আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ় সংকল্পই পলাশ মাহবুবের লেখনীর মূলমন্ত্র।
জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার পলাশ মাহবুব।
অনুসন্ধানী মনের অদম্য ইচ্ছাশক্তি গুলোকে বাস্তবে রুপদান করতে পারলেই তো সফলতা, আর সেজন্য চাই দৃঢ় সংকল্প আত্মবিশ্বাস সাধনা আর নিরলস পরিশ্রম, সফলতা একদিন আসবেই। ছেলেবেলা থেকেই লেখালেখির চেষ্টা, হয়ত মনের অজান্তেই লিখে ফেলতেন আনেক কিছু, একসময় মনে হল এটা সত্যিই একটা কঠিন কাজ। তারপরও অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর মনোবলকে কাজে লাগিয়ে লিখে চললেন আনেক কিছু। লেখালেখিতে যেন এক অদৃশ্য ভালবাসার টানে আটকে গেলেন তিনি আর এভাবেই শুরু, ধীরে ধীরে সৃষ্টি হতে লাগল এক বিশাল ক্ষেত্র লেখালেখির জগৎ তিনি আর কেউ নন এ প্রজন্মের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার পলাশ মাহবুব।
৬ ডিসেম্বর চট্রগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
গত কয়েক বছর ধরেই অমর একুশে বইমেলায় লেখক, নাট্যকার পলাশ মাহবুবের বেশ কিছু নতুন বই প্রকাশিত হয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবছরও একুশে বইমেলায় প্রকাশিত পলাশ মাহাবুবের বইয়ের মধ্যে ছিল মজার কিশোর উপন্যাস 'লজিক লাবু'। এটি প্রকাশ করেছে পাঞ্জেরী। এ ছাড়া পলাশ মাহবুবের জনপ্রিয় কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সিরিজ টো টো কোম্পানি'র সপ্তম উপন্যাস 'টো টো কোম্পানি ও বীরপ্রতীকের মেডেল' বরাবরের মতো প্রকাশিত হয়েছে অন্বেষা থেকে।
অন্যপ্রকাশ থেকে আসছে ছোটদের গল্পের বই 'সূর্যমুখিরা দুইবোন'। পাঞ্জেরী থেকে আসবে আরও দুটি বই। কিশোর গল্পের বই 'তালা' এবং ছড়াগ্রন্থ 'থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে'। তাম্রলিপি প্রকাশ করছে বড়দের গল্পের বই 'রোমিওপ্যাথি'। অনিন্দ্য প্রকাশন থেকে মেলায় এসেছে পলাশ মাহবুবের জনপ্রিয় প্রেমাণুকাব্য সিরিজের দ্বিতীয় বই 'প্রেমাণুকাব্য ২'। পাশাপাশি ১৫ বছর আগে প্রকাশিত 'প্রেমাণুকাব্য ১' বইটিও পুনর্মুদ্রণ করেছে অনিন্দ্য প্রকাশন।
এ ছাড়া কিশোর উপন্যাস 'পিটি রতন সিটি খোকন' নতুনভাবে আসবে পাঞ্জেরী থেকে এবং কিশোর গল্পগ্রন্থ 'বই খুললেই ভূত' পুনর্মুদ্রিত হচ্ছে অনিন্দ্য প্রকাশন থেকে।
উল্লেখ্য যে, ১৭ বছর আগে, ২০০০ সালে প্রথম বই প্রকাশিত হয় পলাশ মাহবুবের। বইয়ের নাম ‘পিপিলিকার পাখা’। বইটি প্রকাশ করেছিল জাগৃতি প্রকাশনী।
বর্তমানে সাহিত্যের বেশির ভাগ শাখায়ই কাজ করেছেন তিনি। লেখালেখিতে পাঠক মহলেও নিজস্ব একটি কথনভঙ্গি তৈরি করতে সমর্থ হয়েছেন তিনি যা বর্তমান খুব কম সংখ্যক লেখকদের বেলাতেই প্রযোজ্য। ছোটবড় সবার জন্য লিখছেন গল্প, উপন্যাস, নাটক। বর্তমানে দেশের জনপ্রিয় নাট্যকারদের মধ্যে তিনিও একজন। অনুষ্ঠান নির্মাতা হিসেবেও পলাশ মাহবুব সুপরিচিত নাম। টেলিভিশনের জন্য নাটক লিখছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। তার আলোচিত নাটকের মধ্যে শিক্ষা সফর, জোছনার অন্ধকারে, জর্দা জামাল, সাধারণ জ্ঞান, হঠাৎ খলিল, হাঁটাবাবা, হাঁটাবাবা রিটার্ন, লিকুইড লাভ, আন্টি ম্যাডাম, তিনি একজন সৌভাগ্যবান, পিটি রতন সিটি খোকন উল্লেখযোগ্য। রম্য লেখায় পলাশ মাহবুবের আছে নিজস্ব কথন ভঙ্গি। সাবলিল ভাষা আর বক্তব্যের তীব্রতা তার লেখার সৌন্দর্য। অনুষ্ঠান নির্মাতা হিসেবেও পলাশ মাহবুব একটি অগ্রগণ্য নাম। টেলিভিশনের জন্য ইতিমধ্যে দেড় হাজারেরও বেশি অনুষ্ঠান নির্মাণ করেছেন তিনি।
লেখালেখির জন্য পলাশ মাহবুব পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের অন্নদাশঙ্কর রায় সাহিত্য পুরস্কার, এসিআই-আনন্দ আলো শিশু সাহিত্য পুরস্কার। নির্মাতা হিসেবে পেয়েছেন নাট্যসভা পদক। পলাশ মাহবুব পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। সেখান থেকে পেশা হিসেবে কিছুকাল সাংবাদিকতা করেছেন সংবাদপত্র এবং টেলিভিশনে। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন।
আজকের এই সফলতার জন্য পলাশ মাহবুব তার মানসিক দৃঢ়তা আর আত্মবিশ্বাসকেই বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। এ প্রসংঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার ধারণা একজনের লেখক হওয়ার পেছনে তাঁর নিজের অবদানটাই সবচেয়ে বেশি থাকে। কারণ কোনও বাবা-মাই প্রথম দিকে চান না সন্তান লেখালেখি করুক। এইম ইন লাইফ রচনায় লেখক হওয়ার বিষয়টি কখনো শেখানো হয় না। কারণ আমাদের দেশে শুধু লেখালেখি করে সম্মানজনক ও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন এখনো সম্ভব নয়। এটি একটি অনিশ্চিত যাত্রা। সুতরাং আমার তো মনে হয় লেখক হওয়ার ঝুঁকি প্রথমে নিজেকেই নিতে হয়। আমিও তাই নিয়েছি। তবে এ পর্যন্ত আসার পেছনে বহু মানুষের সহযোগিতা, উৎসাহ, প্রেরণা আর ভালোবাসা ছিল। যা এখনো আছে। আশাকরি ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লেখালেখির মধ্যেই নিজেকে নিয়েজিত রাখতে চান পলাশ মাহবুব।
Comments