেন। তখনকার চলচ্চিত্র ম্যাগাজিন ‘রূপছায়া’ নয়ীম গহরের ছবিসহ লিখেছিল,
এই দেশ ও জাতির জন্য অনেক অবদান রেখেও পরিণত বয়সে নিজ বাড়িতে নিভৃতচারী ছিলেন নয়ীম গহর। বিধ্বস্ত ম্লান অবয়বে ক্ষীণ হয়ে আসা চোখে আজ আর কোন প্রশ্ন ভাসছে না। দীর্ঘশ্বাসে ঝরে পড়ছে না কোন অব্যক্ত বেদনা।
যোগ্য পিতার সু’কন্যা,
সুকন্ঠী গাইকা তাজরিন গহর এ প্রজন্মের জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালক শান এর সংঙ্গীতায়জনে অসাধারন আবেগ মিশ্রিত কন্ঠে গাইলেন ‘সেই যে গেল ভাইটি আমার সাঁঝের কুয়াশায় আজও আমার মায়ের ঘরে কান্না শোনা যায়.... নিঝুম রাতে একুশ আসে’ শিরোনামের গানটি।
সম্প্রতি গানটির সঙ্গীত আবহের সাথে মিল রেখে অসাধারন একটি মিউজিক ভিডিও প্রকাশ হয়েছে,যার পরিচালনা করেছেন এ সময়ের ট্যালেন্ট ও সুচারু নির্মাতা লতা আচার্য্য। ইতিমদ্ধ্যেই বেশ কয়েকটি দর্শক জনপ্রিয় ভিডিও নির্মান উপহার দিয়ে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন তিনি।
তাজরিন গহর বলেন, আমার অন্তরের সকল ভালবাসা দিয়ে বাবার গানটি করেছি এবং হৃদয়ের সব দরদ দিয়ে আমি চেষ্টা করেছি গানটি সবার সামনে উপস্থাপন করতে।’ দীর্ঘ ৪৫ বছর পর বীর যোদ্ধা বাবার সৃতিচারন স্বরুপ তাজরিন গহর যে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পন করলেন, তা দেশ ও জাতি শ্রদ্ধাভরে স্বরন করবে চিরকাল এই প্রত্যাশা আমাদের।