গৌরবের পঞ্চাশ বছরে পদার্পন, গভঃ ল্যাবরেটরী স্কুল,খুলনা।
চিত্রঃ মতবিনিময় সভা ও স্কুলের মাঠে শিক্ষার্থীদের প্রাত্যাহিক সমাবেশ (এ্যাসেমবিলি)
দীর্ঘ অর্ধশত বছর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শিক্ষা সংস্কৃতির মানদন্ডে সাফল্যের চুরান্ত শিখরে পদার্পন করে আসছে দক্ষিণ বঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ সরকারি ল্যাবরেটরী হাই স্কুল, খুলনা। বিদ্যাপিঠটিতে বর্তমানে প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। গৌরবের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সাবেক শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আগামী ২৩ ও ২৪ শে ডিসেম্বর ২০১৭ "সুবর্ণ জয়ন্তী -২০১৭" অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ অনুষ্ঠানকে সাফল্য মন্ডিত করার জন্য গত শনিবার ৫ই আগষ্ট ২০১৭ইং রাজধানীর ৬৩, নিউ ইস্কাটনস্থ বিয়াম অডিটরিয়ামে ঢাকায় বসবাস রত বিদ্যালয়ের তিন শতাধিক প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীর উপস্থিতিতে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও খুলনা থেকে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটি দল সভায় যোগ দান করেন তাদের মধ্যে ছিলেন,
"সুবর্ণ জয়ন্তী-২০১৭" উদযাপন কমিটির আহবায়ক কাজী আবুল কালাম আজাদ (১৯৭১ ব্যাচ), যিনি এই সভার সভাপতিত্ব করেন।
মতবিনিময় সভার প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ল্যাবরেটরী স্কুলের প্রাক্তন কৃতি ছাত্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব মো: মহিবুল হক। (৭৬ ব্যাচ) যিনি বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালেয়র সুরক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন।
এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন , প্রকৌশলী, সৈয়দ মোক্তার আলী ৭১ ব্যাচ ব্যবসায়ী ঢাকা, জনাব বি এম আবুল হাশেম সাবেক বিমান কর্মকর্তা, ৭১ ব্যাচ, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ জনাব সাইফুল হক ৭২ ব্যাচ, সৈয়দ নওশাদুজ্জামান পল্টু ব্যবসায়ী ৭৭ ব্যাচ, খুলনা। খুলনা থেকে আগত প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরও ছিলেন মোঃ এমলাক ঢালী (১৯৭৮ ব্যাচ), শেখ আব্দুর রাজ্জাক (১৯৮১ ব্যাচ), শরীফ মোজাম্মেল হোসেন (১৯৮৪ ব্যাচ), শেখ আকরাম হোসেন (১৯৮৬ ব্যাচ), মোঃ আবেদ রাজ্জাক সৈকত (২০০৪ ব্যাচ) সহ আরোও অনেকে। যাদের দীর্ঘ দিনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজকের এই সভার আয়োজন।
সভায় প্রধান অতিথি জনাব মো: মহিবুল হক বলেন, আমরা শুধুই "সুবর্ণ জয়ন্তী-২০১৭" উদযাপন করেই থেমে থাকব না এটা হবে ছাত্র ছাত্রীদের একটা রি-ইউনিয়ন যার একটা সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম থাকবে প্রতিবছর। সেই সাথে স্কুলের সংস্কারের জন্যও আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষনে কাজ করব। প্রতিটা সদস্যই একে অপরের সমস্যাকে নিজের সমস্যা বলে মনেকরে কাজ করে যেতে হবে। পরবর্তী সভায় সকলের কাছে এসংক্রান্ত আরও সুনির্দিষ্ট মতামত আহবান করেন তিনি।
এছাড়াও গত পঞ্চাশ বছরে হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী এই স্কুল থেকে পাশ করে বর্তমানে তারা দেশমাতৃকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে অবস্থান করছেন। তাদের মদ্ধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েক জন আছেন যারা হলেন এই স্কুলেরই প্রাক্তন শিক্ষার্থী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালেয়র সুরক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জনাব মোঃ মহিবুল হক (৭৬ ব্যাচ), প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সেলিনা হক (৭৭ ব্যাচ), রাষ্ট্রপতির উপসামরিক সচিব কর্ণেল কাজী ইফতেখার আলম (১৯৮৫ ব্যাচ), কর্ণেল ফেরদৌস, মেজর শরিফুল ইসলাম তপন (৭৭ব্যাচ), মেজর মোঃ মোশ্তাক হোসেন (৮৮ ব্যাচ), মেজর সাকিব (২০০৪ ব্যাচ) সহ অসংখ্য প্রাক্তন শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন উচ্চ আসনে কর্মরত।
বড়ই পরিতাপের বিষয় বিদ্যালয় ভবনটি সরজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায় , খুলনার ল্যাবরেটরি স্কুলে জীবনঝুঁকি নিয়ে পাঠদান!
জরাজীর্ণ ভবনে বছরের পর বছর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান চলছে। ১৯৬৭ সালে নির্মিত একাডেমিক ভবন, হোস্টেল জোড়াতালি দিয়ে কোনোরকম চালালেও প্রধান শিক্ষকের বাসভবনটির ছাদ ধসে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এক হাজর ১শ ৮৩ জন শিক্ষার্থী মাথার উপর ভাঙা ছাদ, প্লাস্টার খসা দেয়াল ও খোলা জানালার মধ্যে ক্লাস করছে। অথচ ঐতিহ্যবাহী এ স্কুলটির রয়েছে গর্ব করার মতো ফলাফল। অভিভাবক ও এলাকাবাসী অর্ধশতাব্দীর প্রাচীন এ বিদ্যালয়টির জরাজীর্ণ ভবন ভেঙে নতুন বহুতল ভবন তৈরি ও বিদ্যালয়টির সার্বিক উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য গত ২৬.০৭.২০১৭ তারিখে স্কুল চলাকালীন সময়ে ৮ম গোলাপ শাখায় ছাদের অংশ বিশেষ ভেঙ্গে পরে। বৈরী আবহাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকায় মহান আল্লাহতায়ালার অশেষ কৃপায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। ঘটনার দিন শ্রেণীতে ৮-১০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। ঐ কক্ষে অন্যান্যদিন ৭০-৮০ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করে। অভিভাবকরাও চরম উৎকন্ঠায় রয়েছেন। তারা তাদের সন্তানদের জীবন নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন।
এ সংক্রান্ত অভিযোগ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র ছাত্রী শিক্ষক সহ সংশ্লিষ্ট সকলেরই রয়েছে।
বর্তমানে স্কুলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি ঃ
বিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা এতটাই করুন হয়েছে যে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যেতে দিন দিন অনাগ্রহী হয়ে উঠছে। শ্রেণীতে শিক্ষা কার্যক্রম একরকম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। শ্রেণীতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পাঠদান-গ্রহণে একদম মনোযোগী হতে পারছেন না। যখন তখন দেওয়াল থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা, ছাদ থেকে খসে পড়ছে ঢালাইয়ের বড় বড় টুকরো। টানা বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও ভায়বহ হয়ে উঠেছে। যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় দূর্ঘটনা।
স্কুলের প্রতিটি বভনই ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে মূল ভবনের মিলনায়তন ও তার পাশের অংশ, কিছু ক্লাস রুম, একাডেমিক ভবন-১, প্রধান শিক্ষকের ভবন, শিক্ষার্থী হোস্টেল ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে।
যেটুকু ব্যাবহার করে কোন রকমে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান আছে তাতে ১২০০ শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ও নিজ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর কত দিন এভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালাবেন আর কবেই বা মিলবে নতুন ভবন সে প্রশ্নই সর্বত্র।
বাঁশ বা কাঠ দিয়ে নির্মিত ভবন বা দেওয়াল মিডিয়ার নজরে পড়ে, কিন্তু আমাদের ভঙুর এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও শ্রেণীকক্ষ গুলো তাদের নজরে পড়ে না......
শুধু ল্যাবরেটরী স্কুলই নয়, বাংলাদেশে এমন শত শত স্কুল রয়েছে যেখানে পড়াশুনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের রয়েছে জীবনের ঝুকি সহ নানা রকম সমস্যা, এ ব্যাপারে যথাযত কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করার জন্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা।
Hozzászólások