top of page

প্রাকৃতিক লীলাভূমিখ্যাত দৃষ্টিনন্দন জাহাঙ্গীরনগর!


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অরণ্যঘেরা সবুজ পরিবেশের পাশাপাশি রয়েছে স্থাপত্যকলার দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য।

লাল ইটের প্রাসাদ সদৃশ ভবন আর ভাস্কর্য সবুজের এ ক্যাম্পাসকে করে তুলেছে অনন্য। ৭০০ একরের সবুজ এ ক্যাম্পাসের প্রায় কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আছে বৃত্তাকার লাল ইটের প্লাটফর্মের ওপর স্থাপিত দেশের উচ্চতম শহীদ মিনার। সবুজ জমিনে রক্তাভ এই শহীদ মিনারটি যেন শতত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের লাল-সবুজের জাতীয় পতাকারই প্রতিরূপ।


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন ভাস্কর্য, ভবন আর স্থাপনার বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরা হল। সত্তরের শুরুতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় তিনটি মাত্র ভবন পুরাতন কলা ভবন, আল-বেরুনী হল এবং বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্র নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক গড়ে ওঠে শিক্ষা ভবন, ছাত্রছাত্রীদের আবাসিক হল, গ্রন্থাগার, উপাসনালয় এবং সেই সঙ্গে স্বাধীনতার চেতনায় ভাস্বর একাধিক ভাস্কর্য ও স্থাপনা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

ভাস্কর্য ও স্থাপনা : বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক (ডেইরি গেট) দিয়ে ঢুকে কয়েক গজ সামনে এগোলেই চোখে পড়বে ভাষা আন্দোলনের স্মরণে গড়া ঢাউস আকৃতির ভাস্কর্য 'অমর একুশ'। সমাজবিজ্ঞান ভবন আর কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার মুখোমুখি এর অবস্থান। স্থপতি হামিদুর রহমানের করা এত বিরাটকায় ভাস্কর্য দেশের অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া ভার।


প্রতি বছরের ন্যায় এবারও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অতিথি পাখির স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত। ক্যাম্পাসে ছোট-বড় ১০ থেকে ১২টি লেক রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৪টি লেকে অতিথি পাখি বেশি বসে থাকে। এবারো প্রশাসনিক ভবনের সামনের লেক, জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হল সংলগ্ন লেক। এছাড়াও বোটানিকেল গার্ডেনের পাশের লেকেও লাল শাপলার মাঝে দেখতে পাবেন খুনসুঁটিতে ব্যস্ত অতিথি পাখিরা।

দৃষ্টিনন্দন লেকে নানান জাতের শাপলা, তার মাঝে অতিথি পাখিদের খুনসুঁটি, পানির মাঝে ডুবোডুবি আর উড়োউড়ি এসব দেখতে, ক্যাম্পাসের কুয়াশায় গা জড়াতে, ঠান্ডা বাতাসে গাটাকে শিহরিত করতে, ব্যস্তময় এ জীবনে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে আরে এ সৌন্দর্য দেখে মনকে প্রশাস্ত করতে লাল মাটির ক্যাম্পাস জাবির যেন বিকল্প নেই। অতিথি পাখির জন্য এই লেকগুলোকে অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে এবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অতিথি পাখির জন্য আরো কয়েকটি লেক পরিষ্কার করেছে।

প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের দিকে হিমালয়ের উত্তরে প্রচন্ড শীত নামতে শুরু করে। ফলে উত্তরের শীত প্রধান অঞ্চল সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, নেপাল, জিনজিয়াং ও ভারতে প্রচুর তুষারপাত হয়। তুষারপাতে টিকতে না পেরে পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে পাড়ি জমায় বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। এ সময় হাজার হাজার অতিথি পাখি দক্ষিণ এশিয়ার নাতিশীতোষ্ণ দেশ বাংলাদেশে আসে।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

৫২'র ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য আর ৭১-এর চেতনা একত্রে ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের সম্মুখে অবস্থিত এ শহীদ মিনারটিই দেশের সর্বোচ্চ শহীদ মিনার। ৫২ ফুট ব্যাসের বৃত্তাকার প্লাটফর্মের ওপর ৭১ ফুট উচ্চতার তিন স্তম্ভ বিশিষ্ট এ শহীদ মিনার বহন করছে আমাদের জাতীয়তাবাদ বিকাশের প্রত্যেকটি ধাপের তাৎপর্য। রাস্তা থেকে শহীদ মিনারের মূল বেদীতে পৌঁছতে অতিক্রম করতে হয় ৮টি ধাপ বা সিঁড়ি। ৮টি সিঁড়ি ও তিনটি স্তম্ভ বিশিষ্ট; দৃঢ়তার প্রতীক ত্রিভুজ আকৃতির ঋজু কাঠামটিতে বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের জন্য মহান বীর শহীদদের আত্মত্যাগের মহিমা বিধৃত হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের ৮টি তাৎপর্যপূর্ণ বছর ১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৫৪, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০ ও ১৯৭১ সালগুলো এবং তিনটি স্তম্ভের একটি বাংলা ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও অন্য দুটি মাটি ও মানুষ এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-অর্থনৈতিক মুক্তি ও গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ-শ্যামল প্রাঙ্গণে রক্তাভ এ শহীদ মিনারটি যেন শতত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের লাল-সবুজ জাতীয় পতাকা হিসেবেই প্রতীয়মান।


বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য 'সংশপ্তক'। এ ভাস্কর্যে এক সংশপ্তক মুক্তিযোদ্ধা এক পা ও এক হাত হারিয়েও বিজয়ের হাতিয়ার উপরে তুলে ধরেছেন। একুশে পদকপ্রাপ্ত হামিদুজ্জামান খান এর স্থপতি। আবাসিক ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। অর্থাৎ প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর জন্য এখানে হলে একটি করে আসন বরাদ্দ আছে। তবে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির সময়সীমা বৃদ্ধি ও দেরিতে পরীক্ষা গ্রহণের কারণে বর্তমানে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা কিছু দেরিতে আসন পায়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট হল সংখ্যা ১২টি, এর মধ্যে ছাত্রদের জন্য ৭টি এবং ছাত্রীদের জন্য ৫টি হল রয়েছে। আ ফ ম কামালউদ্দিন হল, মীর মশাররফ হোসেন হল, আল-বেরুনী হল, মওলানা ভাসানী হল,

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল,

শহীদ রফিক-জব্বার হল

শহীদ সালাম-বরকত হলগুলো ছাত্রদের। আর ছাত্রী হলগুলোর মধ্যে আছে নবাব ফয়জুন্নেসা হল, ফজিলাতুননেসা হল, জাহানারা ইমাম হল,

বৃষ্টিস্নাত সকালে রূপসী প্রীতিলতা হল

বেগম খালেদা জিয়া হল। এছাড়া তিনটি নির্মাণাধীন হলের মধ্যে মেয়েদের জন্য তৈরি হচ্ছে বেগম সুফিয়া কামাল হল ও শেখ হাসিনা হল এবং ছেলেদের জন্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল।

মীর মশাররফ হোসেন হল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দৃঢ় ও শোভন, দৃষ্টিনন্দন ও মনোরম আবাসিক ভবনের নাম 'মীর মশাররফ হোসেন হল।' ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে ঘন সবুজ বেষ্টনীর ভেতর মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে এই শীর্ষমুখী লাল দালান। ছাত্রদের জন্য নির্মিত হয়েছে ১৯৭৩ সালে। বিষাদ সিন্ধুখ্যাত লেখক মীর মশাররফ হোসেনের নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে মীর মশাররফ হোসেন হল। মূল ভবনটি দুটি ব্লকে বিভক্ত (ব্লক-এ এবং ব্লক-বি)। আকাশ থেকে দেখতে এ হলটিকে দেখায় বিশাল আকৃতির প্রজাপতির মতো; এর দুটি ব্লক যেন প্রজাপতির দুটি ডানা। প্রসঙ্গত, প্রতিষ্ঠার পর থেকে টানা ১৭ বছর এটি ছিল উপমহাদেশের বৃহত্তম একক ছাত্রাবাস। বর্তমানে এর অবস্থান দ্বিতীয়।

আল-বেরুনী হল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ক্যাম্পাসের শোভাবর্ধন করে আসা দুটি ভবন হচ্ছে পুরাতন কলা ভবন ও আল-বেরুনী হল। ভবন দুটি ক্যাম্পাসের সবচেয়ে পুরনো হলেও, সেকেলে ভাবার কোনো সুযোগ নেই। শুধু এ দুটি ভবনেই ক্রস ভেন্টিলেশন সিস্টেমসহ তৎকালীন সময়ের সর্বাধুনিক বিশ্বমানের স্থাপত্যকলার প্রয়োগ ঘটানো হয়েছে। এসব ভবনের প্রতিটি কক্ষে সবদিক থেকে সমান ও পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশের অত্যন্ত সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে। ছাত্রাবাসগুলোর মধ্যে মওলানা ভাসানী হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও শহীদ রফিক-জব্বার হলের মূল নকশা একই রকম হলেও তাদের অবস্থানগত কারণে রয়েছে ব্যাপক বৈচিত্র্য। মেয়েদের হলের মধ্যে প্রীতিলতা হল ও জাহানারা ইমাম হলের মধ্যে রয়েছে সাদৃশ্য। তবে দুটি হলের পেছনে থাকা প্রাকৃতিক লেক হলগুলোর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে বহুগুণ। এ ক্যাম্পাসের দু-একটি ভবন ছাড়া বাকি সব ভবন-স্থাপনা-অবকাঠামোই তৈরি লাল ইটের।

ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়|

সেলিম আল দীনমুক্তমঞ্চ, জাবি ।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তন, নতুন কলা ভবন, সমাজ বিজ্ঞান ভবন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ড. সেলিম আল-দীন মুক্ত মঞ্চ নকশা ও নান্দনিকতায় যে সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রার তা নিজ চোখে না দেখলে সত্যিই কল্পনা করা মুশকিল। জাহাঙ্গীরনগরের প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে এসব দালানকোঠা কত যে বৈচিত্র্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তা দেখতে চোখ রাখতে পারেন গুগল আর্থ কিংবা গুগল ম্যাপে। স্যাটেলাইটের ছবিতে সবুজের এ রাজধানীর স্বকীয়তা স্পষ্টতই চোখে ধরা পড়বে। সবুজ অরণ্যের মধ্যে লাল ইটের প্রাসাদ সদৃশ দালান জাহাঙ্গীরনগরের ঐতিহ্য, জাহাঙ্গীরনগরের আভিজাত্য।

  • Twitter Social Icon
  • Facebook Social Icon
  • Google+ Social Icon
  • LinkedIn Social Icon
Follow
"SAREGAMA JUST IN"

  জনপ্রিয় সংবাদ সা রে গা মা

বাংলা গান সা রে গা মা

Print  / Press Ctrl+P
Saregama Bangla

Sa Re Ga Ma News Archive

Write Yours Comments. 

RSS Feed

Reproduction of any content, news or article published on this website is strictly prohibited Privacy. 

bottom of page