top of page

হার্ভার্ড সমাবর্তন বক্তা হিসেবে আমি বেমানান: “জুকারবার্গ”


Mark Zuckerberg, Harvard dropout and CEO of Facebook, a company worth nearly $400 billion, shakes hands with graduates at the Harvard University commencement in Cambridge, Massachusetts on May 25, 2017.

গত ২৫ মে, ম্যাসাচুসেটস-এর ক্যামব্রিজে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের সাথে হাত মিলান মার্ক জুকারবার্গ।

ছবি : ফেইসবুক মার্ক জুকারবার্গ।


যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান ছিল গত ২৫ মে । ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় কিংবা বর্ষাতি গায়ে দাঁড়িয়ে হার্ভার্ডের বিদায়ী শিক্ষার্থীরা শুনেছেন অনবদ্য এক বক্তৃতা। বক্তার নাম—মার্ক জাকারবার্গ। হ্যাঁ, সেই মার্ক জাকারবার্গ, যিনি হার্ভার্ড থেকে স্নাতক সম্পন্ন করতে পারেননি। নাম লিখিয়েছেন ‘ড্রপ আউট’-এর খাতায়। আজ তিনিই বিশ্বের সবচেয়ে ধনীদের মধ্যে অন্যতম। তিনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

আজ তোমাদের সঙ্গে থাকতে পেরে ভীষণ সম্মানিত বোধ করছি। কারণটা অকপটেই বলি, তোমরা যা অর্জন করেছ, আমি তা পারিনি। আজ যদি বক্তৃতাটা শেষ করতে পারি, সম্ভবত এই প্রথম হার্ভার্ডে কোনো কিছুর শেষ দেখা হবে (হাসি)।

২০১৭ সালের স্নাতক, অভিনন্দন ! আজ সমাবর্তন বক্তা হিসেবে আমি বেমানান—এ জন্য নয় যে আমি ড্রপ আউট হয়েছিলাম। কারণ, তোমরা আর আমি প্রায় একই প্রজন্মের প্রতিনিধি। এক দশকেরও কম সময়ের ব্যবধানে আমরা এই প্রাঙ্গণে হেঁটেছি। একই লেকচার পড়েছি। আমাদের প্রজন্ম আর আমাদের পৃথিবী থেকে আমি যা শিখেছি, সেটাই আজ বলব। গত কয়েক দিনে পুরোনো দিনের কিছু চমৎকার স্মৃতি মনে পড়ে গেল। তুমি হার্ভার্ডে ভর্তির সুযোগ পেয়েছ—এ খবরটা যখন জানলে, ঠিক সে মুহূর্তটা কার কার মনে আছে? আমার মনে আছে। আমি ‘সিভিলাইজেশন’ নামে একটা ভিডিও গেম খেলছিলাম। সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নিচে নেমেছিলাম বাবাকে খবরটা দেওয়ার জন্য। সত্যি বলছি, সেদিনই মা-বাবা আমাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি গর্বিত হয়েছিলেন। যদিও দর্শকসারিতে বসা আমার মা দুদিকে মাথা নাড়ছেন...(হাসি)! হার্ভার্ডে প্রথম লেকচার—কার কার মনে আছে? আমার ছিল ‘কম্পিউটার সায়েন্স ওয়ান টু ওয়ান’। হ্যারি লুইসের সেই অভাবনীয় ক্লাস! আমি ক্লাসে এসেছিলাম দেরি করে। তাড়াহুড়ায় উল্টো টিশার্ট পরে চলে এসেছিলাম। কেন কেউ আমার সঙ্গে কথা বলছে না, ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। তবে হ্যাঁ, একজন কথা বলেছিল—কে এক্স জিন। সেদিন ক্লাসে আমরা একসঙ্গে ‘প্রবলেম সেট’ সমাধান করেছি। কে এক্স জিন এখন ফেসবুকের বড় একটা অংশের দেখভাল করে। অতএব ২০১৭ সালের স্নাতকেরা বুঝতেই পারছ, কেন মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা উচিত! হার্ভার্ডে আমার সবচেয়ে মধুর স্মৃতি হলো প্রিসিলার সঙ্গে দেখা হওয়ার মুহূর্তটি। ফেসম্যাশ নামের প্র্যাংক ওয়েবসাইট তখন মাত্রই চালু করেছি। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভাগ জানাল, তারা আমার সঙ্গে ‘দেখা করতে’ চায়। সবাই ধরেই নিল, আমাকে নিশ্চিত বের করে দেওয়া হবে। এমনকি আমার ব্যাগ-পত্র গোছানোতে সাহায্য করতে মা-বাবা চলে এলেন। বন্ধুরা আমার জন্য একটা বিদায়ী অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে ফেলল। আর দেখ, কী ভাগ্য—সেই অনুষ্ঠানেই এক বন্ধুর সঙ্গে হাজির হলো প্রিসিলা! পোফহো বেলটাওয়ারের প্রসাধনকক্ষের সামনে আমাদের দুজনের দেখা। সেদিন প্রিসিলাকে আমি যা বলেছিলাম, সেটা নিশ্চয়ই অবিস্মরণীয় প্রেমের বাণীগুলোর মধ্যে স্থান পেতে পারে। আমি বলেছিলাম, ‘আগামী তিন দিনের মধ্যে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হবে। অতএব, তোমার আর আমার খুব শিগগিরই একসঙ্গে বসা দরকার!’ আজ তোমরা যারা স্নাতক ডিগ্রি নিচ্ছ, এই বুদ্ধিটা তোমরাও কাজে লাগাতে পারো। প্রিয়জনকে বল, ‘আজই আমাকে বের করে দেবে; অতএব...(হাসি)। শেষ পর্যন্ত হার্ভার্ড থেকে আমাকে বের করে দেওয়া হয়নি, আমি নিজেই বেরিয়ে গিয়েছিলাম। তত দিনে প্রিসিলা আর আমি একসঙ্গে সময় কাটাতে শুরু করেছি। ফেসবুক নিয়ে যে সিনেমাটি তৈরি হয়েছে, সেটি দেখলে মনে হয় ফেসবুক গড়ে ওঠার পেছনে ফেসম্যাশের একটা বড় অবদান ছিল। সত্যি বলতে কি, অবদানটা ততটা গুরুত্বপূর্ণও নয়। তবে হ্যাঁ, ফেসম্যাশ না থাকলে হয়তো প্রিসিলার সঙ্গে আমার দেখা হতো না। সে আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। সেই বিবেচনায় ক্যাম্পাসে থাকাকালীন ফেসম্যাশ আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। এই ক্যাম্পাসেই আমরা সারা জীবনের জন্য কিছু বন্ধু পেয়েছি। কেউ কেউ পেয়েছি জীবনসঙ্গীও। তাই এ জায়গাটার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। ধন্যবাদ হার্ভার্ড। আজ আমি জীবনের লক্ষ্য নিয়ে কথা বলতে চাই। গৎবাঁধা সমাবর্তন বক্তৃতার মতো আমি বলব না, তোমার জীবনের লক্ষ্যটা খোঁজো। আমরা একুশ শতকের তরুণ। জীবনের লক্ষ্য খোঁজার কাজটি আমাদের সহজাতভাবেই করার কথা। আমি বরং বলব, শুধু তোমার জীবনের লক্ষ্য খোঁজাই যথেষ্ট নয়। আমাদের প্রজন্মের চ্যালেঞ্জ হলো—এমন এক পৃথিবী তৈরি করা, যেখানে সবাই নিজের জীবনের লক্ষ্য নিয়ে ভাবে। জন এফ কেনেডির একটা গল্প আমার খুব প্রিয়। তিনি একবার নাসা স্পেস সেন্টারে গিয়েছিলেন। সেখানে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে ঝাড়ু দিতে দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কী করছ?’ লোকটা জবাব দিলেন, ‘মিস্টার প্রেসিডেন্ট, আমি একজন মানুষকে চাঁদে যেতে সাহায্য করছি।’ তোমার লক্ষ্যটা হয়তো আমার গণ্ডির চেয়েও বড়, তুমি হয়তো তোমার চেয়েও বড় একটা কিছুর অংশ। লক্ষ্যই মানুষকে সত্যিকার সুখের সন্ধান দেয়। তোমরা এমন এক সময়ে স্নাতক সম্পন্ন করছ, যখন লক্ষ্য ব্যাপারটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মা-বাবা যখন স্নাতক করেছেন; তখন কর্মস্থল, গির্জা কিংবা সমাজ তাঁদের লক্ষ্য ঠিক করে দিত। কিন্তু এখন প্রযুক্তি মানুষের অনেক কাজের জায়গা দখল করে নিয়েছে। সমাজের ভূমিকা কমে যাচ্ছে। এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের সঙ্গে তাঁদের সম্প্রদায়ের যোগাযোগ কম। তাঁরা হতাশ এবং এই শূন্যতা পূরণের চেষ্টায় ব্যস্ত। আমি অনেক জায়গায় ঘুরেছি। কিশোর অপরাধী আর মাদকাসক্ত মানুষের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারা আমাকে বলেছে, স্কুলের সময়টুকুর পর একটা কিছু করার থাকলে হয়তো তাঁদের জীবনটা আজ এমন হতো না। আমি কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা জানেন—তাঁদের প্রয়োজন ফুরিয়ে আসছে; তাঁরা তাঁদের অবস্থান খুঁজছেন। শুধু নতুন নতুন কাজের সুযোগই নয়, মানুষের সামনে নতুন নতুন লক্ষ্য দাঁড় করাতে হবে। একটা অগ্রসরমাণ সমাজ পেতে হলে আমাদের প্রজন্মের সামনে এটাই চ্যালেঞ্জ।

কার্কল্যান্ড হাউজের ছোট্ট ঘরটিতে যেদিন ফেসবুকের যাত্রা শুরু হলো, সেই রাতের কথা আমার মনে পড়ে। হার্ভার্ডের বাসিন্দাদের একসঙ্গে সংযুক্ত করতে পেরে আমি ভীষণ রোমাঞ্চিত ছিলাম। বন্ধু কে এক্সকে বলছিলাম, দেখো—একদিন কেউ একজন সারা পৃথিবীর মানুষকে সংযুক্ত করবে। ব্যাপারটা হলো, আমাদের মাথায় কখনো আসেনি যে এই কেউ একজনটা তো আমিও হতে পারি। আমরা ছিলাম কলেজপড়ুয়া বাচ্চা ছেলে। এত বিশাল কিছু সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না। বরং আমাদের চারপাশে বড় বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ছিল। আমার স্রেফ মনে হয়েছিল, একদিন কেউ না কেউ করবে। কিন্তু একটি বিষয় আমি নিশ্চিতভাবে জানতাম, প্রতিটি মানুষ অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত হতে চায়। অতএব, দিনের পর দিন আমরা শুধু কাজ করে গেছি।

জানি তোমাদের অনেকেরই এমন কিছু গল্প আছে। তোমরা জানো, পৃথিবীতে একটা পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। তোমরা জানো, কেউ না কেউ সেই পরিবর্তনটা আনবে। সেই একজনটা কেন তুমি নও? (সংক্ষেপিত) ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মো. সাইফুল্লাহ সূত্র: নিউজ ডট হার্ভার্ড ডট এডু

Comments


  • Twitter Social Icon
  • Facebook Social Icon
  • Google+ Social Icon
  • LinkedIn Social Icon
Follow
"SAREGAMA JUST IN"

  জনপ্রিয় সংবাদ সা রে গা মা

বাংলা গান সা রে গা মা

Print  / Press Ctrl+P
Saregama Bangla

Sa Re Ga Ma News Archive

Write Yours Comments. 

RSS Feed

Reproduction of any content, news or article published on this website is strictly prohibited Privacy. 

bottom of page