হৃদয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
আজ ২২শে শ্রাবণ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস। এশিয়ার প্রথম নোবেল বিজয়ী কবি, সাহিত্যিক, চিত্রকার, সুরকার, গীতিকার, দার্শনিক বহু গুনে গুনান্বিত কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে আখ্যায়িত করা হয় সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী কবি হিসেবে। বাংলা সাহিত্য ও কাব্যগীতির শ্রেষ্ঠ স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৬তম প্রয়াণ দিবস।
১৩৪৮ সালের (৬ই আগস্ট ১৯৪১) শ্রাবণের বর্ষণসিক্ত পরিবেশে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে পরলোকগমন করেন তিনি। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির শ্যামল আঙিনায় জন্ম নেয়া এই কবি পরে বাংলা সাহিত্যের দিকপাল হয়ে উঠেন। সমৃদ্ধ করে তোলেন সাহিত্যের সবগুলো শাখা। মহাকালের চেনা পথ ধরে প্রতিবছর আসে বাইশে শ্রাবণ। এই বাইশে শ্রাবণ বিশ্বব্যাপী রবি ভক্তদের কাছে একটি শূন্য হবার দিন। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের সব শাখাতেই বিচরণ করেছেন।
‘গীতাঞ্জলি’ লিখে ১৯১৩ সালে জয় করেছিলেন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার। ১৯১৫ সালে তিনি ব্রিটিশ সরকারের ‘নাইট’ উপাধি লাভ করেন। তবে ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ওই উপাধি ত্যাগ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে কবি, নাট্যকার, কথাশিল্গী, চিত্রশিল্গী, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, ছোট গল্পকার ও ভাষাবিদ। এক কথায় সার্বভৌম লেখক তিনি।
বাংলা সাহিত্য-সংস্কতির বিকাশে যার অফুরন্ত অবদান। সেই কবি প্রকৃতিকে কাঁদিয়ে যখন ইহধাম ত্যাগ করেন সে দিন শোকার্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বিশ্বকবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে লিখেছিলেন : ‘দুপুরের রবি পড়িয়াছে ঢলে অস্তপারের কোলে/বাংলার কবি শ্যাম বাংলার হৃদয়ের ছবি তুমি চলে যাবে বলে/ শ্রাবণের মেঘ ছুটে এলো দলে দলে।’
৮০ বছরের জীবন সাধনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জন্ম এবং মৃত্যুকে একাকার করে তুলেছিলেন অমরতার শ্বাশত বার্তায়। তাই নিজ জন্মদিন নিয়ে তিনি লিখেছিলেন- ‘ওই মহামানব আসে/দিকে দিকে জাগে রোমাঞ্চ/মর্তধূলির ঘাসে ঘাসে’।
কলকাতায় জন্ম হলেও পৈতৃক জমিদারি দেখভালের জন্য তিনি বাংলাদেশে এসেছেন বহুবার। কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও নওগাঁর পতিসরে জমিদারবাড়ি আজো তার স্মৃতিচিহ্ন বহন করছে। বাংলাদেশের কৃষির সাথে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের আত্মিক সম্পর্ক। সমাজের অসঙ্গতি নিয়ে লিখেছেন প্রচুর। তার কবিতা, গান ও গল্প ছুঁয়ে গেছে পাঠক হৃদয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষাকে নিজস্ব ভঙিমায় উপস্থাপন করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।
কবিগুরুর মহাপ্রয়াণকে ঘিরে বাঙালির আজ নানা আয়োজন। জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ ঢাকার বাইরে শিলাইদহ, শাহজাদপুর, পতিসর ও খুলনার দক্ষিণডিহিতে পালন করা হচ্ছে। এছাড়া রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন নানা আয়োজনে পালন করছে কবিগুরুর মহাপ্রয়াণ দিবস।
এ উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোও রবীন্দ্রনাথের ওপর দিনভর বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। বিভিন্ন সংগঠন আয়োজন করেছে স্মরণ অনুষ্ঠান, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
Comments