জনকের ফিরে আসা !
গবেষনা ও গ্রন্থনা ঃ মোঃ শওকাতুল ইসলাম। নেপথ্য কন্ঠ ঃ শাহাদাৎ হোসেন নিপু। অনুষ্ঠান প্রযোজনা ঃ মারিয়া।
তুমি বাংলার শ্যামলে, সবুজে, আলোয় ছায়ায়, লতায়, পাতায়, ঘাসফুল, পাখির কন্ঠে, নদীর ঢেউয়ে, ফসলের মাঠে, কৃষকের ঘরে জড়িয়ে আছো স্মৃতি হয়ে।
তুমি বাঙ্গালির হৃদয়ে, মন ও মননে, সুখে, দু:খে, আনন্দ, বেদনায়, শোকে, শ্রমে, মেধায়,ভাটিয়ালী ও খেলার মাঠে, শিশুর দুধ ভাতে জড়িয়ে আছ ভালবাসায় মন্তয়।
বাংলা নামে দেশ, আমাদের এই বাংলাদেশ, বাঙ্গালি জাতির মুখের ভাষা আর সেই ভাষাভাসীদের জন্য একটি দেশ। এমন একটি স্বপ্ন যিনি দেখেছিলেন এবং বাঙ্গালি জাতির আধিকার রক্ষায় সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন যেই মানুষটি তিনি আমাদের প্রান প্রিয় নেতা বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ।
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তারিখে অবিভক্ত বৃটিশ ভারতের পুর্ব বাংলার ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুংগী পাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেছিলেন তিনি।
শৈশবে পড়াশুনার পাশাপাশি এলাকার গরীব দুঃখী ছাত্রদের পড়াশুনা করতে সাহায্য করা, ফুটবল খেলা, ব্রতচারী নৃত্য, এসব নিয়েই ব্যাস্ত থাকতেন তিনি। আর এসব করতে করতেই এক সময় দুঃখী মানুষের অধিকার নিয়েই কথা বলতে শুরু করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
এমন করেই ১৯৩৯ সালে তৎকালীন অবিভাক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী গেপালগঞ্জ মিশনারী স্কুল পরিদর্শনে এলে বঙ্গবন্ধু স্কুলের ছাদ দিয়ে পানি পড়ার অভিযোগ এবং স্কুল ছাত্রদের পক্ষ থেকে তা সারাবার জন্য দাবি তুলে ধরেন। একই সাথে তিনি স্কুলের জন্য একটি ছাত্রাবাসের দাবি তুলে ধরেন।
সেই থেকেই শুরু, কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় ধীরে ধীরে পাকিস্তান আন্দোলনের সাথে সক্রিয় ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন তিনি। তার এই রাজনৈতিক জীবন শুরু হবার সাথে সাথেই মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ এই চব্বিশ বছর এর মধ্যে, প্রায় ১৪ বছরের অধীক সময় তাকে কারাগারে কাটাতে হয়েছিল।
সর্বপ্রথম ১৯৪৮শে ভাষার জন্য, ফরিদপুরে কর্ডন প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য, ১৯৪৯ সালে চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীরা তাদের দাবী দাওয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে ধর্মধট ঘোষনা করলে, বঙ্গবন্ধু ধর্মধট এর প্রতি সমর্থন জানালে, পুনরায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গেঁর দায়ে এবং পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান এর আগমন উপলক্ষে আওয়ামী মুসলীম লীগ ভুখা মিছিল নেতৃত্ত দেওয়ার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এবার তাকে প্রায় দু বছর পাঁচ মাস জেলে আটক রাখা হয়।
১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষনা করেন পকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দূ। এর পতিবাদে বন্দি থাকা অবস্থায় ২১শে ফেব্রুয়ারিকে রাজ বন্দিমুক্তি এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবী দিবস হিসাবে পালন করার জন্য বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ এর প্রতি আহবান জানান। ১৪ ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধু এ দাবিতে জেল খানায় অনষন শুরু করেন, ২৬ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেল থেকে তিনি মুক্তি লাভ করেন। এর পর একে একে ১৯৫৪ এর যুক্ত ফন্ট নির্বাচনের পরে, ১৯৫৮ সালে আইউবখানের সামরিক শাষন জারির পর, ১৯৬১, ১৯৬৪, ১৯৬৫, তে বিভিন্ন অভিযোগে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী লাহোরে, বিরোধী দল সমুহের জাতীয় সম্মেলনের বিষয় নির্বাচনী কমিটিতে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা দাবি পেষ করেন। প্রস্তাবিত ছয় দফা ছিল বাংঙ্গালী জাতির মুক্তি সনদ।
১লা মার্চ বঙ্গবন্ধু আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু ছয় দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সারা বাংলায় গন সংযোগ সফর শুরু করেন। এসময়ে তাকে সিলেট, ময়মসিংহ,ও ঢাকায় বার বার গ্রেফতার করা হয়।
বঙ্গবন্ধু এবছরে প্রথম তিন মাসে আট বার গ্রেফতার হন। ৮মে নারায়নগঞ্জে পাটকল শ্রমিক দের জনসভায় বক্তৃতা শেষে তাকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে এক নংম্বর আসামী করে মোট পঁয়ত্রিশ জন বাঙ্গালি সেনা ও সিএসপি অফিসারের বিরুদ্ধে পকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ এনে আগোরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করেন। ১৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে জেলথেকে মুক্তি দিয়ে, পুনরায় জেলগেট থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা সেনানিবাসে আটক রাখা হয়। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী জনগনের অব্যাহত চাপের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধু সহ অন্যান্য আসামিকে মুক্তিদানে বাধ্য হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারী রেসকোর্স অর্থাৎ সোহ্রাওয়ার্দী উদ্দানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এর উৎযোগে বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। প্রায় দশলাখ ছাত্র জনতার এই সম্বোর্ধনা সমাবেশে শেখ মুজিবুর রহমানকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বঙ্গবন্ধু উপধিতে ভুষিত করা হয়।
১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বারে সাধারন নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নিরংকুশ সংখাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, আওয়মীলীগ তৎকালীন পুর্ব পাকিস্থানে জাতীয় পরিষদ এর ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩১০ টি আসনের মধ্যে ৩০৫ টি আসন লাভ করে। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষন ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ডাক।
রেসকোর্স এর জনসমুদ্র থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষনা করেন....এবারের সংগ্রম......জয় বাংলা।।
১৬ মার্চ ঢাকায় ক্ষমতা হস্থান্তর প্রশ্নে মুজিব ইয়াহিয়া বৈঠক শুরু হয়। আলোচনার জন্য জনাব ভুট্টো ঢাকায় আসেন ২৪ মার্চ পর্যন্ত ইয়াহিয়া, ভুট্টো, মুজিব, আলোচনা হয়। ২৫ মার্চ আলোচনা ব্যার্থ হবার পর সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া ঢাকা ত্যাগ করেন।
২৫ মার্চ দিবাগত রাতে নিরহ নিরস্ত্র বাঙ্গালির উপর পকিস্তান সেনাবাহিনী ঝাপিয়ে পরে, আক্রমন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পিলখানা রাইফেল সদর দপ্তর ও রাজার বাগ পুলিশ হেড কোয়াটার।
বঙ্গবন্ধু ২৫শে মার্চ রাত ১২.২০ মিনিটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করেন এই ঘোষনা বাংলাদেশের সর্বত্র ট্রান্সমিটারে প্রেরিত হয়। পকিস্থান সেনাবাহিনী অতর্কিত ভাবে পিলখানা, ইপিআর ঘাটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমন করেছে এবং শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে।
আমি বিশ্বের জাতিসমুহের কাছে সাহায্যের আবেদন করছি, আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বিরত্তের সংঙ্গে মাতৃভুমি রক্ষা করার জন্য যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ দেশকে স্বাধীন করার জন্য, শেষ রক্ত বিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ ইপিআর বেঙ্গল রেজিঃমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান কোন আপোষ নাই জয় আমাদের হবেই। জয় বাংলা।
১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলার আম্রকাননে অর্থাৎ মুজিব নগরে বাংলাদেশ সরকারের স্বপথ গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্থান বাহিনীর আত্তসমর্পনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়। বাংলাদেশ লাভ করে স্বাধীনতা “জয় বাংলা বাংলার জয় ..। ..................... ১৯৭২ সালের আট জানুয়ারী পাকিস্তান সরকার আন্তরজাতিক চাপে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়। বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেয়ে স্বাধীন দেশের পথে রওনা দিয়ে প্রথমেই লন্ডনে যাত্রা বিরতি করেন। বিমানবন্দরে বৃটিশ প্রধান মন্ত্রী এ্যাডোয়ার্ড হিট তাকে শুভেচ্ছা জানান। লন্ডনে তিনি বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। .....................ভিডিও এরপরে বঙ্গবন্ধু পুনরায় ভারতের রাজধানী দিল্লিতে যাত্রা বিরতি করেন, সেখানে ভারতের প্রধান মন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দ্রিরা গান্ধী ও রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরী তাকে স্বাগত জানান, দিল্লীতে একটি জনসভায় ভাসন দেন তিনি। .......................ভিডিও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ১০ জানুয়ারী ঢাকায় পৌছলে তাকে অবিস্মরনীয় সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। এই দিন বিশ্বের গুরুত্বপুর্ন সকল সংবাদ মাধ্যম বেশ গুরুত্ব সহকারে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সংবাদ পরিবেশন করে। আমেরিকার জনপ্রিয় চ্যানেল, এনডিসি টিভি বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশের জর্জ ওয়াশিংন্টন আক্ষায়িত করে সংবাদ পরিবেশন করে। ..................ভিডিও বঙ্গবন্ধু ছিলেন আমাদের নেলসন মেন্ডেলা, তিনি কারাগারে থাকলেও এদেশের মুক্তিকামী জনগন তার নামেই মুক্তিযুদ্ধ করেছে। আর যুদ্ধ শেষে মুক্তি পেয়ে, স্বাধীন দেশের জনগনের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন একজন মানুষ, একজন বাঙ্গালি এবং একজন মুসলমান একবারই মারা যায়, তার মনে মৃত্যু ভয় কখনোই কাজ করেনি।
গবেষনা ও গ্রন্থনা ঃ মোঃ শওকাতুল ইসলাম।